ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষ রোগীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের ইরেক্টাল ডিসফাংশন (পুরুষত্বহীনতা) হয়ে যায়। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী রোগীদের মাঝে ২৮ শতাংশ অ্যাসেক্সচুয়ালিটিতে (যৌন বিমুখ সমস্যা) ভুগেন। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫০ বছরের বেশি পুরুষ রোগীদের ৫০ শতাংশের প্রি-ইজাকুলেশন (দ্রুত বীর্যপাতজনিত সমস্যা) হয়ে থাকে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যৌন সমস্যা ও রোগের চিকিৎসা নিয়ে ‘সাউথ এশিয়ান সোসাইটি ফর সেক্সচুয়াল মেডিসিন স্কুল বাংলাদেশ-২০২২’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় বলা হয়, সারাদেশে যৌন অক্ষমতায় (সেক্সচুয়াল ডিজঅর্ডার) অসংখ্য মানুষ ভুগে থাকেন। যৌন অক্ষমতার কারণে দাম্পত্য শান্তি দূর হয়ে যায়। সুস্থ জীবনযাপন ব্যাহত হয়। সামাজিক সৌহার্দ্যতা কমে আসে। একই সঙ্গে প্রজনন ক্ষমতা কমে আসায় জনসংখ্যার ভারসাম্যের পাশাপাশি বংশ রক্ষা ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
আরও বলা হয়, দেশে যৌন রোগ নিয়ে কবিরাজ, ফকির ও হারবাল ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসা রোগীরা বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এজন্য তাদের সঠিক পরিসংখ্যান করা সময়ের দাবি। বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে রোগীরা সবসময় সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। সময়ের প্রয়োজনে সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থার প্রয়োজন। এজন্য বিএসএমএমইউয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে ফেলোশিপ কোর্স চালুর দাবি রাখে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মাধ্যমে সেক্সচুয়াল ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বিছিন্নভাবে নয় বরং সমন্বিতভাবে এর চিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সেক্সচুয়াল মেডিসিনের ওপর ফেলোশিপ চালুর প্রস্তাব পাঠাব। তারা অনুমোদন দিলে বিএসএমএমইউয়ে যৌন রোগ নিয়ে সমন্বিত ফেলোশিপ চালু করা হবে।
এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সারাদেশ থেকে ৫০ জন বিভিন্ন বিষয়ের চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে কর্মশালায় চারটি ফেজে সারা দেশ থেকে ২০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেছেন।
কর্মশালা থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগের কারণে মানুষ যৌনরোগে আক্রান্ত হলেও এর চিকিৎসা বিচ্ছিন্নভাবে স্ব স্ব ডিসিপ্লিনের মাধ্যমে করা হয়। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ান সোসাইটি ফর সেক্সচুয়াল মেডিসিনের ছাতার নিচে বসে বাংলাদেশ ডার্মাটোলজিক্যাল সোসাইটি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজিক্যাল সার্জনস, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্ট এবং ওজিএসবি রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাউথ এশিয়ান সোসাইটি ফর সেক্সচুয়াল মেডিসিনের নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ শামসুল আহসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
কর্মশালায় সাউথ এশিয়ান সোসাইটি ফর সেক্সচুয়াল মেডিসিনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক একেএম আনোয়ারুল ইসলাম, ভারতের অধ্যাপক ভেনকাটারামানা গোধা, ডা. ভাসান এসএস, ডা. টিএসএস রাও, ইতালির ডা. গিউভাননী করোনা, ডেনমার্কের অধ্যাপক আন্নামারিয়া গিরালডি, তুরস্কের অধ্যাপক ইজি ক্যাস সিরিফোগলু, পোল্যান্ডের অধ্যাপক মিখাইল লিই স্টারোভিজসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন।