কয়েকদিন বাদেই আসতে যাচ্ছে নতুন বছর। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে ছিল ব্যাপক উত্থান-পতন। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে ভালো না হলেও ওয়ানডে ফরম্যাটে টাইগাররা এ বছর প্রমাণ করেছে নিজেদের শক্তিমত্তার সবটুকু। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওদের মাঠে হারানোর পর ভারতের মতো পরাশক্তিকে ২০২২ সালে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দর্শকদের হতাশ করেছে টাইগাররা। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং দ্বিপাক্ষিক সিরিজে নজরকাড়া পারফরম্যান্স নেই বললেই চলে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশ দলের পারফর্মম্যান্স –
টেস্ট ক্রিকেটে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে টাইগাররা। এরপর সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-০, শ্রীলঙ্কার কাছে ১-০ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে বছরের শেষটাও হয়েছে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরে।
টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও দারুণভাবে শুরু করেছিল টাইগাররা। তবে টেস্টে ধাবাহিকতা বজায় না থাকলেও ওয়ানডেতে সেটা ভালোভাবেই ছিল। ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল তামিম ইকবালের দল। এরপর মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই ডি ককদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষ ওদের মাটিতেই ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে টাইগাররা। তবে জিম্বাবুয়ের মাটিতে জুলাই-আগস্টে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারে তামিম ইকবালের দল। অবশ্য বছরের শেষে ভারতের মতো দলকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে বছরটা রাঙিয়েই শেষ করে লাল-সবুজের দল।
এদিকে ওয়ানডেতে রঙিন থাকলেও বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টিতে ছিল টেস্টের মতোই হতশ্রী। বছরের শুরুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে টাইগাররা। এরপর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ২-০ তে সিরিজ হার। এরপর দেশের বাইরে সিরিজে আবারও হার, জুলাই-আগস্টে জিম্বাবুয়ের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত দুবাইতে এশিয়া কাপেও ভরাডুবি হয় টাইগারদের। আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। ফলে সুপার ফোরের খেলা থেকে বঞ্চিত হয় সাকিব আল হাসানের দল। এরপর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অক্টোবরে ত্রিদেশীয় সিরিজ মাঠে গড়ায়। সেখানে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা ৪ পরাজয় বরণ করে সাকিব আল হাসানের দল। ফলে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয় টাইগারদের।
বছরের সবশেষ আলোচিত টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে দলে সুযোগ পাননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এছাড়া এশিয়া কাপ ব্যর্থতার পরই ছোট ফরম্যাট থেকে অবসর নেন মুশফিকুর রহিম। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পেয়েছে। সাকিবওদের হারতে হয়েছে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পয়েন্ট টেবিলে পিছিয়ে থাকায় গ্রুপ পর্ব থেকেই ঢাকার বিমান ধরতে হয় টাইগারদের।
২০২২ সালে সব ফরম্যাট মিলিয়ে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস। করেছেন ১৯২১ রান। এমনকি টাইগারদের হয়ে তিন আলাদা ফরম্যাটেও সেরা রান সংগ্রাহক এই লিটনই। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২২ সালের লিটননামা-
২০২২ সালে টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস। ১০ ম্যাচের ১৮ ইনিংস খেলে করেছেন ৮০০ রান। গড় ৪৪, স্ট্রাইক রেট ৪৩। চার মেরেছেন ৯৮টি আর ছক্কা ৩ টি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪১ রানের।
২০২২ সালে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায়ও সবার উপরে লিটন দাস। ১৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে করেছেন ৫৭৭ রান। গড় ৭৭ এর সঙ্গে স্ট্রাইক রেট ৮৩। চার মেরেছেন ৬৭ টি, ছক্কা মেরেছেন ৭টি। সর্বোচ্চ রানের স্কোর ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের।
২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস। ১৯ ম্যাচ খেলে এই তারকা ব্যাটার সংগ্রহ করেছেন ৫৪৪ রান। গড় ২৯, স্ট্রাইক রেট ছিল টি-টোয়েন্টির সঙ্গে বেশ মানানসই ১৪০। ৫৭ টি চারের সঙ্গে ১৬ ছক্কা হাঁকিয়েছেন লিটন। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৬৯, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
২০২২ সালে সব ফরম্যাট মিলিয়ে দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক মেহেদী হাসান মিরাজ। সবমিলিয়ে ২৯ ম্যাচ খেলে এই অলরাউন্ডারের সংগ্রহ ৫৯ উইকেট।
ওয়ানডে দলের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৪ উইকেট। রান দিয়েছেন ৬৭৭, বল ৭৪৬টি। প্রতি ২৮ বল অন্তর নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। টেস্টে মিরাজ উইকেট নিয়েছেন ৩১টি, ম্যাচ খেলেছন ৮টি। ২০৬১ টি বল করে দিয়েছেন ১০৩০ রান। প্রতি ৩৩ বল অন্তর নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
এদিকে টি-টোয়েন্টিতে দলের হয়ে মিরাজ খেলেছেন ৬ ম্যাচ। উইকেট নিয়েছেন ৪টি, রান দিয়েছেন ৯৬। প্রতি ২৪ বল অন্তর নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। এছাড়া ২০২২ সালে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।