ঢাকা শহর, বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ও জনবহুল মহানগরী, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। এখানে বসবাসকারী জনগণ থেকে শুরু করে দৈনিক কর্মজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী এবং পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসমতে গণশৌচাগারের অভাব। এই সমস্যাটি জনস্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব ফেলছে, যা এখনই সমাধানের জন্য মনোযোগ দাবি করে।
যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ
পথে চলতেই যেখানে সেখানে দেখা যায় কেউ দাঁড়িয়ে বা বসে প্রস্রাব করছে ফুটপাতের ধারে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দেওয়াল খালি স্থান প্রসাবখানা বনিয়ে ফেলছে। ভবঘুরে কিংবা রাস্তায় বসবাকারীগণ যত্রতত্র মলত্যাগ করে পরিবেশ নষ্ট করছে।
যেন দেখার কেউ নেই?
স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এ জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেবাটি প্রদানে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও করণী উল্লেখ করা হয়েছে। পৌরসেবা হিসেবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গণশৌচাগারের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মিলে শহরজুড়ে প্রায় ১২০টি গণশৌচাগার পরিচালনা করে। তবে, শহরের জনসংখ্যার তুলনায় এটি অপ্রতুল। অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় গণশৌচাগার নেই, এবং যেখানে রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই অপরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত নয়, এবং ব্যবহারের অযোগ্য। সম্প্রতি সময়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সিটিকর্পোরেশনের পরিবেশ সার্কেল থেকে বেস কিছু পার্কে গণশৌচাগার নির্মাণ করা হলেও সেগুলি জনসাধারণের জন্য এখনো উন্মুক্ত করা যায়নি। গণশৌচাগারের অভাব ঢাকা শহরের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, এবং মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সিটি কর্পোরেশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে এই অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা তেমন কোন গুরুত্বই পাচ্ছে না। ইজারা পদ্ধতিতে গণশৌচাগার সমূহ উচ্চ দরে ইজারা প্রদান করা এবং অধিকাংশ গণশৌচাগার রাজনৈতিক বা পেশিশক্তির মাধ্যমে ইজারা পাওয়ায় ইজারাদরগণ জনসেবার চাইতে অর্থ উপার্জনে বেশি গুরুত্ব দেয়। কোন কোন গণশৌচার দখল করে দোকান বা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গণশৌচাগার উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ
আশার কথা হচ্ছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। যেমন ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, ডিএসকে, সাজেদা ফাউন্ডেশন এবং ভূমিজ লিমিটেড। বেসরকারি এই উদ্যোগ সমূহ সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক টয়লেট নীতিমালা অনুসারে পাবলিক টয়লেট পরিচালনা করে থাকে।
সঠিক পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, এবং কার্যকরী ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি কেবল নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করবে না, বরং একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলার পথ সুগম করবে।