এই মুহূর্তে মিশরীয় তরুণ মোহাম্মদ সালাহ’র কথা বেশ মনে পড়ছে। তিনি খুব করে চাইছিলেন, কাতার বিশ্বকাপে মরক্কো যেন ফাইনালে জায়গা করে নেয়। ফ্রান্সকে হারিয়ে নতুন করে ইতিহাস রচিত হয়। আফ্রিকান কিংবা অনেক দিক দিয়ে আরব বিশ্বের কাছাকাছি থাকা প্রায় সবারই চাওয়া ছিল এটা।
মরক্কোর ছুটে চলা সেই স্বপ্নও দেখাচ্ছিল; কিন্তু সব স্বপ্ন তো সবসময় সত্যি হয় না! স্বপ্ন যাত্রারও শেষ আছে, মরক্কোর বেলাতেও তাই হয়েছে। দুরন্ত ফুটবল খেলে আসা দলটির গতিপথ থেমে গেলো গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে এসে। অনেক আশা-প্রত্যাশা নিয়ে আল বায়েত স্টেডিয়ামে মরক্কোনরা দারুণ খেললেও আদতে জয় হয়েছে অভিজ্ঞতায় ভরপুর দিদিয়ের দেশমের দলটির।
শুধু সালেহ নন, স্টেডিয়ামে আসা অসংখ্য লাল জার্সিধারী সমর্থকের উচ্ছ্বাস থেমে গেছে এক বিন্দুতে এসেছে। আজ যেখানে কাতারে উৎসব হতো, রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে যেতো উৎসবের রেণু; সেখানে কিনা এখন কেবলই বিষাদের ছোঁয়া। মরক্কো ছাড়াও তাদের সঙ্গে আরব কিংবা আফ্রিকার দেশগুলোরও বাধভাঙা আনন্দ দেখার সুযোগ মিললো না।
এই বিশ্বকাপের শুরু থেকে অবশ্য ফেভারিটের তালিকাতেই ছিল না মরক্কো। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকেই তারা নিজেদের চিনিয়েছে একটু একটু করে। ওয়ালিদ রেগরাগুই যেভাবে দলের খোলনলচে পাল্টে দিয়েছিলেন, তাতে করে ফুটবলবোদ্ধাদের দৃষ্টি নিজেদের দিকে কাড়তে বাধ্য করেছিলেন, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে। হারলেও মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছে মরক্কো। অপ্রত্যাশিতভাবে এতদূর এসে এই হারে নিশ্চয়ই কোনও গ্লানি নেই!
বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছিল প্রায় ৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটি। প্রত্যাশা ছিল সাবেক ঔপনিবেশিক ফ্রান্সকে আটকে দিয়ে ফাইনালের স্বপ্নটা বাস্তবায়িত করার। কিন্তু এর জন্য তো মাঠে খেলতে হবে। দুরন্ত গতির ফুটবল ঠিকই উপহার দিয়েছে মরোক্কানরা। বল দখলে এগিয়ে থেকে প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোড়ানোর চেষ্টাও করেছে। তবে ফ্রান্সের স্কিল ও অভিজ্ঞতার কাছে মার খেয়েছে। ফ্রান্স সুযোগ বুঝে দুই অর্ধে একটি গোল করে ঠিকই নিজেদের কাজটি সেরে রেখেছে। আর মরক্কো প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে একের পর এক আক্রমণ গড়ে কোনও সময় ফিনিশিং দুর্বলতা কিংবা প্রতিপক্ষের বাধায় ফাইনাল স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
ওয়ালিদ রেগরাগুই শুরু থেকে তার দলকে আক্রমণাত্মক কৌশলে খেলতে শুরু করেন। মরক্কোর দুরন্ত ফুটবলের বিপক্ষে আগে থেকে সাবধানি দিদিয়ের দেশম। তাই বিপরীতে রক্ষণ আটসাট করে দেখে শুনে নিজেদের খেলাটা খেলেছে এমবাপ্পে-গ্রিজমানরা। তাই তো ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিটে ফসল তুলে নেয় ফ্রান্স। হার্নান্দেজ কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন। গোল খেয়ে মরক্কো গতির ফুটবলে ভাটা পড়েনি। বরং বার বার গিয়েও সমতায় ফিরতে পারছিল না।
৪৫ মিনিটে এই ইয়ামিকের বাইসাইকেল কিক পোস্টে লেগে ফিরে আসলে হতাশ হতে হয় মরক্কোনদের। বিরতির পরও একই গতিতে খেলতে থাকে হাকিম জিয়েসরা। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। বরং ৭৯ মিনিটে বদলি নেমে কোলো মুয়ানি দ্বিতীয় গোল করে মরক্কোনদের ম্যাচ থেকে বলতে গেলে ছিটকে দেন। মরক্কো তখনও হতোদ্যম হয়নি। কিন্তু হয়তো তাদের ভাগ্যে এদিন কোনও গোলই সৃষ্টিকর্তা লিখে রাখেননি। যোগ করা সময়ে তাদের একটি প্রচেষ্টা এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করে তাদের চূড়ান্ত হতাশা উপহার দিয়েছেন।
আল বায়েত স্টেডিয়ামে মরক্কোনদের স্বপ্নভঙ্গে ফ্রান্স টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলছে। এই কাতারে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি মরক্কোনদের। তবে ২০২৬ সালে নিশ্চয়ই আরও শক্তিশালী ও পরিপক্ক হয়ে ফিরবে আফ্রিকার দেশটি। এমন প্রত্যাশা তো সমর্থকরা করতেই পারেন।