ঢাকা ০৮:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ফাইনালে ফ্রান্স, মরক্কো রূপকথার সমাপ্তি

অঘটনের কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক ছিল মরক্কো। বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালের মতো তিন ইউরোপীয় পরাশক্তিকে হারানো দলটি উঠে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। আরব ও  আফ্রিকান ফুটবলের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া দলটি চোখ রেখেছিল ফাইনালেও। কিন্তু ফরাসি বাধা পেরোতে পারেনি তারা। কাতার বিশ্বকাপে শেষ হলো মরক্কো রূপকথার। উড়তে থাকা মরক্কোকে মাটিতে নামিয়ে আনলো ফ্রান্স। 

আটলাস লায়ন্সদের ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ফরাসিরা। গোল দুটো করেছেন থিও হার্নান্দেজ ও কলো মুয়ানি।  আগামী রবিবারের ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হয় ফ্রান্সের। পাঁচ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় তারা। আন্তোনিও গ্রিজম্যানের উদ্দেশে দুর্দান্ত বল বাড়ান রাফায়েল ভারান। গ্রিজম্যান একটু সামনে এগিয়ে বল পাস বাড়ান সামনে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। এমবাপ্পে দুবার গোলের উদ্দেশে শট মারলেও তা আটকে যায়। শেষ বার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা চলে যায় বাঁ দিকে থাকা থিও হার্নান্দেজের দিকে। মরক্কোর ডিফেন্ডাররা ততক্ষণে এক দিকে সরে এসেছেন। উল্টো দিকে থাকা থিও কিছুটা লাফিয়ে বাঁ পায়ের সাইড ভলিতে বল জালে জড়ান। ১৯৫৮ সালের পর বিশ্বকাপের কোনও সেমিফাইনালে দ্রুততম গোল এটি।

১০ মিনিটের মাথাতেই সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। বক্সের বাইরে ডান দিক থেকে শট করেছিলেন আজ এদিন ওউনাহি। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত ঠেকিয়ে কোনও ফ্রান্সকে বাঁচান হুগো লরিস।

১৭ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসে গিয়েছিল ফ্রান্সের সামনে। মাঝমাঠ থেকে বল ভেসে এসেছিল অলিভিয়ের জিরুদের উদ্দেশে। তিনি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারেন। পোস্টে লেগে তা মাঠের বাইরে চলে যায়। তবে গোলে থাকলে ইয়াসিন বোনোর কিছু করার ছিল না।

৩৫ মিনিটের মাথায় আবার এগিয়ে যেতে পারতো ফ্রান্স। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে এনে এমবাপ্পেকে পাস দিয়েছিলেন চুয়ামেনি। এমবাপ্পে বল রিসিভ করলেও শট করার আগে নিজেকে সামলাতে পারেননি। পড়ে যেতে যেতে শট নেন। এক ডিফেন্ডার এসে তা ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর হার্নান্দেজ বল পান। তিনি পাস দেন জিরুদকে। চলতি বলে শট নিলেও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।

৪৪ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ এসেছিল মরক্কোর কাছে। হাকিম জিয়েচের কর্নার ফ্রান্সের রক্ষণ ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর ব্যাক ভলি মেরেছিলেন মরক্কোর জাওয়াদ এল ইয়ামিক। তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ করছিল ফ্রান্স। একের পর এক আক্রমণ চালায় গ্রিজম্যান এমবাপ্পেরা। তবে গোলের দেখা মিলছিল না। পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছিল মরক্কোও। বেশ কয়েকবার ফরাসি রক্ষণ কাঁপিয়েও দেয় তারা তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাচ্ছিল না।

