করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে উদ্যোগ নিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) নেতারা।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এবং ১০ সদস্যের আসিয়ান ব্রাসেলসে শীর্ষ সম্মেলনে বসছেন।
সম্মেলনের আগে ইইউয়ের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আমি এটাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আসিয়ানের জন্য কৌশলগত অংশীদারি এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুসরণের অঙ্গীকার করার সুযোগ হিসেবে দেখছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগে আসিয়ানও অংশীদার হয়েছে। মিয়ানমার, কোরীয় উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের দিকে ইউরোপীয়দেরও মনোযোগ দিতে হবে।
তবে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি চীনকে কেন্দ্র করে। এ কারণে বেইজিংয়ের সাথে শীতল সম্পর্কের মাঝে আসিয়ান দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি ইইউ নেতাদের জন্য অগ্রাধিকার।
আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) চেয়ারম্যান চার্লস সান্তিয়াগো ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে অঞ্চলে একটা বিকল্প ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। রাশিয়ার সাথে আসিয়ান দেশগুলোর শক্ত সম্পর্ক গড়া থেকে সরিয়ে আনার দিকে ইইউ মনোযোগ দিয়েছে।
তবে, আসিয়ান-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টা এখনো আলোচনায় গড়ায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আসিয়ানের সাথে ইউরোপ তার বাণিজ্য সম্পর্ক রাখতে চায় কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। ইইউ লিথিয়ামের মতো কাঁচামালের উৎস খুঁজছে, যা আসিয়ান দিতে পারে। এই মুহূর্তে, যেকোন ধরনের বাণিজ্য আলোচনার ফোকাস হচ্ছে কিভাবে চীন এবং রাশিয়ার প্রবল প্রভাব রুখে দেওয়া যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হচ্ছে আসিয়ান, যাদের সাথে ২০২১ সালে পণ্যর ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় ২১৬ বিলিয়ন ইউরো।
আসিয়ান দেশগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান রপ্তানি হলো রাসায়নিক পণ্য, যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন সরঞ্জামাদি। অন্যদিকে, আমদানি পণের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি এবং পরিবহন সরঞ্জাম, কৃষি পণ্য, টেক্সটাইল এবং পোশাক।
আসিয়ান-ইইউ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ২০০৭ সালে আলোচনা শুরু করে, কিন্তু চুক্তি করার পরিবর্তে তারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পন্থা বেছে নেয়।
ইউরোপীয় কমিশনের মতে, এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।
আসিয়ান দেশগুলোর সাথে ইইউ পৃথকভাবে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করে এক দশকের বেশি সময় আগে। ২০১০ সালে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার সাথে, ২০১২ সালে ভিয়েতনাম, ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৫ সালে ফিলিপাইন এবং ২০১৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করে।
চলতি সম্মেলনে ইইউ থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার নতুন সরকারের সাথে বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করার আশা করছে। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা নিয়েও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন আসিয়ান দেশগুলোর সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন, ডিজিটাল খাত এবং অবকাঠামো বিকাশের জন্য একটি ইইউ বিনিয়োগ প্যাকেজ পেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।