দান-সদকা বিপদ আপদ দূর করে। দানের মাধ্যমে পরকালে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কারের ঘোষণা। দানকারী ব্যক্তিকে দান গ্রহীতার থেকে উত্তম বলা হয়েছে হাদিসে। হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। … -(বুখারি)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দান করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি দান করতে উৎসাহিত করেছেন। ইসলামের প্রথম যুগেদান-সদকা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অনন্য নজির উপস্থাপন করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। সে যুগে পুরুষ সাহাবিদের পাশাপাশি ঈমান-আমল ও ইসলামী বিধান পালনে কোনও অংশে পিছিয়ে ছিলেন না নারী সাহাবিরা। এখানে নারী সাহাবিদের দান-সদকার কিছূ ঘটনা তুলে ধরা হল-
হজরত আয়েশা রা.-এর দানশীলতা
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.-এর কাছে একবার প্রায় লক্ষাধিক দেরহাম ভর্তি দু’টি বস্তা হাদিয়ে এলো। তিনি থালা ভর্তি করে সব দেরহাম দান করতে শুরু করলেন। এভাবে দান করতে করতে নিজের জন্য কিছু না রেখেই সন্ধ্যার মধ্যেই সব দেরহাম দান করে দিলেন।
ঘটনার দিন রোজা রেখেছিলেন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা.। সন্ধ্যায় তিনি বাঁদীকে ইফতারের জন্য কিছু আনতে বললেন। সে একটি রুটি ও যায়তুনের তেল নিয়ে এসে বললো, বস্তা ভর্তি দেরহাম থেকে অন্তত এক দেরহাম রেখে দিলে কিছু গোশত আনিয়ে আমরা ভালভাবে ইফতার করতে পারতাম। একথা শুনে উম্মুল মুমিমীন বললেন, এখন না বলে, আগে স্মরণ করিয়ে দিতে, তাহলে কিছু আনিয়ে রাখা যেত।
শুধু এ ঘটনা নয় সব সময় হাদিয়া এলে এভাবেই দু’হাত ভরে তা দান করে দিতেন আয়েশা রা.। সব দান করে অসচ্ছল ও কষ্টে জীবন যাপন করতে পছন্দ করতেন তিনি।
আয়েশা রা.-এর ভাগিনা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এভাবে নিজ খালার দান-সদকা ও সব সদকা করে তার কষ্টে জীবনযাপন দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। একবার তিনি ভাবলেন, খালাম্মাকে কিছুটা নিষেধ করা দরকার।
হজরত আয়েশা রা.- বিষয়টি জানতে পেরে ভাগিনা আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন। তার সঙ্গে কথ না বলার শপথ করে মানত করলেন। খালার অসন্তুষ্টি ও শপথের কথা জেনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর অত্যন্ত বেদনাহত হলেন। রাগ ভাঙ্গাতে অনেকের মাধ্যমে সুপারিশ করালেন ।
কিন্তু হযরত আয়েশা রা. নিজের শপথের অপারগতার কথা জানালেন। এতে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আরও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পরবর্তীতে রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃবংশের দু’জন ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।
যখন তারা পর্দার আড়াল থেকে হজরত আয়েশার সঙ্গে কথা বলছিলেন, এ সময় আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর খালাকে জড়িয়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করে কাঁদতে লাগলেন। সেই দুই সুপারিশকারী তখন মুসলমানদের সঙ্গে কথোপকথন বন্ধ করে দেয়া সম্পর্কিত হাদিস স্মরণ করালেন।
এ হাদিস শুনে হজরত আয়েশা রা. কেঁদে ফেললেন এবং ভাগিনা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে ক্ষমা করে দিলেন এবং তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। তবে তার সেই কসমের কাফ্ফারা স্বরূপ বারবার গোলাম আজাদ করতেন, এমনকি ৪০ জন গোলাম পর্যন্ত আজাদ করলেন।
যখনই তার ওই শপথ ভঙ্গের কথা মনে হতো তখনই এতোটা কাঁদতেন যে চোখের পানিতে তার ওড়না পর্যন্ত ভিজে যেত।
হজরত আসমা রা.-এর দানশীলতা
হজরত আসমা রা.-ও অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। প্রথমে তিনি আনুমানিক হিসাব করে সব কিছু খরচ করতেন। কিন্তু যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বেঁধে বেঁধে রেখে দিবে না, হিসাব করবে না এবং সামর্থানুযায়ী খরচ করবে। তারপর থেকে তিনিও দু’হাত ভরে দান করতে লাগলেন।
তিনি নিজের মেয়ে ও অন্যান্য নারীদের উপদেশ দিয়ে বলেন, তোমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও বেঁচে যাওয়া অর্থকে আল্লাহর রাস্তায় দানের জন্য রেখো না। বা বেঁচে যাওয়া অর্থ থেকে দান করবে এই অপেক্ষায় থেকো না। তিনি বলেন, এই অপেক্ষায় থাকলে প্রয়োজন কখনো শেষ হবে না। তা সব সময় বাড়তেই থাকে। আর প্রয়োজনীয় সম্পদ থেকে সদকা করলে তার কারণে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।
হজরত উম্মে সালমার দান-সদকা
হজরত উম্মে হুসাইন রা. বলেন, আমি হজরত উম্মে সালমা রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। এ সময় দরিদ্রদের একটি দল এসে তার কাছে কিছু সাহায্য চাইলো। উম্মে হুসাইন বললেন, তোমরা চলে যাও।
একথা শুনে উম্মে সালমা রা. তাৎক্ষণিক বললেন, হে আল্লাহর বাঁদী! এ কী রকম কথা বললে? তাদের প্রত্যেককে কিছু কিছু সদকা দিয়ে দাও। কমপক্ষে একটা খেজুর হলেও তাদের হাতে দাও।