৭৫ মিনিটের মাথায় দারুণ সুযোগ পায় মরক্কো। চুয়ামেনির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হামিদাল্লাহ। ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা তখনও কেউ নিজের পজিশনে ছিলেন না। কিন্তু শট নেওয়ার বদলে বক্সের মধ্যে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পা থেকে বল কেড়ে নেন ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে লিড ২-০ করেন কলো মুয়ানি। এবারেও সেই এমবাপ্পের প্রচেষ্টা থেকেই গোল। বক্সের মাঝখান থেকে বল পেয়েছিলেন চুয়ামেনি। তিনি পাস দেন এমবাপ্পেকে। দু-তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পায়ের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন এমবাপ্পে। বল মরক্কোর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে সোজা চলে যায় ডান দিকে দাঁড়ানো মুয়ানির কাছে। অনায়ায়ে বল জালে জড়ান তিনি। ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ম্যাচে শট সংখ্যা প্রায় সমান পেয়েছে দুই দলই। যার মধ্যে ফ্রান্সের ছিল ১৪টি, মরক্কোর ১৩। লক্ষ্যে শট ছিল সমান সমান; ৩টা করে। যদিও পুরো ম্যাচে বল দখলে এগিয়ে ছিল মরক্কো; ৬২ শতাংশ। ৫৭২টি পাস দিয়ে এগিয়ে ছিল আফ্রিকার প্রতিনিধিরাই। অন্যদিকে গত বছরের চ্যাম্পিয়নরা পাস দিয়েছে ৩৬৪টি।

দুই দলই প্রায় সমান সংখ্যক ফাউল করেছে (ফ্রান্স ১০, মরক্কো ১১), যেখানে ম্যাচের একমাত্র হলুদ কার্ডটি দেখেছেন মরক্কোর খেলোয়াড়। অফসাইড হয়েছে ফ্রান্সের ৪টি, মরক্কোর ৩টি। আর কর্নার একটি কম পেয়েছিল আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফাইনালে যাওয়া ফ্রান্স (তিনটি)।

এই হারে থামলো মরক্কো রূপকথা। তাতে অবশ্য দুঃখ থাকার কথা নয় মরোক্কানদের। ম্যাচ শেষ পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছে জিয়েচ-হাকিমিদের। তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত আসবেন তাই বা কে ভেবেছিল!

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন

ফাইনালে ফ্রান্স, মরক্কো রূপকথার সমাপ্তি

আপডেট সময় ০৯:৫১:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

অঘটনের কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক ছিল মরক্কো। বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালের মতো তিন ইউরোপীয় পরাশক্তিকে হারানো দলটি উঠে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। আরব ও  আফ্রিকান ফুটবলের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া দলটি চোখ রেখেছিল ফাইনালেও। কিন্তু ফরাসি বাধা পেরোতে পারেনি তারা। কাতার বিশ্বকাপে শেষ হলো মরক্কো রূপকথার। উড়তে থাকা মরক্কোকে মাটিতে নামিয়ে আনলো ফ্রান্স। 

আটলাস লায়ন্সদের ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ফরাসিরা। গোল দুটো করেছেন থিও হার্নান্দেজ ও কলো মুয়ানি।  আগামী রবিবারের ফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হয় ফ্রান্সের। পাঁচ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় তারা। আন্তোনিও গ্রিজম্যানের উদ্দেশে দুর্দান্ত বল বাড়ান রাফায়েল ভারান। গ্রিজম্যান একটু সামনে এগিয়ে বল পাস বাড়ান সামনে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। এমবাপ্পে দুবার গোলের উদ্দেশে শট মারলেও তা আটকে যায়। শেষ বার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে তা চলে যায় বাঁ দিকে থাকা থিও হার্নান্দেজের দিকে। মরক্কোর ডিফেন্ডাররা ততক্ষণে এক দিকে সরে এসেছেন। উল্টো দিকে থাকা থিও কিছুটা লাফিয়ে বাঁ পায়ের সাইড ভলিতে বল জালে জড়ান। ১৯৫৮ সালের পর বিশ্বকাপের কোনও সেমিফাইনালে দ্রুততম গোল এটি।

১০ মিনিটের মাথাতেই সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। বক্সের বাইরে ডান দিক থেকে শট করেছিলেন আজ এদিন ওউনাহি। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত ঠেকিয়ে কোনও ফ্রান্সকে বাঁচান হুগো লরিস।

