ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে হাইকোর্টে মায়ের রিট

৯ বছর আগে জন্মের দিন বগুড়ার আইভি ক্লিনিক থেকে চুরি যাওয়া সন্তান ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেছেন এক মা। রিটে ৯ বছরের শিশুকে তার জন্মদাত্রী মা বগুড়ার গাবতলী থানার তাজমিনা আক্তারের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সোমবার চুরি হওয়া সন্তানের মায়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ রিট দায়ের করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী রোববার (১১ ডিসেম্বর) রিট আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, বগুড়ার জেলা প্রশাসক, বগুড়া সদর থানার ওসি, বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক, আইভি ক্লিনিকের মালিক, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার খলিলুর রহমান, তার স্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

একটি দৈনিকে ‘চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে ৯ বছরের চেষ্টা এক অসহায় মায়ের’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজের চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নানা ধরনের চেষ্টা ও আদালতে শরণাপন্ন হয়েও সন্তান ফিরে না পেয়ে এক দুঃখিনী মা বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার শালকু গাড়ী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী তাজমিনা গত ৪ অক্টোবর এ সংবাদ সম্মেলন করেন।’

‘সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই নাজমিনা আক্তার সন্তান প্রসবের জন্য বগুড়া শহরের নূরানী মোড়ের আইভি ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে সিজারের মাধ্যমে তার যমজ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, যা তিনি মেডিকেল চেকআপের মাধ্যমে আগেই নিশ্চিত হন। এমনকি অপারেশন থিয়েটারে তিনি অজ্ঞান অবস্থায় থাকলেও দুই সন্তানেরই কান্নার আওয়াজ শুনতে পান বলে জানান। পরে তিনি জ্ঞান ফিরে শুধুমাত্র তার মেয়ে সন্তানকে দেখতে পান। তার আহাজারি ও কান্না শুনে তার মাসহ আত্মীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ নেন। তারা জানতে পারেন, গাবতলী উপজেলার মৃত দুদু সরদারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টাকার বিনিময়ে তার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। সন্তান চুরির তিন মাস পর তারা তাদের বাড়িতে আসেন এবং দাবি করেন তারা সন্তানটি ঢাকা থেকে কিনে এনেছে, আবার বলেন দত্তক নিয়েছেন। তাদের কথায় সন্দেহ হলে ২০১৮ সালের ২০ জুলাই নেপালতলী ইউপির অফিস সহকারী চঞ্চল কুমরাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। পরে তিনি নেপাতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হলে তিনি সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।’

‘এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান আদলতে প্রতিবেদন দিলে আদালত ওই সাতজনের নামে সমন জারি করেন। আসামিরা জামিন পেয়ে ডিএনএ পরীক্ষার কথা বলেন। ডিএনএ পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তিনি তাতে নারাজি দেন। পুনরায় ঢাকায় পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।’

‘নাজমিনা আক্তার দাবি করেন, তিন বছর আগে তার ডিএনএ রিপোর্ট পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও হারানো সন্তানকে তার কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি। তিনি তার হারানো সন্তান ফিরে দেওয়ার আকুতি জানান।’

অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন বলেন, যমজ সন্তানের মধ্যে মেয়ে তাসনিয়া আক্তার তার প্রকৃত বাবা-মা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার শালকু গাড়ী গ্রামের হেলাল উদ্দিন ও তাজমিনা আক্তারের কাছে থাকলেও অপর সন্তান আহসান হাবিব এখন বগুড়ার  একই উপজেলার খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

Tag :

One thought on “চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে হাইকোর্টে মায়ের রিট

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে হাইকোর্টে মায়ের রিট

আপডেট সময় ০৯:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

৯ বছর আগে জন্মের দিন বগুড়ার আইভি ক্লিনিক থেকে চুরি যাওয়া সন্তান ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেছেন এক মা। রিটে ৯ বছরের শিশুকে তার জন্মদাত্রী মা বগুড়ার গাবতলী থানার তাজমিনা আক্তারের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সোমবার চুরি হওয়া সন্তানের মায়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ রিট দায়ের করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী রোববার (১১ ডিসেম্বর) রিট আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, বগুড়ার জেলা প্রশাসক, বগুড়া সদর থানার ওসি, বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক, আইভি ক্লিনিকের মালিক, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার খলিলুর রহমান, তার স্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

একটি দৈনিকে ‘চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে ৯ বছরের চেষ্টা এক অসহায় মায়ের’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নিজের চুরি হওয়া সন্তান ফিরে পেতে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নানা ধরনের চেষ্টা ও আদালতে শরণাপন্ন হয়েও সন্তান ফিরে না পেয়ে এক দুঃখিনী মা বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার শালকু গাড়ী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী তাজমিনা গত ৪ অক্টোবর এ সংবাদ সম্মেলন করেন।’

‘সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই নাজমিনা আক্তার সন্তান প্রসবের জন্য বগুড়া শহরের নূরানী মোড়ের আইভি ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে সিজারের মাধ্যমে তার যমজ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, যা তিনি মেডিকেল চেকআপের মাধ্যমে আগেই নিশ্চিত হন। এমনকি অপারেশন থিয়েটারে তিনি অজ্ঞান অবস্থায় থাকলেও দুই সন্তানেরই কান্নার আওয়াজ শুনতে পান বলে জানান। পরে তিনি জ্ঞান ফিরে শুধুমাত্র তার মেয়ে সন্তানকে দেখতে পান। তার আহাজারি ও কান্না শুনে তার মাসহ আত্মীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ নেন। তারা জানতে পারেন, গাবতলী উপজেলার মৃত দুদু সরদারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টাকার বিনিময়ে তার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। সন্তান চুরির তিন মাস পর তারা তাদের বাড়িতে আসেন এবং দাবি করেন তারা সন্তানটি ঢাকা থেকে কিনে এনেছে, আবার বলেন দত্তক নিয়েছেন। তাদের কথায় সন্দেহ হলে ২০১৮ সালের ২০ জুলাই নেপালতলী ইউপির অফিস সহকারী চঞ্চল কুমরাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। পরে তিনি নেপাতলী ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হলে তিনি সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন।’

‘এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান আদলতে প্রতিবেদন দিলে আদালত ওই সাতজনের নামে সমন জারি করেন। আসামিরা জামিন পেয়ে ডিএনএ পরীক্ষার কথা বলেন। ডিএনএ পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তিনি তাতে নারাজি দেন। পুনরায় ঢাকায় পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।’

‘নাজমিনা আক্তার দাবি করেন, তিন বছর আগে তার ডিএনএ রিপোর্ট পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও হারানো সন্তানকে তার কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি। তিনি তার হারানো সন্তান ফিরে দেওয়ার আকুতি জানান।’

অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন বলেন, যমজ সন্তানের মধ্যে মেয়ে তাসনিয়া আক্তার তার প্রকৃত বাবা-মা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার শালকু গাড়ী গ্রামের হেলাল উদ্দিন ও তাজমিনা আক্তারের কাছে থাকলেও অপর সন্তান আহসান হাবিব এখন বগুড়ার  একই উপজেলার খলিলুর রহমান ও তার স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।