খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে সাইফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তারিক মাহমুদ তারা নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে ১৪টি পদেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সবাই জয় পেয়েছেন।
রোববার (২৭ নভেম্বর) রাতে ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৮৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ১ হাজার ১৮৪ জন।
এদিকে শনিবার (২৬ নভেম্বর) নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সদস্যরা নির্বাচন বর্জন করেন। এ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ১ হাজার ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফুল ইসলাম জোয়াদ্দার খোকন ভোট বর্জন করেও পেয়েছেন ৭২ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ৯৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তারিক মাহমুদ তারা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একেএম শহিদুল আলম শহিদ পেয়েছেন ৯২ ভোট।
বিজয়ী অন্যরা হলেন সহ-সভাপতি এ কে এম মিজানুর রহমান ও শিরিন আক্তার পপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তমাল কান্তি ঘোষ, লাইব্রেরি সম্পাদক কাজী সাইফুল ইমরান, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান গাজী মিল্টন এবং সদস্য পদে ওমর ফারুক রনি, সরদার আশরাফুর হমান দিপু, এসএম আব্দুস সাত্তার, প্রজেশ রায়, মো. মনিনুর ইসলাম মনির, সাবিরা সুলতানা হ্যাপি, খাদিজা আক্তার টুলু।
নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন মোল্লা লিয়াকত আলী এবং সদস্য হিসেবে মো. আহাদুজ্জামান ও নিমাই চন্দ্র রায়।
এদিকে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রে না গেলেও নির্বাচন কমিশন দ্বারা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ ভোট প্রয়োগের অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন খুলনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতারা।
তারা বলেছেন, এক তরফা ভোটের ফল কারচুপি করে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৮৪ ভোট প্রয়োগ দেখিয়ে তথাকথিত নির্বাচন কমিশন বেহায়াপনার রেকর্ড গড়েছেন।
রোববার রাতে খুলনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ এবং নির্বাচন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, ভোট কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারবেন না বলে দাবি জানালেও কমিশন সে দাবির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। বাধ্য হয়ে ৩ সদস্যের কমিশন থেকে এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন। একইভাবে আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনীত সভাপতি প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জোয়াদ্দার খোকন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একেএম শহিদুল আলমসহ পরিষদের সব প্রার্থী লিখিতভাবে নির্বাচন বর্জন করেন। কিন্তু একতরফা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট প্রয়োগ দেখানো শুধু লজ্জাজনকই না, খুলনা আইনজীবী সমিতির বিগত নির্বাচনী ঐতিহ্যে কলঙ্কের কালিমা লেপনের সামিল। আইন পেশার মতো একটি মহৎ পেশার প্রতিনিধি নির্বাচনে এ ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির ১৪০ বছরের ইতিহাসে কোন প্যানেলের সব সদস্য বর্জনের ঘটনা পূর্বে কখনো ঘটেনি। নেতারা অবিলম্বে হাস্যকর নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন সর্বদলীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সিনিয়র কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু, কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ হোসেন রনি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট নরুল হাসান রুবা, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, অ্যাডভোকেট এস আর ফরুক, অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, অ্যাডভোকেট মো. ইউনুস, অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল আজিজ, আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে অ্যাডভোকেট মাসুম রশিদ, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান নান্নু, অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার, অ্যাডভোকেট কনিজ ফাতেমা আমিন, অ্যাডভোকেট তছলিমা খাতুন ছন্দা, জাতীয়তাবাদী হিন্দু আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সত্যগোপাল ঘোষ, অ্যাডভোকেট জয়দেব সরকার, অ্যাডভোকেট রমঞ্জুর আহমেদ, অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুস সবুর, অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান জনি প্রমুখ।