১৭ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসে গিয়েছিল ফ্রান্সের সামনে। মাঝমাঠ থেকে বল ভেসে এসেছিল অলিভিয়ের জিরুদের উদ্দেশে। তিনি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারেন। পোস্টে লেগে তা মাঠের বাইরে চলে যায়। তবে গোলে থাকলে ইয়াসিন বোনোর কিছু করার ছিল না।

৩৫ মিনিটের মাথায় আবার এগিয়ে যেতে পারতো ফ্রান্স। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে এনে এমবাপ্পেকে পাস দিয়েছিলেন চুয়ামেনি। এমবাপ্পে বল রিসিভ করলেও শট করার আগে নিজেকে সামলাতে পারেননি। পড়ে যেতে যেতে শট নেন। এক ডিফেন্ডার এসে তা ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর হার্নান্দেজ বল পান। তিনি পাস দেন জিরুদকে। চলতি বলে শট নিলেও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।

৪৪ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ এসেছিল মরক্কোর কাছে। হাকিম জিয়েচের কর্নার ফ্রান্সের রক্ষণ ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর ব্যাক ভলি মেরেছিলেন মরক্কোর জাওয়াদ এল ইয়ামিক। তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ করছিল ফ্রান্স। একের পর এক আক্রমণ চালায় গ্রিজম্যান এমবাপ্পেরা। তবে গোলের দেখা মিলছিল না। পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছিল মরক্কোও। বেশ কয়েকবার ফরাসি রক্ষণ কাঁপিয়েও দেয় তারা তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাচ্ছিল না।

৭৫ মিনিটের মাথায় দারুণ সুযোগ পায় মরক্কো। চুয়ামেনির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হামিদাল্লাহ। ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা তখনও কেউ নিজের পজিশনে ছিলেন না। কিন্তু শট নেওয়ার বদলে বক্সের মধ্যে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পা থেকে বল কেড়ে নেন ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে লিড ২-০ করেন কলো মুয়ানি। এবারেও সেই এমবাপ্পের প্রচেষ্টা থেকেই গোল। বক্সের মাঝখান থেকে বল পেয়েছিলেন চুয়ামেনি। তিনি পাস দেন এমবাপ্পেকে। দু-তিন জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পায়ের জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন এমবাপ্পে। বল মরক্কোর এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে সোজা চলে যায় ডান দিকে দাঁড়ানো মুয়ানির কাছে। অনায়ায়ে বল জালে জড়ান তিনি। ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ম্যাচে শট সংখ্যা প্রায় সমান পেয়েছে দুই দলই। যার মধ্যে ফ্রান্সের ছিল ১৪টি, মরক্কোর ১৩। লক্ষ্যে শট ছিল সমান সমান; ৩টা করে। যদিও পুরো ম্যাচে বল দখলে এগিয়ে ছিল মরক্কো; ৬২ শতাংশ। ৫৭২টি পাস দিয়ে এগিয়ে ছিল আফ্রিকার প্রতিনিধিরাই। অন্যদিকে গত বছরের চ্যাম্পিয়নরা পাস দিয়েছে ৩৬৪টি।

দুই দলই প্রায় সমান সংখ্যক ফাউল করেছে (ফ্রান্স ১০, মরক্কো ১১), যেখানে ম্যাচের একমাত্র হলুদ কার্ডটি দেখেছেন মরক্কোর খেলোয়াড়। অফসাইড হয়েছে ফ্রান্সের ৪টি, মরক্কোর ৩টি। আর কর্নার একটি কম পেয়েছিল আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফাইনালে যাওয়া ফ্রান্স (তিনটি)।

এই হারে থামলো মরক্কো রূপকথা। তাতে অবশ্য দুঃখ থাকার কথা নয় মরোক্কানদের। ম্যাচ শেষ পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছে জিয়েচ-হাকিমিদের। তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত আসবেন তাই বা কে ভেবেছিল!