ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দক্ষিণখানে পাষণ্ড স্বামী ও তার বন্ধুরা মিলে স্ত্রীকে ধর্ষণ! বিচারের আশায় ধর্ষিতা নারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকে উত্তেজনার নেপথ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল হাসিনার শাসনামল ছিল ইতিহাসের কলঙ্ক: যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বোরহানউদ্দিন বিএনপির কেউ চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্হা নেয়া হবে: মাফরুজা সুলতানা পাঁচবিবির ইউএনও জেলা প্রশাসককে গাছের চারা উপহার মঠবাড়িয়ায় মুদি মনোহরী দোকান থেকে নগদ টাকা সহ মালামাল চুরির অভিযোগ রাজবাড়ী সদরের আলীপুরে একই সময় দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার জান্নাতুলের, এলাকায় চাঞ্চল্য শেখ হাসিনার পতন ও বিতর্কিত ঠিকাদার শাহ আলমের সখ্যতার নতুন খেলা” গুলশানে বেদখল হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি, জানা গেল বাড়িগুলোর নাম-ঠিকানা প্রয়োজন ছাড়া প্রকল্প তৈরি নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্মকর্তারা।

জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আবেদন কোর্টের নজরে আনলেন আইনজীবীরা

ঢাকা: হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নজরে এনেছেন আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির নজরে আনা হয়।

এ আবেদনটি আজকের কার্যতালিকার ৫১ নম্বর ক্রমিকে ছিল।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানীয়া আমীর ও আহসানুল করীম।

পরে আহসানুল করীম জানান, জামায়াতের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি এগিয়ে আনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম। যেহেতু ৪ তারিখ তাদের সমাবেশ আছে সেহেতু এটি যেন তাড়াতাড়ি হয়, সেই আবেদন করেছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, আগামী সোমবার দিন ঠিক করার জন্য। একইসঙ্গে আগামী ৪ আগস্ট জামায়াতের যে কর্মসূচি রয়েছে তা পালন থেকে তারা যেন বিরত থাকে। কোর্ট বললেন, আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মামলাটি তালিকায় এগিয়ে আসবে।

জামায়াতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ তিনজন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গতমাসে পৃথক আবেদন করে।

গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকী আবেদনগুলো শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। এর মধ্যে আরও ৪২ জন পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন।

যারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য,বীর মুক্তিযোদ্ধা,লেখক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন।

এই ৪২ জনের পক্ষভুক্ত হতে আবেদনের বিষয়টি ২৭ জুলাই নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর।

এই ৪২ জন হলেন, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাব উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.আজহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক, শাহরিয়ার কবির, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমেদ এর ছেলে জাফর ইকবাল, মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বারক আলভী, মেঘনা গুহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মমতাজ জাহান, অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (মেজবাহ কামাল), বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন কাজী আব্দুস সাত্তার,অধ্যাপক মাহফুজা খানম, রোকেয়া কবীর, শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যর ছেলে নট কিশোর আদিত্য, শহিদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ছেলে তানভীর শোভন হায়দার চৌধুরী, আবেদ খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মুজতবা আহমেদ মোর্শেদ, মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী, খুশী কবীর, নিসার হোসেন, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মোহাম্মদ রফিকুন নবী, আব্দুল মান্নান, মো. মনিরুজ্জামান, শেখ আফজাল হোসেন, ফরিদা জামান, বীরেন্দ্র কুমার সোম, আবুল হাশেম খান, এবিএম শামশুল হুদা, শামীম আক্তার, তানভীর মোকাম্মেল, হারুন হাবীব, ডা. সারওয়ার আলী ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

২৬ জুন আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটা আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আদালত অবমাননর আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ড. গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লা মোহাম্মদ তাহের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুককে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন। রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (বি) (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

পরে ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনকারীরা এ রুল শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ মার্চ আবেদনটি বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১০ মার্চ সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন দ্বৈত বেঞ্চ। ওইদিন প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।

২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হলে যেকোনো দিন রায় দেবেন বলে জানিয়ে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেন রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় ওঠে।

এরপর ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দক্ষিণখানে পাষণ্ড স্বামী ও তার বন্ধুরা মিলে স্ত্রীকে ধর্ষণ! বিচারের আশায় ধর্ষিতা নারী

জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আবেদন কোর্টের নজরে আনলেন আইনজীবীরা

আপডেট সময় ১১:৪২:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা: হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনটি আপিল বিভাগের নজরে এনেছেন আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির নজরে আনা হয়।

এ আবেদনটি আজকের কার্যতালিকার ৫১ নম্বর ক্রমিকে ছিল।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানীয়া আমীর ও আহসানুল করীম।

পরে আহসানুল করীম জানান, জামায়াতের বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানি এগিয়ে আনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম। যেহেতু ৪ তারিখ তাদের সমাবেশ আছে সেহেতু এটি যেন তাড়াতাড়ি হয়, সেই আবেদন করেছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, আগামী সোমবার দিন ঠিক করার জন্য। একইসঙ্গে আগামী ৪ আগস্ট জামায়াতের যে কর্মসূচি রয়েছে তা পালন থেকে তারা যেন বিরত থাকে। কোর্ট বললেন, আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মামলাটি তালিকায় এগিয়ে আসবে।

জামায়াতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ তিনজন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গতমাসে পৃথক আবেদন করে।

গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকী আবেদনগুলো শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। এর মধ্যে আরও ৪২ জন পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন।

যারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য,বীর মুক্তিযোদ্ধা,লেখক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন।

এই ৪২ জনের পক্ষভুক্ত হতে আবেদনের বিষয়টি ২৭ জুলাই নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর।

এই ৪২ জন হলেন, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাব উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.আজহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক, শাহরিয়ার কবির, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমেদ এর ছেলে জাফর ইকবাল, মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বারক আলভী, মেঘনা গুহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মমতাজ জাহান, অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (মেজবাহ কামাল), বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন কাজী আব্দুস সাত্তার,অধ্যাপক মাহফুজা খানম, রোকেয়া কবীর, শহীদ প্যারী মোহন আদিত্যর ছেলে নট কিশোর আদিত্য, শহিদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর, শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ছেলে তানভীর শোভন হায়দার চৌধুরী, আবেদ খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মুজতবা আহমেদ মোর্শেদ, মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী, খুশী কবীর, নিসার হোসেন, আহমেদ শামসুদ্দোহা, মোহাম্মদ রফিকুন নবী, আব্দুল মান্নান, মো. মনিরুজ্জামান, শেখ আফজাল হোসেন, ফরিদা জামান, বীরেন্দ্র কুমার সোম, আবুল হাশেম খান, এবিএম শামশুল হুদা, শামীম আক্তার, তানভীর মোকাম্মেল, হারুন হাবীব, ডা. সারওয়ার আলী ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

২৬ জুন আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটা আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আদালত অবমাননর আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ড. গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লা মোহাম্মদ তাহের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুককে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন। রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।

এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (বি) (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

পরে ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনকারীরা এ রুল শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ মার্চ আবেদনটি বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১০ মার্চ সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন দ্বৈত বেঞ্চ। ওইদিন প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।

২০১৩ সালের ১২ জুন ওই রুলের শুনানি শেষ হলে যেকোনো দিন রায় দেবেন বলে জানিয়ে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ। পরে জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ওই আপিল শুনানিতে উদ্যোগ নেন রিটকারী পক্ষ। সে অনুসারে আপিলটি ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় ওঠে।

এরপর ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সার সংক্ষেপ প্রস্তুত করতে চূড়ান্তভাবে দুই মাস সময় দেন।