একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন।
কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
চলতি অর্থবছর থেকে শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই হবে না, বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে হলে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্রও দেখাতে হবে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ অনুযায়ী ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যে কারণে রিটার্ন দাখিলের বিকল্প নেই
করদাতাদের ভোগান্তি দূর করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনলাইন সেবা দিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে করদাতাদের অতি প্রয়োজনীয় দুইটি সেবা হচ্ছে অনলাইন রিটার্ন (ই-রিটার্ন) দাখিল ও ই-ট্যাক্স পেমেন্ট।
আর এই দুইটি সেবা গ্রহণ করলে একজন করদাতা যেকোনো স্থানে বসেই রিটার্ন দাখিলের যাবতীয় কাজ করতে পারবে। কর অফিস কিংবা ব্যাংকে যেতে হবে না করদাতাকে।
এ বিষয়ে এনবিআরের অডিট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের প্রথম সচিব মো. সরোয়ার হোসেন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনবিআরের ই- ট্যাক্স পেমেন্ট সিস্টেমটি আসলেই করদাতাবান্ধব। কোনো ঝামেলা ছাড়াই একজন করদাতা ব্যাংকে না গিয়ে সামান্য কিছু চার্জের বিনিময়ে ডেবিট-ক্রেডিট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করতে পারছেন। এর মাধ্যমে করদাতার ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছি।
অন্যদিকে আয়কর আইনজীবী ইমরান গাজী এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনবিআরের অনলাইন রিটার্ন (ই-রিটার্ন) ও ই-ট্যাক্স পেমেন্ট সেবা আসলেই করদাতাবান্ধব। আমার এখন কোনো ক্লাইন্টকে খুবই অল্প সময়ে তাদের সেবা দিতে পারছি। তারাও বেশ খুশি, আমাদেরও সময় বেঁচে যায়।
তিনি বলেন, আগে চালান কাটতে ব্যাংকের লম্বা লাইনে পড়তে হতো। এখন মাত্র এক মিনিটেই কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়া সব কাজ সম্পাদন করা যায়।
যেভাবে ই-রিটার্ন দাখিল করা যায়
অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে প্রথমে etaxnbr.gov.bd লিঙ্ক বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এবার এখান থেকে ই-রিটার্ন অপশন সিলেক্ট করে নিজের নামে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করে নিজের পাসওয়ার্ড নিজে সেট করা যাবে। নিবন্ধন করার সঙ্গে সঙ্গে একটি ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
এরপর নিজের টিআইএন এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করতে পারবে করদাতা। নিবন্ধন হয়ে গেলে সাইন-ইন করে যাদের করযোগ্য আয় নেই বা ‘জিরো ট্যাক্স’, তাদের কিছু তথ্য দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে রিটার্ন জমার কাজ সম্পন্ন সম্ভব।
আর যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে তারা ক্লিক করে জানতে পারবেন করের পরিমাণ, রেয়াতের পরিমাণ, রিটার্নের সঙ্গে কত টাকা দিতে হবে ইত্যাদি। এরপর প্রযোজ্য করের টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ যোগ করতে হবে রিটার্ন ফরমে। এভাবে সব কাজ শেষ হলে দাখিল করলেই ‘প্রাপ্তিস্বীকার’ স্লিপ পেয়ে যাবেন করদাতা। যা ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে করদাতাকে।
ই-ট্যাক্স পেমেন্ট যেভাবে করা যায়
অনলাইনে করের টাকা জমা দিতে হলে করদাতাকে প্রথমেই এনবিআর- সোনালী ব্যাংকের ই-সেবা ওয়েবসাইটে (https://nbr.sblesheba.com/IncomeTax/Payment) প্রবেশ করতে হবে করদাতাকে। এরপরই ট্যাক্স পেমেন্টের একটি ফোল্ডার দেখতে পারবেন করদাতা। সেখানে করদাতাদের ই-টিআইএন নম্বর দিলে করদাতার সব তথ্য সয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। যেখানে নির্ধারিত কর টাকা ও বছরের ঘর পূরণ করার পর সোনালী অ্যাকাউন্ট, ইওয়ালেট, ভিসা, নেক্সাস, এমেক্স, মাস্টার কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায় ও ওট্যাপ এর মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ করা যাবে।