ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
হজ্জ ব্যবস্থাপনা ২০২৫ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নাটোরে বড়াইগ্রাম আ’লীগ কর্মীর বাড়িতে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রিজভী কুমিল্লা সীমান্তে বিজিবির হাতে কোটি টাকার ইয়াবা আটক কুমিল্লায় জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ছাত্রশিবিরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঢাকা উত্তরের ট্যাক্স সুপারভাইজার যেভাবে ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন— তার একটি ঘটনা বোরহানউদ্দিনে খাল পরিস্কার – পরিচ্ছন্নতার অভিযানের উদ্বোধন ছাত্র জনতাকে অভিবাদন জানিয়ে যে বার্তা দিলেন মাহফুজ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি আইনজীবীদের মিরপুরে শহীদ পরিবারের পাশে, তারেক রহমান মুরাদনগরে যৌথবাহিনির অভিযানে নগদ অর্থ ও ৩৭৫০ পিস ইয়াবাসহ নারী-পুরুষ আটক

ব্রাজিলে খেলার দিনে ছুটির আমেজ, ড্রাম-বাঁশির ছন্দে চলে উদযাপন

পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের গর্ব করার অনেক কিছুই আছে; অপূর্ব সুন্দর আটলান্টিকের পাশের অসংখ্য বিচ, বিশাল অ্যামাজন, সমৃদ্ধ কৃষি, চমৎকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু গোটা পৃথিবীতে ব্রাজিল দেশটার পরিচিতির মূল কারণ যে ফুটবল তা আর বলার অবকাশ রাখে না। যেখান থেকে পেলে, গারিঞ্চা, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহোর মতো সর্বকালের সেরা ফুটবলাররা এসেছে তাদের পরিচিতি ফুটবল না হওয়ারও কারণ নেই আসলে। তাই বিশ্বের কাছে ব্রাজিলের দেশটির সমার্থক শব্দই ফুটবল।

এমন একটি দেশে বিশ্বকাপের সময়টা অন্যরকম হবে এটা অনুমেয়ই। বরাবরের মতো এবারও তারা ফেভারিট হিসেবেই বিশ্বকাপ শুরু করেছে এবং ব্রাজিলের মানুষের সাথে কথা বললে মনে হবে দু একজনও নেই যারা বিশ্বাস করে নেইমারের দল এবার বিশ্বকাপ ঘরে আনবে না। আর তাদের বিশ্বাসই সম্ভবত তাদের উদযাপনের কারণ। তারা খেলার জয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। খেলা মানেই তাদের কাছে উৎসব। জয়ের পরে শুধুমাত্র মাত্রাটা আরেকটু বাড়ে এই যা!

ব্রাজিলে ঠিক ম্যাচ শুরু হওয়ার আগের সময়টা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। সবাই দৌড়াচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবার পৌঁছুতে হবে যার যেখানে খেলা দেখার পরিকল্পনা। আর কিছুক্ষণ পর রাস্তা গুলো পুরো খালি হয়ে যাবে। ওই সময়টা মেট্রোতে বা যেকোন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ওঠা এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও বটে। তবুও মেট্রো স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভীড় দেখে বোঝাই যায় সবাই হাসিমুখে এই কষ্টটা করতে ইচ্ছুক কারণ ম্যাচ দেখার মতই উদযাপনটাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত খেলার দিনগুলোতে জরুরি সেবা বাদে বেশিরভাগ অফিস সহ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে ব্রাজিলে। খেলার ঘন্টা খানেক আগে বার গুলো বাদে বেশিরভাগ দোকানপাট ও বন্ধ হয়ে যায়। তাই খেলার দিনের উৎসব সেই সকাল থেকে শুরু হয়ে চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ব্রাজিলের সুন্দরীরা নানা রঙের সাজে আর পোশাকে তাতে বাড়তি রং দেয়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরই উদযাপনের মাত্রা খানিকটা বেশি বলে খোলা চোখে মনে হয়।

তবে ব্রাজিলের ফুটবল উন্মাদনার কথা বলতে হলে আলাদা করে ব্রাজিলের ফ্যাভেলা গুলার কথা অবশ্যই বলতে হবে। এই ফ্যাভেলা গুলোর থেকেই যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবী এক একজন ফুটবল জাদুকরকে পেয়ে আসছে। ব্রাজিলে খেলার দিন বাদে সকল উন্মাদনা এই জায়গা গুলোতেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। হলুদ সবুজ উজ্জ্বল কাগজে রাস্তার উপরের আকাশটা সাজানো থাকে প্রায়  সকল ফ্যাভেলাতেই। রাস্তা গুলো বা দেয়ালগুলোতে আঁকা থাকে তাদের ফুটবলের অসংখ্য জাদুকরের কোন একজনের শৈল্পীক মূহুর্ত অথবা দেশের পতাকা।

একটা খুব সাধারণ কৌতুহল সবার মতো আমারও ছিল, একটা দেশ থেকে ফুটবলের এতো প্রতিভা কেন উঠে আসে? কেন তারা কৈশর পার হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী এতো পরিচিতি পেয়ে যায়? সেই ফুটবল ইশ্বর পেলে হতে শুরু করে হালের এন্ডরিক সবাইই তার উদাহারণ হয়ে আছে। ব্রাজিলের কোন একটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, বা কোন পার্কে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটা খেলা দেখলেই তার উত্তর পেয়ে যাবে যে কেউ। ফুটসালে সাধারণ ব্রাজিলিয়ানদেরই যে দক্ষতা তাতে আর অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। আর ফ্যাবেলা-তে গিয়ে একটি খেলা দেখলে হয়তো আমাদেরকে প্রায় সবার “ড্রিবলিং” মুগ্ধ করবে।

ফুটবলে তাদের যে শ্রেষ্টত্ব তারা সেটা নিয়ে যেমন গর্ব করে; তেমনি ভাবে তারা ফুটবলকে মন থেকে ধারণ ও করে। ব্রাজিলিয়ানরা নিজেরা হরহামেশাই সেগুলো বলেও থাকে। কথায় কথায় “ফিফা ফ্যান ফেস্টে” আসা এক ব্রাজিলিয়ান বলছিল, “আমাদের সকল গর্বের জায়গা তো এই ফুটবল। তাই ফুটবলই আমাদের কাছে সবকিছুর উপরে। এটা দিয়েই আমরা একত্রিত হই, আনন্দ করি। তাই বিশ্বকাপের সময়টা আমরা সবকিছু ভুলে যাই শুধু ফুটবল ছাড়া।”

তবে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো এখানে কিন্তু ঠিক সেই আমেজটা লক্ষ করা যায় না। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে বড়জোর কিছু পতাকা থাকে, কেউ বা গাড়ির সামনে পতাকা টানাচ্ছে আর জার্সি সব সময়ই আছে। তবে আমাদের দেশের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে পাগলামির কথা বা বিশাল ব্রাজিলিয়ান সাপোর্টারদের কথা অনেক অধ্যাপক বা শিক্ষার্থীরই ধারণা রয়েছে।

তবে এই ফুটবল পাগল দেশের মানুষগুলো অসম্ভব ভাল। তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বাইরের যে কেউই মুগ্ধ হবে এই দেশটাতে আসলে। তারা আনন্দ করতে পছন্দ করে, পার্টি করতে কোন ক্লান্তি নেই, উৎসব করতে সবসময় প্রস্তুত। আর আনন্দপ্রিয় এই জাতির জন্য ফুটবলটা তাই আশির্বাদ স্বরূপ। তাদের দেশ জিতবে এটা তারা শুধুমাত্র আশা করে না, বিশ্বাস করে মন থেকে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হজ্জ ব্যবস্থাপনা ২০২৫ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্রাজিলে খেলার দিনে ছুটির আমেজ, ড্রাম-বাঁশির ছন্দে চলে উদযাপন

আপডেট সময় ০৬:১৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের গর্ব করার অনেক কিছুই আছে; অপূর্ব সুন্দর আটলান্টিকের পাশের অসংখ্য বিচ, বিশাল অ্যামাজন, সমৃদ্ধ কৃষি, চমৎকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু গোটা পৃথিবীতে ব্রাজিল দেশটার পরিচিতির মূল কারণ যে ফুটবল তা আর বলার অবকাশ রাখে না। যেখান থেকে পেলে, গারিঞ্চা, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহোর মতো সর্বকালের সেরা ফুটবলাররা এসেছে তাদের পরিচিতি ফুটবল না হওয়ারও কারণ নেই আসলে। তাই বিশ্বের কাছে ব্রাজিলের দেশটির সমার্থক শব্দই ফুটবল।

এমন একটি দেশে বিশ্বকাপের সময়টা অন্যরকম হবে এটা অনুমেয়ই। বরাবরের মতো এবারও তারা ফেভারিট হিসেবেই বিশ্বকাপ শুরু করেছে এবং ব্রাজিলের মানুষের সাথে কথা বললে মনে হবে দু একজনও নেই যারা বিশ্বাস করে নেইমারের দল এবার বিশ্বকাপ ঘরে আনবে না। আর তাদের বিশ্বাসই সম্ভবত তাদের উদযাপনের কারণ। তারা খেলার জয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। খেলা মানেই তাদের কাছে উৎসব। জয়ের পরে শুধুমাত্র মাত্রাটা আরেকটু বাড়ে এই যা!

