জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসানের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোল। এই দুজনকে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশে হামলার দিন নেতৃত্ব দিতে গেছে।
গ্রেফতারের বিষয়ে সোমবার বেলা ১১টায় যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার এসআই রাশিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থান নেন গণঅধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন পুলিশ। পরে সেখানে যায় সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তায় দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ থানায়।
এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসানের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে গণঅধিকার পরিষদ। এছাড়া হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন দলটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।
প্রসঙ্গত রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গত শনিবার জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান আহত হন। হামলাকারীদের মারধরে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও এস এম রাফসানযানি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম সাকিব, সলিমউল্লাহ ও হিযবুল্লাহ আহত হয়েছেন।
ফারুক হাসান জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আয়োজনে শহিদ মিনারে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী সরকার না হওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অভিযুক্ত করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সমালোচনা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ফারুক হাসানের বক্তব্যের একপর্যায়ে তার দিকে তেড়ে আসেন মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ। মঞ্চের ডান পাশ থেকেও সাইফুল ইসলামের নামের ব্যক্তি ফারুক হাসানকে বক্তব্য বন্ধ করতে হুমকি ধমকি দেন এবং সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তখন তাদেরকে সরিয়ে দেয় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা।
হামলার ঘটনার বর্ণনা করে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ফারুক হাসান বক্তব্য শেষ করে মঞ্চে এসে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গিয়ে বসেন। আধা ঘণ্টা পর ফারুক হাসান চারজন সঙ্গীসহ সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। তখন আবীর আহমেদ শরীফের নেতৃত্বে হামলা করা হয়।এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন হিল্লোলসহ আরও অনেকে। হামলার শুরুতে ফারুকের সঙ্গে থাকা চারজন সরে যান। এসময় হামলা থেকে ফারুক হাসানকে রক্ষা করতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ১৫ জনের মতো নেতাকর্মী এগিয়ে যান
তিনি আরও বলেন, হামলায় অংশ নেওয়া তরুণরা ২৫ থেকে ৩০ জন ছিলেন, তাদেরকে দেখে আহত মনে হয়নি। তারা ফারুক হাসানকে রক্ষা করতে যাওয়া নেতাকর্মীদের ওপরও চড়াও হয়। এ সময় সমাবেশস্থলের ৩০টিরও বেশি চেয়ারও ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এরপর ফারুককে ধাওয়া দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভিমুখী সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে মারধর করা হয়।
হামলার পর একটি ভিডিও বার্তায় ফারুক হাসান বলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশে তিনি তার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে ছাত্রদলের ‘সন্ত্রাসীরা’ উপস্থিত ছিল। সমাবেশে তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে। তার মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভিডিও বার্তায় কারও নাম উল্লেখ করেননি ফারুক হাসান।
হামলার পর গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান জানান, গণঅভ্যুত্থানে এই আহত ছেলেরাই ( শরীফ ও হিল্লোল) ফারুক হাসানের ওপর বর্বর হামলা করেছে। এরা আজকে রাতেও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে আছে। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন! এই ছেলেগুলো কেন ফারুক হাসানের ওপর হামলা করলো, নেপথ্যে কারণ জানা জরুরি। বড় ধরনের ষড়যন্ত্র আছে বলে ধারণা করছি। গোয়েন্দা সংস্থাকে সবকিছু অনুসন্ধান করতে হবে।
এছাড়া হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন দলটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।
অপরদিকে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান বলেছেন, ফারুক হাসানের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের সবার ভিডিও ফুটেজ আছে এবং তাদের পরিচয়ও উন্মোচিত হয়েছে। এখন তাদেরকে গ্রেফতার করা সরকারের দায়িত্ব। বিশেষ করে তিন ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব হলো হামলাকারীদের গ্রেফতার নিশ্চিত করা। তাহলে তাদের সংস্কারের বিশ্বাস যোগ্যতা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে পুরো ঘটনা সংঘটনে সারজিস আলমের ভূমিকার বিষয়েও তিন ছাত্র উপদেষ্টার অবস্থান স্পষ্ট হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, বিপ্লবী পরিষদ নতুন বলে তারা হামলার ইস্যু ইগনোর করতে পারে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির সামনে তাদের দাঁড়াতে না পারার কারণগুলোর মধ্যে এই হামলা বারবার প্রাসঙ্গিক হবে। একটি নতুন দলের প্রতি সরকারের ছাত্র অংশের ভূমিকা চরম ফ্যাসিবাদী। এ অবস্থায় ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে তাদের বয়ানের ন্যায্যতা শেষ হয়ে গেছে।