ঢাকা ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয় ইমরান খানের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালানোর শঙ্কা জবির ৯ শিক্ষকসহ ২৫৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা উপ-রাষ্ট্রপতি পদ ফেরাতে চায় বিএনপি, আগে কারা ছিলেন? বঞ্চিত ক্রীড়া সংগঠকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাই : আমিনুল হক বিহারী মুরাদ দিদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সংঘাত অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ মাহবুবুলসহ ১৮ জন কারাগারে রংপুর জেলায় বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা

টনক নড়ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

কানাইঘাট রুট দিয়ে ভারতীয় চিনির চোরাচালান অব্যাহত ভোগ্যপণ্য চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে চোরাচালানী বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট রুট দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় চোরাই পণ্য চিনি। ট্রাক- মিনি ট্রাক বোঝাই করে শহরে বন্দরে ভারতীয় চিনি পাচার করা হলেও নিরব প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীরা।

সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি হলেও টনক নড়ছে না ইউনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অজ্ঞাত কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের নিরবতার সুযোগে সিলেটের কানাইঘাট চোরাচালানের প্রধান রুটে পরিনত হয়ে গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন বায়মপুরের শিব্বির আহমদ ও একই গ্রামের রিয়াজ এবং উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি চোরাই সিন্ডিকেট ভারতীয় পণ্য চোরাচালীতে সক্রিয়।

মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত উপজলার ধনপুরের নিজামসহ সাংবাদিক পরিচয়ের ৩ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে বখরা আাদায় করেন থানার ক্যাশিয়ার কনেস্টবল সুলতান। স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, কানাইঘাট উপজেলার সুরমার উত্তর অংশের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ও লক্ষ্মীপ্সাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ও স্থল সীমান্ত। পূর্বে কারাবাল্লা থেকে পশ্চিমে বড়বন্দ-সুরইঘাট পর্যন্ত ভারত অংশে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক। মূলত এই সীমান্ত সড়ক দিয়েই কানাইঘাটে পাচার হয়ে থাকে ভারতীয় চোরাই পণ্য।

বাংলাদেশ অংশে ভারতের মতো সীমান্তিক কোনো সড়ক না থাকলেও কানাইঘাট উপজেলা সদর মুখী রয়ে কয়েক আন্চলিক গ্রামীণ সড়ক ও কাঢা রাস্তা এবং বর্ষাকলীন ৩টি নৌপথ। সীমান্তঘেষা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সীমান্ত প্রহরা অত্যন্ত দূর্বল। আর এ সুযোগে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে চিনি, গরু, নাসির বিড়ি, ইয়াবা ফেনসিডিল সহ রকমফের আমদানী নিষিদ্ধ পণ্য ও মাদক। আর এ চোরাচানী সিন্ডিকেটে নেপথ্যে রয়েছেন কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন বায়মপুরের কথিত পাথর ব্যবসায়ী শিব্বির ও উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েক।

এদের চোরাচালানী সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত অন্যরা হচ্ছেন কানাইঘাট পৌরসদরের দক্ষিণ বাজারের ব্যবসয়ী আব্দুর রহমান ও আলী আকবর । আব্দুর রহমান ও আকবর -এর গোদাম থেকে গত নভেম্বর মাসে বিপুল পরিমান ভারতীয় চোরাই চিনি উদ্ধা করে র্যাব। এসময় পৃথক অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার ও থানায় মামলা করা হয়। মামলার তদন্তে থানা পুলিশের গাফিলতি সুযোগে চোরাচালানী আকবর ও আব্দুর রহমান জামিনে বেরিয়ে ফের পুরোদমে চোরাচালানীতে জড়িয়ে পড়ে। সূত্রমতে সাম্প্রতিক চিনি চোরাচালীতে আরোও যারা জড়িত, তারা হচ্ছেন পৌরসভার বায়মপুরের মেম্বারপুত্র রিয়াজ, বায়মপুরের কয়সর, চাপনগরের সহিদ, গৌরীপুরের সখাই, সামছুউদ্দিন, জমির ও আব্দুন নুর, থানার ধর্মপুরের নিজাম ও ধনপুরের মোমিন।

এদের অনেকের বাড়িতে, দোকানে, গোদামে, এমনকি বাড়ি খড়ঘরেও রাখা হচ্ছে ভারতীয় চোরাই চিনি। কানাইঘাটের বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার কিনারে ও নিজ বাড়িতে রয়েছে শিব্বিরের চোরাই মালের ৪ টি গোদাম, কানাইঘাটের খেয়াঘাটে রিয়াজের ৪টি গোদাম। কানাইঘাট সদর বাজারস্থ আলী আকবর ও আব্দুর রহমানের গোদামে উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা চোরাই মাল রাখা হয় এবং সুরমা নদী দিয়ে নৌকা যোগে চিনির চালান গাছবাড়ি বাজার, শাহগলি বাজার ও চারখাই ঘাটে পৌছানো হয়।

কানাইঘাটের উত্তরপূর্ব স্থলসীমান্ত দিয়ে আনা ভারতী চোরাই চিনি দুটি রুটে গাড়ি দিয়ে পাচার করা হয়, একটি হচ্ছ কানাইঘাটে খেয়াঘাট-বায়মপুর-শাহবাগ হয়ে সিলেট- জকিগন্জ সড়ক। এটার তত্বাবধানে থাকের শিব্বির ও রিয়াজ। অপরটি হচ্ছে সুরমার গৌরীপুর ঘাট থেকে চরিপাড়া-বাংলাবাজার রাস্তা হয়ে সিলেট-জকিগন্জ রোড। এ রুটের দায়িত্বে রয়েছেন কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সায়েক।

স্থানীয় সূত্রমতে কানাইঘাটের খেওয়াঘাটের দক্ষিণ বাজারে রয়েছে চোরাকারবারী রিয়াজের তত্বাবধানে ভারতীয় চোরাই পণ্যে চিনির ৪টি গুদাম। বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার কাছে রয়েছে একটি গুদাম, বায়মপুরের চোরাচালানী শিব্বিরের বাড়িতে ২টি এবং খোদ কানাইঘাট দক্ষিণ বাজারে চোরাচালানী সিন্ডিকেট সদস্য আব্দুর রহমান ও আলী আকবরের রয়েছে পৃথক আরো ২ চোরাই চিনির গোদাম। মাসখানেক আগে (নভেম্বরে) র‌্যাবের একটি ইউনিট কানাইঘাট বাজারের দুই গোদামে পৃথক দুই দিন অভিযান চালায়।

এসময় ভারতীয় চোরাইপণ্য চিনির চালানসহ চোরাই সিন্ডিকেট সদস্য আব্দুর রহমান ও আলী আকবরকে আটক করে। এ দুই অভিযানে র‌্যাব বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে। আটক আব্দুর রহমানের নামে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই মিজানুর রহমান এবং আলী আকবরের নামে দেওয়া মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই মাসুম। পরে ওই দুই সিন্ডিকেট সদস্য আদালত থেকে পৃথক জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় কানাইঘাট পৌরসভার বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার সামনের গুদাম থেকে ৬০ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনিসহ শিব্বির সিন্ডিকেটের একটি ট্রাক আটক করে সাদাপোষাকীরা।

এর আগে রাত ৯টার দিকে গিয়ে গাড়ি নিয়ে ওইখানে অবস্থান নেয়। আটকের পর তাৎক্ষনিকনভাবে চোরাচালানী সিন্ডিকেটের একজন মিডিয়া পার্টনার ও পুলিশ পার্টনারের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ট্রাকভর্তি ভারতীয় চিনির চালান ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে গাড়ি মানুষ ও মাল কিছুই পায়নি। অতি সম্প্রতি কানাইঘাটের খেয়াঘাটে শিব্বিরের ৬০ বস্তা চোরাই চিনিভর্তি একটি নৌকা ডুবে গেলে গত শুক্রবার নৌকাটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনতা চিনির ভেজা প্লাস্টিকের বস্তাগুলো নিয়ে যায়।