ব্রাজিলে ঠিক ম্যাচ শুরু হওয়ার আগের সময়টা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর। সবাই দৌড়াচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবার পৌঁছুতে হবে যার যেখানে খেলা দেখার পরিকল্পনা। আর কিছুক্ষণ পর রাস্তা গুলো পুরো খালি হয়ে যাবে। ওই সময়টা মেট্রোতে বা যেকোন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ওঠা এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও বটে। তবুও মেট্রো স্টেশনগুলোতে উপচে পড়া ভীড় দেখে বোঝাই যায় সবাই হাসিমুখে এই কষ্টটা করতে ইচ্ছুক কারণ ম্যাচ দেখার মতই উদযাপনটাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত খেলার দিনগুলোতে জরুরি সেবা বাদে বেশিরভাগ অফিস সহ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে ব্রাজিলে। খেলার ঘন্টা খানেক আগে বার গুলো বাদে বেশিরভাগ দোকানপাট ও বন্ধ হয়ে যায়। তাই খেলার দিনের উৎসব সেই সকাল থেকে শুরু হয়ে চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ব্রাজিলের সুন্দরীরা নানা রঙের সাজে আর পোশাকে তাতে বাড়তি রং দেয়। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরই উদযাপনের মাত্রা খানিকটা বেশি বলে খোলা চোখে মনে হয়।

তবে ব্রাজিলের ফুটবল উন্মাদনার কথা বলতে হলে আলাদা করে ব্রাজিলের ফ্যাভেলা গুলার কথা অবশ্যই বলতে হবে। এই ফ্যাভেলা গুলোর থেকেই যুগের পর যুগ ধরে পৃথিবী এক একজন ফুটবল জাদুকরকে পেয়ে আসছে। ব্রাজিলে খেলার দিন বাদে সকল উন্মাদনা এই জায়গা গুলোতেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। হলুদ সবুজ উজ্জ্বল কাগজে রাস্তার উপরের আকাশটা সাজানো থাকে প্রায়  সকল ফ্যাভেলাতেই। রাস্তা গুলো বা দেয়ালগুলোতে আঁকা থাকে তাদের ফুটবলের অসংখ্য জাদুকরের কোন একজনের শৈল্পীক মূহুর্ত অথবা দেশের পতাকা।

একটা খুব সাধারণ কৌতুহল সবার মতো আমারও ছিল, একটা দেশ থেকে ফুটবলের এতো প্রতিভা কেন উঠে আসে? কেন তারা কৈশর পার হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী এতো পরিচিতি পেয়ে যায়? সেই ফুটবল ইশ্বর পেলে হতে শুরু করে হালের এন্ডরিক সবাইই তার উদাহারণ হয়ে আছে। ব্রাজিলের কোন একটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, বা কোন পার্কে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটা খেলা দেখলেই তার উত্তর পেয়ে যাবে যে কেউ। ফুটসালে সাধারণ ব্রাজিলিয়ানদেরই যে দক্ষতা তাতে আর অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। আর ফ্যাবেলা-তে গিয়ে একটি খেলা দেখলে হয়তো আমাদেরকে প্রায় সবার “ড্রিবলিং” মুগ্ধ করবে।

ফুটবলে তাদের যে শ্রেষ্টত্ব তারা সেটা নিয়ে যেমন গর্ব করে; তেমনি ভাবে তারা ফুটবলকে মন থেকে ধারণ ও করে। ব্রাজিলিয়ানরা নিজেরা হরহামেশাই সেগুলো বলেও থাকে। কথায় কথায় “ফিফা ফ্যান ফেস্টে” আসা এক ব্রাজিলিয়ান বলছিল, “আমাদের সকল গর্বের জায়গা তো এই ফুটবল। তাই ফুটবলই আমাদের কাছে সবকিছুর উপরে। এটা দিয়েই আমরা একত্রিত হই, আনন্দ করি। তাই বিশ্বকাপের সময়টা আমরা সবকিছু ভুলে যাই শুধু ফুটবল ছাড়া।”

তবে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতো এখানে কিন্তু ঠিক সেই আমেজটা লক্ষ করা যায় না। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে বড়জোর কিছু পতাকা থাকে, কেউ বা গাড়ির সামনে পতাকা টানাচ্ছে আর জার্সি সব সময়ই আছে। তবে আমাদের দেশের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে পাগলামির কথা বা বিশাল ব্রাজিলিয়ান সাপোর্টারদের কথা অনেক অধ্যাপক বা শিক্ষার্থীরই ধারণা রয়েছে।

তবে এই ফুটবল পাগল দেশের মানুষগুলো অসম্ভব ভাল। তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে বাইরের যে কেউই মুগ্ধ হবে এই দেশটাতে আসলে। তারা আনন্দ করতে পছন্দ করে, পার্টি করতে কোন ক্লান্তি নেই, উৎসব করতে সবসময় প্রস্তুত। আর আনন্দপ্রিয় এই জাতির জন্য ফুটবলটা তাই আশির্বাদ স্বরূপ। তাদের দেশ জিতবে এটা তারা শুধুমাত্র আশা করে না, বিশ্বাস করে মন থেকে।