ঢাকা ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে গণপরিবহনে দিনে ১৮২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য হচ্ছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, প্রতিবাদ করলে হেনস্তা, অপমান ও হত্যার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। যাত্রী অধিকার দিবস-২০২২’ উপলক্ষে ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, গত ১ বছরে দুইবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে ওঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহনে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে।

তার দাবি, পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। এতে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহন। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীর ৫০০০ বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসের শতভাগ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রীপ্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এতে ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রী দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ভাড়া-নৈরাজ্য-চলছে-সিএনজি-চালিত-বাসে তিনি বলেন, রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিকশায় প্রতি ট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

‘১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোর্ত্তীণ, লক্কড়-ঝক্কড়, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি আরও প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতি ট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।’ মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, ৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে দাবি করে তিনি বলেন, এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।

তাদের হিসাবে দেখা যায়, রাজধানীতে বাস-মিনিবাসের চাইতে প্রায় সাড়ে চারগুণ যাত্রী রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সিক্যাবে যাতায়াত করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের চেয়ারম্যান রফিকুল হোসেন কাজল,ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী প্রফেসর মোজাহেরুল হক ও যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল প্রমুখ।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীতে গণপরিবহনে দিনে ১৮২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

আপডেট সময় ০৪:৩১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য হচ্ছে বলে দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, প্রতিবাদ করলে হেনস্তা, অপমান ও হত্যার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। যাত্রী অধিকার দিবস-২০২২’ উপলক্ষে ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, গত ১ বছরে দুইবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে ওঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহনে সরকারের নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে।

তার দাবি, পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। এতে প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়ার নামে আদায় করছে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহন। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীর ৫০০০ বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসের শতভাগ বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রীপ্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এতে ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রী দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ভাড়া-নৈরাজ্য-চলছে-সিএনজি-চালিত-বাসে তিনি বলেন, রাজধানীতে ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসেবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে। এসব অটোরিকশায় প্রতি ট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

‘১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোর্ত্তীণ, লক্কড়-ঝক্কড়, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি আরও প্রায় ১৮ হাজার হিউম্যান হলারসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতি ট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।’ মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, ৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে দাবি করে তিনি বলেন, এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে।

তাদের হিসাবে দেখা যায়, রাজধানীতে বাস-মিনিবাসের চাইতে প্রায় সাড়ে চারগুণ যাত্রী রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সিক্যাবে যাতায়াত করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের চেয়ারম্যান রফিকুল হোসেন কাজল,ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অপরাধ বিজ্ঞানী প্রফেসর মোজাহেরুল হক ও যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল প্রমুখ।