ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোলিং অফিসারকে মারধর চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা না নেওয়ায়

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় এক পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৯ মে) রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২১ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫ নং বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিয়ে রোববার রাতে মীর আবু সাইদ বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিকে নগর বাজারে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে। পরে অজ্ঞাত এক যুবককে দিয়ে মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে নিয়ে যায় বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদার ও মজিবুর বানিয়া। এসময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যান্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। সরকারি কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি হিসেবে মীর আবু সাইদ এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যান্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মীর আবু সাইদের স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন মীর আবু সাইদ। এঘটনায় জাজিরা উপজেলার শিক্ষকসহ অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, আসছে ২১ তারিখের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আমি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এসময় ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এরপর তারা আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অভিযোগ দেব।

অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার বলেন, আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন, তা আমি জানিনা। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে, তাকে ম্যানেজ করতে পারলে একশ ভোট পাওয়া যাবে। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, আমরা সরকারি চাকুরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিক ভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইনগত ভাবে অন্যায়। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করব।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পোলিং অফিসারকে মারধর চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা না নেওয়ায়

আপডেট সময় ১১:১০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর টাকা নিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় এক পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৯ মে) রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২১ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনে ২৫ নং বিকে নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর আবু সাইদ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। পোলিং অফিসার হিসেবে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নিয়ে রোববার রাতে মীর আবু সাইদ বাড়ির পার্শ্ববর্তী বিকে নগর বাজারে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে। পরে অজ্ঞাত এক যুবককে দিয়ে মীর আবু সাইদকে বাজারের এক পাশে ডেকে নিয়ে যায় বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদার ও মজিবুর বানিয়া। এসময় সাইদুর রহমান সরদারসহ অন্যান্যরা মীর ইমরান আলীকে নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিনিময়ে তাকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। সরকারি কাজে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি হিসেবে মীর আবু সাইদ এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর সাইদুর রহমান সরদার, আব্দুল আলী সরদারসহ অন্যান্যরা মীর আবু সাইদকে মারধর করেন। খবর পেয়ে মীর আবু সাইদের স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন মীর আবু সাইদ। এঘটনায় জাজিরা উপজেলার শিক্ষকসহ অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পোলিং অফিসার ও শিক্ষক মীর আবু সাইদ বলেন, আসছে ২১ তারিখের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে আমি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এসময় ব্যক্তিগত কাজে বাজারে গেলে একজন লোক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ অন্যান্যদের কাছে। তারা আমাকে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এরপর তারা আমাকে মারধর করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি আমার সিনিয়র শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অভিযোগ দেব।

অভিযুক্ত মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক ও বিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সরদার বলেন, আপনি কোথা থেকে বিষয়টি জেনেছেন, তা আমি জানিনা। মীর আবু সাইদ এমন কোনো বংশের ছেলে নয় যে, তাকে ম্যানেজ করতে পারলে একশ ভোট পাওয়া যাবে। তার সঙ্গে আমাদের কারও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সাথে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আক্তার সুমি বলেন, আমরা সরকারি চাকুরি করি। সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই আমাদের কাজ। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কারও পক্ষ নিয়ে কাউকে রাজনৈতিক ভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইনগত ভাবে অন্যায়। আমাদের শিক্ষক মীর আবু সাইদ এমন একটি প্রস্তাবে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করব।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।