গত নভেম্বরে ব্যাবের পৃথক অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইঘাট থানার এস আই মিজানুর রহমান মামলা দুটির সত্যতা নিশ্চিত করলেও ঘটনার তারিখ ও মামলা দুটির নাম্বার জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অভিযোগের বিষয়ে শিব্বির আহমদের সাথে ২৫ ডিসেম্বর মুঠোফোনে যোগাযেগ করা হলে তিনি নিজেকে পাথর ব্যবসায়ী দাবি করে তার বিরুদ্ধে আনিত চোরাচালানীর অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান।

উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েক- এর সাথে মঙ্গলবার দৃপুরে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন- আমাদের সাতবাক ইউনিয়ন এলাকার দিয়ে কোনো চোরাই চিনি বাপ অন্য কোনো পণ্য পাচার হয় না, তাই তিনি এর সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। চোরাচালান ও সম্প্রতি সাদা পেষাকীদের অভিযান বিষয়ে রিয়াজের কাছে ফোন দিলে তিনি সম্প্রতি সাদা পোষাকীদের অভিযানের সত্যতা শিকার করে বলেন-শোনেছি কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের ঘাটেরবাজারে সাদা পোষাকীরা চোরাই চিনিভর্তি একটি ট্রাক আটক করেছিল। পরে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। থানা পুলিশের পক্ষে চোরাচালানীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বখরা আদায়ের বিষয়ে কাইনাইঘাট থানার কনেস্টবল সূলতানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি থানায় গিয়ে চা খাওয়ান নিমন্ত্রন জানিয়ে বলেন,আমি পাথর কোয়ারিতে ডিউটি করি। থানায় ক্যাশিয়ারের কোনো পদ নেই বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যে ৫ টার দিকে কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলামের সরকারী সেলফোনে বারবার কল দিলে তিনি এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেনি। চোরাচালান দমন বিষয়ে কানাইঘাট-জৈন্তাপুর সার্কলের এসএসপি আব্দুল করিমের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সীমান্ত চোরাচালান দমনে আমাদের থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে এবং জিরো পয়েন্টে বিজিবি’র ত’পরতাও লক্ষণীয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয়

টনক নড়ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

আপডেট সময় ০৯:১৫:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

কানাইঘাট রুট দিয়ে ভারতীয় চিনির চোরাচালান অব্যাহত ভোগ্যপণ্য চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে চোরাচালানী বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট রুট দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় চোরাই পণ্য চিনি। ট্রাক- মিনি ট্রাক বোঝাই করে শহরে বন্দরে ভারতীয় চিনি পাচার করা হলেও নিরব প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীরা।

সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি হলেও টনক নড়ছে না ইউনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অজ্ঞাত কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের নিরবতার সুযোগে সিলেটের কানাইঘাট চোরাচালানের প্রধান রুটে পরিনত হয়ে গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন বায়মপুরের শিব্বির আহমদ ও একই গ্রামের রিয়াজ এবং উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি চোরাই সিন্ডিকেট ভারতীয় পণ্য চোরাচালীতে সক্রিয়।

মিডিয়া পার্টনার হিসেবে সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত উপজলার ধনপুরের নিজামসহ সাংবাদিক পরিচয়ের ৩ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে বখরা আাদায় করেন থানার ক্যাশিয়ার কনেস্টবল সুলতান। স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, কানাইঘাট উপজেলার সুরমার উত্তর অংশের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ও লক্ষ্মীপ্সাদ পশ্চিম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ও স্থল সীমান্ত। পূর্বে কারাবাল্লা থেকে পশ্চিমে বড়বন্দ-সুরইঘাট পর্যন্ত ভারত অংশে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত সড়ক। মূলত এই সীমান্ত সড়ক দিয়েই কানাইঘাটে পাচার হয়ে থাকে ভারতীয় চোরাই পণ্য।

বাংলাদেশ অংশে ভারতের মতো সীমান্তিক কোনো সড়ক না থাকলেও কানাইঘাট উপজেলা সদর মুখী রয়ে কয়েক আন্চলিক গ্রামীণ সড়ক ও কাঢা রাস্তা এবং বর্ষাকলীন ৩টি নৌপথ। সীমান্তঘেষা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সীমান্ত প্রহরা অত্যন্ত দূর্বল। আর এ সুযোগে কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে চিনি, গরু, নাসির বিড়ি, ইয়াবা ফেনসিডিল সহ রকমফের আমদানী নিষিদ্ধ পণ্য ও মাদক। আর এ চোরাচানী সিন্ডিকেটে নেপথ্যে রয়েছেন কানাইঘাট পৌর এলাকাধীন বায়মপুরের কথিত পাথর ব্যবসায়ী শিব্বির ও উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েক।

এদের চোরাচালানী সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত অন্যরা হচ্ছেন কানাইঘাট পৌরসদরের দক্ষিণ বাজারের ব্যবসয়ী আব্দুর রহমান ও আলী আকবর । আব্দুর রহমান ও আকবর -এর গোদাম থেকে গত নভেম্বর মাসে বিপুল পরিমান ভারতীয় চোরাই চিনি উদ্ধা করে র্যাব। এসময় পৃথক অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার ও থানায় মামলা করা হয়। মামলার তদন্তে থানা পুলিশের গাফিলতি সুযোগে চোরাচালানী আকবর ও আব্দুর রহমান জামিনে বেরিয়ে ফের পুরোদমে চোরাচালানীতে জড়িয়ে পড়ে। সূত্রমতে সাম্প্রতিক চিনি চোরাচালীতে আরোও যারা জড়িত, তারা হচ্ছেন পৌরসভার বায়মপুরের মেম্বারপুত্র রিয়াজ, বায়মপুরের কয়সর, চাপনগরের সহিদ, গৌরীপুরের সখাই, সামছুউদ্দিন, জমির ও আব্দুন নুর, থানার ধর্মপুরের নিজাম ও ধনপুরের মোমিন।

এদের অনেকের বাড়িতে, দোকানে, গোদামে, এমনকি বাড়ি খড়ঘরেও রাখা হচ্ছে ভারতীয় চোরাই চিনি। কানাইঘাটের বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার কিনারে ও নিজ বাড়িতে রয়েছে শিব্বিরের চোরাই মালের ৪ টি গোদাম, কানাইঘাটের খেয়াঘাটে রিয়াজের ৪টি গোদাম। কানাইঘাট সদর বাজারস্থ আলী আকবর ও আব্দুর রহমানের গোদামে উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা চোরাই মাল রাখা হয় এবং সুরমা নদী দিয়ে নৌকা যোগে চিনির চালান গাছবাড়ি বাজার, শাহগলি বাজার ও চারখাই ঘাটে পৌছানো হয়।

কানাইঘাটের উত্তরপূর্ব স্থলসীমান্ত দিয়ে আনা ভারতী চোরাই চিনি দুটি রুটে গাড়ি দিয়ে পাচার করা হয়, একটি হচ্ছ কানাইঘাটে খেয়াঘাট-বায়মপুর-শাহবাগ হয়ে সিলেট- জকিগন্জ সড়ক। এটার তত্বাবধানে থাকের শিব্বির ও রিয়াজ। অপরটি হচ্ছে সুরমার গৌরীপুর ঘাট থেকে চরিপাড়া-বাংলাবাজার রাস্তা হয়ে সিলেট-জকিগন্জ রোড। এ রুটের দায়িত্বে রয়েছেন কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সায়েক।

স্থানীয় সূত্রমতে কানাইঘাটের খেওয়াঘাটের দক্ষিণ বাজারে রয়েছে চোরাকারবারী রিয়াজের তত্বাবধানে ভারতীয় চোরাই পণ্যে চিনির ৪টি গুদাম। বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার কাছে রয়েছে একটি গুদাম, বায়মপুরের চোরাচালানী শিব্বিরের বাড়িতে ২টি এবং খোদ কানাইঘাট দক্ষিণ বাজারে চোরাচালানী সিন্ডিকেট সদস্য আব্দুর রহমান ও আলী আকবরের রয়েছে পৃথক আরো ২ চোরাই চিনির গোদাম। মাসখানেক আগে (নভেম্বরে) র‌্যাবের একটি ইউনিট কানাইঘাট বাজারের দুই গোদামে পৃথক দুই দিন অভিযান চালায়।

এসময় ভারতীয় চোরাইপণ্য চিনির চালানসহ চোরাই সিন্ডিকেট সদস্য আব্দুর রহমান ও আলী আকবরকে আটক করে। এ দুই অভিযানে র‌্যাব বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে। আটক আব্দুর রহমানের নামে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই মিজানুর রহমান এবং আলী আকবরের নামে দেওয়া মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই মাসুম। পরে ওই দুই সিন্ডিকেট সদস্য আদালত থেকে পৃথক জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় কানাইঘাট পৌরসভার বায়মপুর মহিলা মাদ্রাসার সামনের গুদাম থেকে ৬০ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনিসহ শিব্বির সিন্ডিকেটের একটি ট্রাক আটক করে সাদাপোষাকীরা।

এর আগে রাত ৯টার দিকে গিয়ে গাড়ি নিয়ে ওইখানে অবস্থান নেয়। আটকের পর তাৎক্ষনিকনভাবে চোরাচালানী সিন্ডিকেটের একজন মিডিয়া পার্টনার ও পুলিশ পার্টনারের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ট্রাকভর্তি ভারতীয় চিনির চালান ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে গাড়ি মানুষ ও মাল কিছুই পায়নি। অতি সম্প্রতি কানাইঘাটের খেয়াঘাটে শিব্বিরের ৬০ বস্তা চোরাই চিনিভর্তি একটি নৌকা ডুবে গেলে গত শুক্রবার নৌকাটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনতা চিনির ভেজা প্লাস্টিকের বস্তাগুলো নিয়ে যায়।

গত নভেম্বরে ব্যাবের পৃথক অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে কানাইঘাট থানার এস আই মিজানুর রহমান মামলা দুটির সত্যতা নিশ্চিত করলেও ঘটনার তারিখ ও মামলা দুটির নাম্বার জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অভিযোগের বিষয়ে শিব্বির আহমদের সাথে ২৫ ডিসেম্বর মুঠোফোনে যোগাযেগ করা হলে তিনি নিজেকে পাথর ব্যবসায়ী দাবি করে তার বিরুদ্ধে আনিত চোরাচালানীর অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান।

উপজেলার সাতবাক ইউপি মেম্বার সায়েক- এর সাথে মঙ্গলবার দৃপুরে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন- আমাদের সাতবাক ইউনিয়ন এলাকার দিয়ে কোনো চোরাই চিনি বাপ অন্য কোনো পণ্য পাচার হয় না, তাই তিনি এর সাথে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। চোরাচালান ও সম্প্রতি সাদা পেষাকীদের অভিযান বিষয়ে রিয়াজের কাছে ফোন দিলে তিনি সম্প্রতি সাদা পোষাকীদের অভিযানের সত্যতা শিকার করে বলেন-শোনেছি কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের ঘাটেরবাজারে সাদা পোষাকীরা চোরাই চিনিভর্তি একটি ট্রাক আটক করেছিল। পরে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। থানা পুলিশের পক্ষে চোরাচালানীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বখরা আদায়ের বিষয়ে কাইনাইঘাট থানার কনেস্টবল সূলতানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি থানায় গিয়ে চা খাওয়ান নিমন্ত্রন জানিয়ে বলেন,আমি পাথর কোয়ারিতে ডিউটি করি। থানায় ক্যাশিয়ারের কোনো পদ নেই বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যে ৫ টার দিকে কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলামের সরকারী সেলফোনে বারবার কল দিলে তিনি এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেনি। চোরাচালান দমন বিষয়ে কানাইঘাট-জৈন্তাপুর সার্কলের এসএসপি আব্দুল করিমের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সীমান্ত চোরাচালান দমনে আমাদের থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে এবং জিরো পয়েন্টে বিজিবি’র ত’পরতাও লক্ষণীয়।