রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে অনেক বছর ধরে গরুর মাংস বিক্রি করেন আনোয়ার হোসেন। ইদানিং তার ব্যবসা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। গরুর মাংসের দাম বাড়তি থাকায় আগের মতো আর বিক্রি নেই তার দোকানে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, মানুষ সচারচর আর গরুর মাংস কিনছে না। সাধারণ ক্রেতারা খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ গরুর মাংস কিনে খায় না। বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসা ছাড়া বা কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া শখ করে কেউ খাওয়ার জন্য গরুর মাংস কেনে না।
আজ (শুক্রবার) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই বাড়তি দামে গরু, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে বাজারে। গরুর মাংস ৭০০ টাকায় আবার কোন কোন দোকানে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাংসবিক্রেতা আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, একটা গরুর কেনা দাম অনেক বেশি, সঙ্গে বিভিন্ন চাঁদা, দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতন সব মিলিয়ে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করলেও লাভ করা যায় না। এর চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। অনেকে মাংস বিক্রির ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। কিন্তু যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তারা এই ব্যবসা ছাড়তে পারছেন না, চালিয়ে নিতেও পারছেন না। কারণ, ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ ক্রেতারা গরুর মাংস কিনছেন না।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মেহেদি হাসান বলেন, দাম খুব বেশি থাকার কারণে সাধারণত গরুর মাংস কেনা হয় না। অনেকে আছে শখ করেও গরুর মাংস কিনতে পারে না। বাসায় যদি কোনো আত্মীয়-স্বজন আসে সেক্ষেত্রে আমরা বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে গরুর মাংস কিনি। এছাড়া স্বাভাভিকভাবে মাসে একবারও গরুর মাংস কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা সাধারণ মানুষের নেই। এত দাম দিয়ে কি মাংস কিনে খাওয়া যায়?
অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল কক মুরগিও বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়, এছাড়া লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
মাংসের পাশাপাশি মাছের দামও উর্ধ্বমুখি। বাজারে তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩২০টাকায়, পাবদা মাছ আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চাষের কই ২৪০ টাকায়, পাঙাস মাছ ২০০ টাকায়, সিলভার কার্প মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, সিং ছোট সাইজের মাছ ৪০০ টাকায়, ট্যাংড়া মাঝারি ৬০০ টাকায়, ছোট চিংড়ি ৫০০ টাকা, মাঝারি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া টাকি মাছ ৪০০ টাকায়, আঁইড় মাছ ৮০০ টাকায়, রুপচাঁদা মাঝারিটা ৭০০ টাকায়, কাতল মাছ ৩০০ থেকে আকার ভেদে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান লেক সংলগ্ন বাজারে আসা ক্রেতা ফিরোজুল ইসলাম বলেন, বাজারে আর কম দামের কোনো মাছ পাওয়া যায় না। এখন সব মাছের দাম বাড়তি। বাজারে এসে খুঁজে দেখি কোন মাছের দাম কম, এরপর সেই মাছ অল্প করে কিনে নিয়ে যাই। ভালো কোনো মাছ তো আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা আর কিনতে পারে না। বাজার খুঁজে সবচেয়ে কম দামের মাছ বলতে ২০০ টাকায় পাঙাস আর তেলাপিয়া, এছাড়া ২৪০/২৫০ টাকায় চাষের কই পাওয়া যায়। এসব মাছ ছাড়া অন্য সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি যা কেনা সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।
মাছের দাম বেড়েছে এ কথা স্বীকার করে একই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল বলেন, মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণেই বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে আগের চেয়ে মাছ পরিবহন করে আনার খরচও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে।