মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. নাহিদ পারভেজ রিয়াদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভাউচার জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রী অর্থ হরিলুট করছেন তিনি। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফের আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন তিনি। গণপূর্ত অফিসের ভেতরে সেসব ঠিকাদারদের নিয়ে করছেন পিকনিক। এমন গুরুতর অভিযোগের পরেও একসময় ছাত্র লীগের রাজনীতি করা নাহিদ পারভেজ সরকারি দপ্তরের রয়েগেছেন বহাল তবিয়তে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৯ মাস আগে নড়াইল থেকে মাগুরায় বদলি হয়ে আসেন পারভেজ। তারপর আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদেরকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গঠন করেন। এরপর জালিয়াতি করে আওয়ামীমনা ঠিকাদার একটির পর একটি সরকারি ঠিকাদারি কাজের তুলে দেন তাদের হাতে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ১০% কমিশন আদায় করেন।
সূত্রমতে, মাগুরা জেলায় এখন গণপূর্তের যত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ হচ্ছে তার সবকটাই করছেন আওয়ামী লীগের ঠিকাদাররা। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও বেকলমাত্র রাজনৈতিক তদবিরের বিভাগীয় শাস্তিমুক্ত রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সরকারি অফিস ও কর্মকর্তাদের বাসভবন সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। কোন প্রকার টেন্ডার আহ্বান না করেই তিনি তার আওয়ামীমনা ঠিকাদার মাধ্যমে ভাউচারে কাজ করাচ্ছেন। মাগুরা জজ কোর্ট,জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাস ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজে ১০ টাকা খরচ করে ৫০ টাকা বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। এই সংস্কার কাজের বিল ভাউচারগুলো তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে তিনি গোপালগঞ্জের একজন পলাতক ঠিকাদারের ১৪ কোটি টাকার কাজ নিজের অনুগত ঠিকাদার দ্বারা সাব কন্ট্রাক্টে করাচ্ছেন। এই ঠিকাদারি ফার্মের নাম মা বাবা এন্টারপ্রাইজ বলে জানা গেছে। গোপালগঞ্জের একজন আওয়ামী লীগ নেতা এই ঠিকাদারি ফার্মের মালিক বিধায় তার ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্ল্যাক লিস্ট করেছে হণপূর্ত অধিদপ্তর। তথাপিও সেই লাইসেন্সের অনুকূলে তিনি কাজ চলমান রেখেছেন।এছাড়া মাগুরা গণপূর্তের অধিকাংশ কাজ তিনি আৗযামী লীগের ঠিকাদারদের প্রদান করেছেন। যেমন জেলা তথ্য অফিস ভবন নির্মাণ কাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার মাকুল ও তার ছোট ভাই রাকু। এই কাজে ১২/১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। হাসপাতালের (৭মতলার) কাজ করছেন সাবেক ছাত্র লীগ নেতা শেখ রেজাউল ইসলাম। এই কাজের মূল্য ৫ কোটি টাকা।
শালিখা ও মহম্মদপুরে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা রানা। এই কাজের মূল্য ১৩ কোটি টাকা। গণপূর্ত অফিসের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করছেন যুব লীগ নেতা কিশোর। মূল্য ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া টেন্ডার ছাড়াই মাগুরা জজ কোর্টের ভেতরে অনেক কাজ করে ভুয়া ভাউচারে মোটা অঙ্কের টাকা ভাগাভাগি করেছেন। জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের ভেতরের উন্নয়ন কাজও করছেন আওয়ামী লীগের ঠিকাদার। গত ১৬ বছরে কোন বিএনপি দলীয় ঠিকাদার একটি কাজও পায়নি এই দপ্তর থেকে।
টেন্ডার শিডিউল বিক্রির আগেই কাজ শেষ:
মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডারের (দরপত্র) শিডিউল বিক্রির আগেই প্রায় কোটি টাকার কাজ পছন্দের ঠিকাদারের কাছে বণ্টন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এক বছর আগেই এ কাজ শেষ করেছেন। এপিপির কাজ এলটিএম বাদে দরপত্র আহ্বান করা নিষেধ থাকলেও ওটিএম এর মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ইজিপি (রাজস্ব)আওতায় ১০টি প্রকল্পে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজের স্বাক্ষরে ১০-ফেব্রুয়ারী(ওটিএম) দরপত্র আহ্বান করা হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্র ১০টির মধ্যে ৪টি ওটিএম,৬টি এলটিএম দরপত্র আহ্বান করা হয়।বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী,২৪-ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২:০০ ঘটিকায় টেন্ডার খোলা হয়েছে। প্রত্যেক প্রকল্পের অনুকূলে যে ঠিকাদার চুক্তিমূল্য কম দেবেন তিনি ওই কাজের ঠিকাদার নিয়োগ পাবেন। তবে সর্বমোট কতটি টেন্ডার জমা পড়েছে এ বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি নন মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজ, নির্বাহী প্রকৌশলী মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ, মাগুরা।সরেজমিনে দেখা যায়, টেন্ডার আইডি নম্বর-১০৭২৭১৬, কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনের আরসিসি রাস্তা নির্মাণ এবং হাঁটার পথ সংস্কার।প্রাক্কলিত মূল্য টাকা-৮.০০ থেকে ৯.০০ লক্ষ। টেন্ডার আইডি নম্বর-১০৭২৭১৫,মাগুরা ডিসি অফিসের বাগানের আনুষঙ্গিক মেরামত ,অফিসের চারপাশে ধাতব হ্যালাইড স্থাপন।প্রধান ফটকে পি-৬ মনিটরের মেরামত।যার প্রাক্কলিত মূল্য টাকা-৪.০০ থেকে ৫.০০ লক্ষ। টেন্ডার আইডি নম্বর-১০৭২৭১৩,মাগুরা সার্কিট হাউসে চারটি সাধারণ কক্ষের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ শৌচাগারের টাইলস
প্রতিস্থাপন,দরজা প্রতিস্থাপন,যার প্রাক্কলিত মূল্য -৯.০০ থেকে ১৯.০০ লক্ষ টাকা।টেন্ডার আইডি নম্বর-১০৭২৭১১,নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত মাগুরার বাসভবনে নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে সীমানা প্রাচীরের উপরে সম্প্রসারণ। প্রাক্কলিত মূল্য -১২.০০ থেকে ১৩.০০ লক্ষ টাকা।ওই নোটিশের কাজসহ নাম না জানা আরো অনেক কাজ এক বছর আগেই শেষ হয়েছে।মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার ফরিদ খান বলেন, আমি এখানকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার অথচ টেন্ডার ক্রয় করে কোন কাজ পাইনা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে কাজ ভাগবাটোয়ারা করে নেয় তাঁরা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তারা জানতে পারেন গণপূর্ত বিভাগের এমন টেন্ডার স্বৈরাচার শাসনামলে অনেক বার হয়েছে।অথচ ভবনটির নোটিশ বোর্ডে এ বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়নি। শিডিউল কিনতে গিয়ে জানতে পারি কাজগুলো আগে থেকেই কর্মকর্তার সুবিধামতো ঠিকাদারদের বরাদ্দ দিয়েছে। এটা এক প্রকার অনিয়ম। এতে কাজের গুণগত মান খারাপ হবে।এ বিষয় মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। এতে নাগরিকদের দীর্ঘসময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ কারণে নাগরিকের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে টেন্ডারের আগেই কাজ শুরু করেছেন।
আরো জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজ বিএনপি দলীয় ঠিকাদার ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সহ্যই করতে পারেন না। তিনি সব সময় উগ্র মেজাজে থাকেন। সাংবাদিকদের তথ্য দিতেও সহায়তা করেন। তিনি ভুয়া ভাউচারে গোপনে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর এই নির্বাহী প্রকৌশলী নড়াইলে থাকা কালেও সরকারি অর্থ হরিলুট করেছেন মর্মে অভিযোগ আছে। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদেরকে ছায়া সাথী করে দেদারসে সরকারি অর্থ হরিলুট করে যাচ্ছেন।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী অভিযুক্ত প্রকৌশলী পারভেজ বলেন, আপনি অফিসে এসে সরাসরি কথা বলুন। একথা বলে ফোন কল কেটে দেন। পরবর্তীতে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বরাবরই প্রতিনিধিকে এড়িয়ে যান।