চীনের উদ্যোগে পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলতি মাসে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন উপযোগী কি না, তা দেখতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের শুক্রবার (৫ মে ) রাখাইনের মংডুতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চীনের উদ্যোগে প্রথম লটে চলতি মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরু করতে চায় মিয়ানমার। গত মাসের মাঝামাঝিতে কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলের রাখাইনেরপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের রাখাইন যাওয়া ছাড়াও ওই সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলাসহ প্রত্যাবসন নিয়ে আলোচনা হয়।বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের রাখাইন সফরসহ প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনই গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাইছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কিছু অগ্রগতি আছে। তবে আমরা কমিট করেছি এখনই কিছু বলব না। এখন কিছু বলতে গেলে কংক্রিট তথ্য হবে না।
কূটনৈতিক একটি সূত্র বলছে, সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গার প্রথম দলটি নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন ও মিয়ানমার। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষ প্রান্তিকে প্রত্যাবসনের তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে।
চীনের নেপথ্য ভূমিকায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানায় রোহিঙ্গারা। ফিরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। প্রায় ছয় বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে।