ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয় ইমরান খানের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালানোর শঙ্কা জবির ৯ শিক্ষকসহ ২৫৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা উপ-রাষ্ট্রপতি পদ ফেরাতে চায় বিএনপি, আগে কারা ছিলেন? বঞ্চিত ক্রীড়া সংগঠকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাই : আমিনুল হক বিহারী মুরাদ দিদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সংঘাত অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ মাহবুবুলসহ ১৮ জন কারাগারে রংপুর জেলায় বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা

দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ আরও দুই জন

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন জোহরা বেগম (৫৫)। রোববার স্বামীর সাথে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন যশোর শহরের স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোটরচালিত ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বিকেল ৩ টা ৫০ মিনিটে যশোর-চৌগাছা সড়কের সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি দাসপাড়ার রেলক্রসিংয়ের পাশে শহিদুল ইসলামের ইটভাটার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় জোহরা বেগমের। তিনি চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী।

মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ আরও দুই জন। তারা হলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিধলীয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার মিজানুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি (২২) ও বাগডাঙ্গা সরদার পাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে ভ্যানচালক মাসুম বিল্লাহ (৩০)। নতুন বছরের প্রথম দিনে তিন জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দুই জন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন আহতরা হলেন, যবিপ্রবির মাস্টার্স বর্ষের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাসিন বিল্লাহ (২৪) ও নিহত জোহরার স্বামী আমজেদ আলী (৬৫)। ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করেছে পুলিশ। হতাহত ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় ৭ দফা দাবি পেশ করে তারা।

আহত আমজাদ হোসেন জানান, চুড়ামনকাটি বাজার থেকে মোটরচালিত ভ্যানে চড়ে বেলতলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। ভ্যানে তারা স্বামী-স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ মোট ৫ জন যাত্রী ছিলেন। পথিমধ্যে শহিদুল ইসলামের ইটভাটার সামনে পৌঁছালে সামনে থেকে আসা বিএডিসির (যশোর-ট ১৩৯৪) একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার স্ত্রী জোহরা বেগমসহ তিন জন মারা যান। আরও দুইজন গুরুতর আহত হন। নিহত জোহরার স্বজন আজমিনুর রহমান জানান, তার মামি জোহরা ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।  নিহত সুমির ভাই আলিনুর রহমান জানান, তার বোন ফারজানা আক্তার সুমি ছোট বেলা থেকেই মেধাবি। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু দেখা স্বপ্ন সড়কে মিশে গেলো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান,  শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার সুমি ও মোতাসিন বিল্লাহ ভ্যানে চড়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে আসছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সুমি মারা গেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাক চাপায় ভ্যানটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নিহতদের শরীরের মাংস ও মাথার অংশ সড়কের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন নিহতদের পরিবারের সদস্য ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যে নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর্তনাদ ও আহজারিতে হাসপাতাল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপ পরিচালক আজিজুল হক জানান, দুর্ঘটনাটি ছিলো ভয়াবহ। খবর পাওয়ার সাথেই ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই সেলিম হোসেন জানান, ঘাতক ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। চালক হাফিজুর রহমান মিঠুকে আটক করা হয়েছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ফারজানা আক্তার সুমির মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, পিএমই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার সুমির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। এক শোক বাণীতে অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সুমির দুর্ঘটনার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। একই সময়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের আরও একজন শিক্ষার্থী মুতাসিন বিল্লাহ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তাঁর আশু সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসলে সড়ক দুর্ঘটনা যবিপ্রবির বেশ কয়েক জন মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল প্রয়াণ হয়েছে অথবা মারাত্মক আহত হয়ে তাঁরা চিকিৎসা নিয়েছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো যাবে না।

শোক বার্তায় তিনি আরও বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার কাছে সন্তানসম। সড়ক দুর্ঘটনায় বলি হয়ে আমার সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। তাঁকে হারিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবারের প্রতিটি সদস্য আজকে গভীরভাবে শোকাহত। আমি ফারজানা আক্তার সুমির রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, দীর্ঘদিনের শিক্ষক-সহপাঠীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এছাড়া পিএমই বিভাগ পরিবার, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর, যবিপ্রবি ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও তাঁর অকাল প্রয়াণে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। এদিকে, ফারজানা আক্তার সুমি নিহত হওয়ার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে।এ সময় ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়।

দাবিগুলো হলো দুর্ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের এককোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, চুড়ামনকাটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক নিরাপদ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া, আমবটতলাবাজার থেকে বেলতলা পর্যন্ত ফুটপাত নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কমপক্ষে ৪ টি স্পীড ব্রেকার দেয়া, গতিসীমা-নির্ধারক সাইনবোর্ড দেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চার লেন উত্তীর্ণকরন। প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আফিকুর রহমান অয়ন বলেন, রাস্তায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বন্ধু, ছোট ভাই এই বেপরোয়া যানবাহনের জন্য মারা গেছে। আজকে আমাদের এক বোন চলে গেলো, আমরা চাইনা আর কাউকে হারাতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিপূর্বে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পক্ষ কে অবহিত করলেও তারা অবহেলা করেছে। আমাদের সকল দাবী মেনে না নিলে যশোর চুড়ামনকাটি সড়ক অবরোধ করে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। সেই সাথে নিভে যাচ্ছে অনেক পরিবারের স্বপ্ন। গত ডিসেম্বর মাসে জেলায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন বছরের প্রথম দিনে তিন জন মারা গেলেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয়

দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ আরও দুই জন

আপডেট সময় ০১:৫৬:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩

দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন জোহরা বেগম (৫৫)। রোববার স্বামীর সাথে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন যশোর শহরের স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মোটরচালিত ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বিকেল ৩ টা ৫০ মিনিটে যশোর-চৌগাছা সড়কের সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি দাসপাড়ার রেলক্রসিংয়ের পাশে শহিদুল ইসলামের ইটভাটার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় জোহরা বেগমের। তিনি চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী।

মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীসহ আরও দুই জন। তারা হলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সিধলীয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার মিজানুর রহমানের মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি (২২) ও বাগডাঙ্গা সরদার পাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে ভ্যানচালক মাসুম বিল্লাহ (৩০)। নতুন বছরের প্রথম দিনে তিন জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দুই জন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন আহতরা হলেন, যবিপ্রবির মাস্টার্স বর্ষের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোতাসিন বিল্লাহ (২৪) ও নিহত জোহরার স্বামী আমজেদ আলী (৬৫)। ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করেছে পুলিশ। হতাহত ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ সময় ৭ দফা দাবি পেশ করে তারা।

আহত আমজাদ হোসেন জানান, চুড়ামনকাটি বাজার থেকে মোটরচালিত ভ্যানে চড়ে বেলতলার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। ভ্যানে তারা স্বামী-স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ মোট ৫ জন যাত্রী ছিলেন। পথিমধ্যে শহিদুল ইসলামের ইটভাটার সামনে পৌঁছালে সামনে থেকে আসা বিএডিসির (যশোর-ট ১৩৯৪) একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার স্ত্রী জোহরা বেগমসহ তিন জন মারা যান। আরও দুইজন গুরুতর আহত হন। নিহত জোহরার স্বজন আজমিনুর রহমান জানান, তার মামি জোহরা ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।  নিহত সুমির ভাই আলিনুর রহমান জানান, তার বোন ফারজানা আক্তার সুমি ছোট বেলা থেকেই মেধাবি। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু দেখা স্বপ্ন সড়কে মিশে গেলো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান,  শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার সুমি ও মোতাসিন বিল্লাহ ভ্যানে চড়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে আসছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সুমি মারা গেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাক চাপায় ভ্যানটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। নিহতদের শরীরের মাংস ও মাথার অংশ সড়কের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে আসেন নিহতদের পরিবারের সদস্য ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যে নিহতের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর্তনাদ ও আহজারিতে হাসপাতাল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপ পরিচালক আজিজুল হক জানান, দুর্ঘটনাটি ছিলো ভয়াবহ। খবর পাওয়ার সাথেই ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই সেলিম হোসেন জানান, ঘাতক ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। চালক হাফিজুর রহমান মিঠুকে আটক করা হয়েছে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ফারজানা আক্তার সুমির মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, পিএমই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার সুমির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। এক শোক বাণীতে অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সুমির দুর্ঘটনার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। একই সময়ে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের আরও একজন শিক্ষার্থী মুতাসিন বিল্লাহ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তাঁর আশু সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসলে সড়ক দুর্ঘটনা যবিপ্রবির বেশ কয়েক জন মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল প্রয়াণ হয়েছে অথবা মারাত্মক আহত হয়ে তাঁরা চিকিৎসা নিয়েছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো যাবে না।

শোক বার্তায় তিনি আরও বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার কাছে সন্তানসম। সড়ক দুর্ঘটনায় বলি হয়ে আমার সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। তাঁকে হারিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবারের প্রতিটি সদস্য আজকে গভীরভাবে শোকাহত। আমি ফারজানা আক্তার সুমির রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন, দীর্ঘদিনের শিক্ষক-সহপাঠীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এছাড়া পিএমই বিভাগ পরিবার, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর, যবিপ্রবি ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও তাঁর অকাল প্রয়াণে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। এদিকে, ফারজানা আক্তার সুমি নিহত হওয়ার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে।এ সময় ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়।

দাবিগুলো হলো দুর্ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের এককোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, চুড়ামনকাটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়ক নিরাপদ রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া, আমবটতলাবাজার থেকে বেলতলা পর্যন্ত ফুটপাত নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কমপক্ষে ৪ টি স্পীড ব্রেকার দেয়া, গতিসীমা-নির্ধারক সাইনবোর্ড দেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চার লেন উত্তীর্ণকরন। প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আফিকুর রহমান অয়ন বলেন, রাস্তায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বন্ধু, ছোট ভাই এই বেপরোয়া যানবাহনের জন্য মারা গেছে। আজকে আমাদের এক বোন চলে গেলো, আমরা চাইনা আর কাউকে হারাতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিপূর্বে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ পক্ষ কে অবহিত করলেও তারা অবহেলা করেছে। আমাদের সকল দাবী মেনে না নিলে যশোর চুড়ামনকাটি সড়ক অবরোধ করে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। সেই সাথে নিভে যাচ্ছে অনেক পরিবারের স্বপ্ন। গত ডিসেম্বর মাসে জেলায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন বছরের প্রথম দিনে তিন জন মারা গেলেন।