গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান। একই সঙ্গে তিনি ওই ঘটনায় পুলিশের সাড়া দিতে দেরি হওয়ায় বাহিনী পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন।
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদী অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন জিএমপি কমিশনার।
এর আগে আজ বেলা আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেন আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। অবশ্য তারও আগে থেকে সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন।
বিক্ষোভস্থলে গিয়ে পুলিশ কমিশনার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,গতকাল রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
থানার সংশ্লিষ্ট থানার ওসি দুই ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের ডাকে ডাকে সাড়া দিয়েছেন- এমনটা তিনি শুনেছেন উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করব। যারা ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেওয়া যাবে না।’
গত ১৭ বছর যারা অত্যাচার-জুলুম করেছে, তাদের মাথাচাড়া বরদাশত করা হবে না। ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, আজ রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম প্রমুখ।
গতকাল শুক্রবার রাতে সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হকের বাড়িতে একদল মানুষ লুটপাট করছে এমন খবর পেয়ে ছাত্ররা তা ঠেকাতে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনের আঘাত গুরুতর, তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাজীপুরের ঘটনাকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ফাঁদ বলে সন্দেহ করছেন ছা্ত্ররা। তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে গাজীপুর শহরের রাজবাড়ীর মাঠ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের রাজবাড়ী মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে তারা জেলা শহরে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করেন।
বেলা দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।