যশোরের মণিরামপুরে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মেয়ের পরিবার পারভেজ হাসান (২০) নামের এক তরুণকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর মৃত্যুর অভিযোগ করেছ তার পরিবার।
নির্যাতনকালে জোর করে ওই তরুণের মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয় বলেও যুবকের স্বজনদের দাবি। মারা যাওয়ার আগে নিহত যুবক পারভেজ হাসান হাসপাতালের বেডে বলছিলেন তারা জোর করে আমার মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের পিতাসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের বাগডোব গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, ইসমাইল হোসেনের ছেলে পারভেজ হাসান শৈশব থেকেই নানা বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে আসছিল। পারভেজ গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। চলতি বছর তার বিদেশে যাবার কথা ছিল। এজন্য পাসপোর্টও করা হয়েছে তার। নানা বাড়িতে থাকার সুবাদে প্রতিবেশী পল্লীচিকিৎক ইমরান হোসেনের মেয়ে রিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। তরুণের পরিবার গরীব হওয়ায় এ সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই রিয়ার পিতাসহ স্বজনরা পারভেজ হাসানের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে মুখে বিষ ঢেলে দেয়।
পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যপারী ও মা কোহিনুর বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, গত ২১ জানুয়ারি শনিবার সকালে প্রতিবেশী ইমরানের মেয়ে রিয়া বাড়ি থেকে চলে যায়। ঘটনার দুইদিন পর রিয়াকে পাশর্^বর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে। তাদের নাতী ছেলে পারভেজ হাসান বাড়িতেই ছিল।
২৩ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে স্থানীয় রোহিতা বাজারে উদ্দেশ্যে রওনা হলে রিয়ার পিতাসহ স্বজনরা তাদের নাতী পারভেজ হাসানকে টেনে হেচড়ে স্থানীয় প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সাথে বেঁধে মিজানুর রহমানসহ রিয়ার স্বজনরা পারভেজের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পারভেজকে দেখেন। আর না মারতে নির্যাতনকারিদের দু’পা জড়িয়ে ধরেন তারা। এক পর্যায় সেখান থেকে পারভেজকে উদ্ধার করে মনিরামপুর হাসপাতালে নেয়। একটু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার পর গত ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ফের রিয়ার পিতাসহ কয়েকজন মিলে পারভেজকে বেধড়ক মারপিট করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দেয়। মারপিট করে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেবার চেষ্টাকালে পারভেজ সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসলে যশোর ২শ’ ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পারভেজকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পারভেজ মারা যায়।
এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারি পারভেজ হাসানের নানা সিদ্দিক ব্যাপারী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। পারভেজের খালা জাহানারা বেগম জানান, হাসপাতালে তার কোলেই পারভেজ শেষ নিঃশাস ত্যাগ করে।
মারা যাবার আগে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে পারভেজ হাসান জানায়, তাকে মেরে জোর করে মুখের ভিতর বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। পারভেজের ভাষ্যটির একটি ভিডিও রেকর্ড স্বজনরা ধারন করে রাখেন বলে জানা যায়।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিয়ার পিতা পল্লীচিকিৎসক ইমরান হোসেন ও তার (ইমরান হোসেন) মামা সিরাজুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ।
প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তিনি মারপিটের সাথে জড়িত নন। মেয়ে পরিবারের লোকজন ছেলেটিকে ধরে তার বাড়িতে এনেছিল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মেয়েপক্ষ ছেলেটিকে চড়-থাপ্পড় দিলে তিনি ঠেকিয়ে ছিলেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনা জানার সাথে সাথে মামলা নেওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের পিতাসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।