ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয় ইমরান খানের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালানোর শঙ্কা জবির ৯ শিক্ষকসহ ২৫৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা উপ-রাষ্ট্রপতি পদ ফেরাতে চায় বিএনপি, আগে কারা ছিলেন? বঞ্চিত ক্রীড়া সংগঠকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাই : আমিনুল হক বিহারী মুরাদ দিদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সংঘাত অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ মাহবুবুলসহ ১৮ জন কারাগারে রংপুর জেলায় বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা

আমদানির ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দাম মণে কমলো ৫০০ টাকা

পাবনার হাট-বাজারে শুক্রবার (১৯ মে) পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২৮০০-২৯০০ টাকা মণ। এমন দামে কিছুটা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু চাষিদের সেই আশায় ‘গুড়েবালি’। কারণ একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে গড়ে ৫০০ টাকা কমে গেছে।

শনিবার (২০ মে) দেশের বৃহৎ পেঁয়াজের হাট বনগ্রামে সবচেয়ে ভালোমানের প্রতিমণ পেঁয়াজ ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে ফাটা পেঁয়াজ আরও কম দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় দরপতন শুরু হয়েছে।

শনিবার সরেজমিন পাবনার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটভর্তি পেঁয়াজ। তবে বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। ব্যাপারীরা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে উৎসাহী নন। শুক্রবার পাবনার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট চিনাখড়ায় যে পেঁয়াজ ২৭০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে; সেই মানের পেঁয়াজ শনিবার বিক্রি হয়েছে ২২০০-২৩০০ টাকা দরে। আর ২৮০০-২৯০০ টাকা মণের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা দরে।

অনেক চাষিই বলছেন, এক রাতের ব্যবধানে দাম এত টাকা কমে যাবে তা তারা ভাবতেও পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভালো পেঁয়াজের দাম ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দাম কমে হয়ে যায় ১১০০- ১২০০ টাকা।

চাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, গতবছর মণপ্রতি তাদের খরচ ছিল এক হাজার টাকার বেশি। তার ওপর পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ওজনে কমে যায়, পচে যায়। তাই তারা গত বছর লাভবান হতে পারেননি।

তারা আরও বলছেন, এবছর দাম বেশি হলেও ফলন হয়েছে গত বছরের অর্ধেক। সে হিসাবে তাদের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মৌসুমের কিছুদিন পর এসে দাম বাড়ায় তারা লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর আমদানির ঘোষণা তাদের আশায় গুড়েবালি দিয়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি সাগর হোসেন বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বললেন, পেঁয়াজের দাম দুই-একদিনের মধ্যে না কমলে আমদানি করা হবে। তার এক ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দামের বারটা বেজে গেছে।

চাষি দু-একটি ফসলে লাভবান না হলে টিকে থাকবে কীভাবে, মন্ত্রী তা ভাবেননি বলেও অভিযোগ করেন ওই কৃষক বলেন।

পাবনা সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, শুক্রবার পেঁয়াজের মণ ছিল ২৮০০- ২৯০০ টাকা মণ। একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে হয়ে গেছে ২২০০-২৩০০ টাকা। এত বাজার কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। এই দামে বেচলে আমাদের পোষাবে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানি করে তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।

বনগ্রাম হাটে আসা আরেক চাষি বলেন, হাটে পেঁয়াজ এনে শুনি দাম মণপ্রতি ৫০০ টাকা কমে গেছে। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় গাড়ি থেকে পেঁয়াজ নামাচ্ছি না। সরকার যদি আমদানি করে তাহলে সরকারই ব্যবসা করুক। আমরা পেঁয়াজ লাগাব না। কারণ পেঁয়াজ আমাদের জাত ব্যবসা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারবো না।

পেঁয়াজের ব্যাপারী রায়হান উদ্দিন জানান, তিনি চিনাখড়া, বনগ্রাম, পুষ্পপাড়া, হাজিরহাট, আতাইকুলাসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ কেনেন। তিনি জয়পুরহাট এবং ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহ করেন।

তিনি আরও জানান, একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। শনিবার তিনি কিনেছেন ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে। আগেরদিন কিনেছেন ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে।

রায়হান বলেন, আমদানির ঘোষণার পর থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং পাবনার খ্যাতিমান চাষি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, চাষিরা বেশিরভাগ ফসল চাষ করেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এবার পেঁয়াজে তারা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। তারা যেন ক্ষতির শিকার না হন সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, চাষির পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকার ওপর। কিন্তু মৌসুমে চাষিরা ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তারা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিনি আরও বলেন, তখন ওই দরে বিক্রি না করে উপায়ও থাকে না চাষির। কারণ তারা দেনার ভারে জর্জরিত থাকেন। এবছর যে দাম উঠেছে তাতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সরকার আমদানি করে দামটা ভারসাম্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করছে। যাতে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েই ভালো থাকেন। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

আমাদের মাতৃভূমি/মাজহারুল

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয়

আমদানির ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দাম মণে কমলো ৫০০ টাকা

আপডেট সময় ০৭:৪৭:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

পাবনার হাট-বাজারে শুক্রবার (১৯ মে) পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২৮০০-২৯০০ টাকা মণ। এমন দামে কিছুটা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু চাষিদের সেই আশায় ‘গুড়েবালি’। কারণ একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে গড়ে ৫০০ টাকা কমে গেছে।

শনিবার (২০ মে) দেশের বৃহৎ পেঁয়াজের হাট বনগ্রামে সবচেয়ে ভালোমানের প্রতিমণ পেঁয়াজ ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে ফাটা পেঁয়াজ আরও কম দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়ায় দরপতন শুরু হয়েছে।

শনিবার সরেজমিন পাবনার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটভর্তি পেঁয়াজ। তবে বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কম। ব্যাপারীরা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে উৎসাহী নন। শুক্রবার পাবনার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট চিনাখড়ায় যে পেঁয়াজ ২৭০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে; সেই মানের পেঁয়াজ শনিবার বিক্রি হয়েছে ২২০০-২৩০০ টাকা দরে। আর ২৮০০-২৯০০ টাকা মণের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা দরে।

অনেক চাষিই বলছেন, এক রাতের ব্যবধানে দাম এত টাকা কমে যাবে তা তারা ভাবতেও পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভালো পেঁয়াজের দাম ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে দাম কমে হয়ে যায় ১১০০- ১২০০ টাকা।

চাষিদের দেওয়া তথ্যমতে, গতবছর মণপ্রতি তাদের খরচ ছিল এক হাজার টাকার বেশি। তার ওপর পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ওজনে কমে যায়, পচে যায়। তাই তারা গত বছর লাভবান হতে পারেননি।

তারা আরও বলছেন, এবছর দাম বেশি হলেও ফলন হয়েছে গত বছরের অর্ধেক। সে হিসাবে তাদের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মৌসুমের কিছুদিন পর এসে দাম বাড়ায় তারা লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর আমদানির ঘোষণা তাদের আশায় গুড়েবালি দিয়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি সাগর হোসেন বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বললেন, পেঁয়াজের দাম দুই-একদিনের মধ্যে না কমলে আমদানি করা হবে। তার এক ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দামের বারটা বেজে গেছে।

চাষি দু-একটি ফসলে লাভবান না হলে টিকে থাকবে কীভাবে, মন্ত্রী তা ভাবেননি বলেও অভিযোগ করেন ওই কৃষক বলেন।

পাবনা সদর উপজেলার শুকচর গ্রামের শুকুর আলী বলেন, শুক্রবার পেঁয়াজের মণ ছিল ২৮০০- ২৯০০ টাকা মণ। একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে হয়ে গেছে ২২০০-২৩০০ টাকা। এত বাজার কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ ফেরত নিয়ে যাচ্ছি। এই দামে বেচলে আমাদের পোষাবে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানি করে তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।

বনগ্রাম হাটে আসা আরেক চাষি বলেন, হাটে পেঁয়াজ এনে শুনি দাম মণপ্রতি ৫০০ টাকা কমে গেছে। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় গাড়ি থেকে পেঁয়াজ নামাচ্ছি না। সরকার যদি আমদানি করে তাহলে সরকারই ব্যবসা করুক। আমরা পেঁয়াজ লাগাব না। কারণ পেঁয়াজ আমাদের জাত ব্যবসা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারবো না।

পেঁয়াজের ব্যাপারী রায়হান উদ্দিন জানান, তিনি চিনাখড়া, বনগ্রাম, পুষ্পপাড়া, হাজিরহাট, আতাইকুলাসহ বিভিন্ন হাট থেকে পেঁয়াজ কেনেন। তিনি জয়পুরহাট এবং ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহ করেন।

তিনি আরও জানান, একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। শনিবার তিনি কিনেছেন ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে। আগেরদিন কিনেছেন ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে।

রায়হান বলেন, আমদানির ঘোষণার পর থেকেই দাম কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং পাবনার খ্যাতিমান চাষি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, চাষিরা বেশিরভাগ ফসল চাষ করেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এবার পেঁয়াজে তারা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। তারা যেন ক্ষতির শিকার না হন সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, চাষির পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ৩৫-৪০ টাকার ওপর। কিন্তু মৌসুমে চাষিরা ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তারা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিনি আরও বলেন, তখন ওই দরে বিক্রি না করে উপায়ও থাকে না চাষির। কারণ তারা দেনার ভারে জর্জরিত থাকেন। এবছর যে দাম উঠেছে তাতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সরকার আমদানি করে দামটা ভারসাম্যপূর্ণ রাখার চেষ্টা করছে। যাতে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়েই ভালো থাকেন। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

আমাদের মাতৃভূমি/মাজহারুল