ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমা চাইলেন খুলনা বার সভাপতিসহ তিন আইনজীবী

ঢাকা: খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে অসদাচরণ ও আদালত অবমাননার ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

এরপর তিন আইনজীবীকে তিরস্কার করে বুধবার (২৩ নভেম্বর) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।এর আগে তলবে হাজির হন তিন আইনজীবী।

শুনানির শুরুতে সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীর পক্ষে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এ সময় হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো সভ্য মানুষ কি বিচারকের সঙ্গে এ আচরণ করতে পারে?  তিনি কি বার সভাপতি হয়ে আদালতে দাপট দেখাচ্ছেন?  আপনারা কেন এসব লোকদের পক্ষ নিয়ে আদালতে আসেন? আপনারা তাদের পক্ষ নিলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ কতটা নিম্নমানের হলে একজন বিচারকের সঙ্গে এ ভাষায় করতে পারে!

এ সময় খুলনা বারের সভাপতি সাইফুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে আদালত বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলঙ্ক না। আপনি গোটা খুলনার কলঙ্ক। আপনি কি নিজেকে খুলনার মহানায়ক ভাবেন?

এসময় নিজের আচরণের জন্য আদালতের কাছে ক্ষমা চান খুলনা বার সভাপতি।

তিনি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দেন।

এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা লজ্জিত এবং একই সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা সত্যি, অভিযোগ (সভাপতি সাইফুল ইসলাম যে ভাষায় কথা বলেছেন) পড়তে লজ্জা লাগে।

তখন আদালত বলেন, আইনজীবী যদি আদালতের সঙ্গে এ রকম আচরণ করেন, তখন আদালত, বার বলে কিছু থাকে না। তারা শুধু অদালত অবমাননাই করেননি, ফৌজদারী অপরাধ করেছেন।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু খুলনা বারের তিন আইনজীবীর হয়ে উচ্চ আদালতের কাছে ক্ষমা চান। আর কখনো আর এমন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীরা।

তখন আদালত বলেন, যারা আদালত অবমাননা করে, বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, আপনারা তাদের পক্ষে নিয়ে আর কখনো আসবেন না। এ ধরনের ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দেবেন না। আপনারা তাদের পক্ষে দাঁড়ালে ভুল বার্তা যায়।

এসময় আইনজীবীরা বলেন, এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি আর কখনো এমনটা হবে না।

তখন আদালত আবারো বলেন, আপনারা ভুল করেননি, অপরাধ করেছেন।

এরপর আদালত খুলনার আইনজীবী শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে ডায়াসের সামনে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এর আগে কি করতেন? জবাবে পাপ্পু বলেন, ব্যবসা করতাম।

আদালত বলেন, আপনার আচরণ আইনজীবীর মতো না। বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ক্ষেত্রে আপনি মূল ভূমিকা পালন করেছেন। আপনাদের মতো ব্যবসায়ীরা এসে আইন পেশাটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। এরপর আদালত খুলনার আরেক আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেনকেও ভর্ৎসনা করেন।

বিচারক নির্মলেন্দু দাশ গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবরে একটি পত্র দেন। সেটি প্রধান বিচারপতি বরাবরে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন। সে অনুসারে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে তিন আইনজীবীতে তলব করেন।

নথিতে বলা হয়, একটি বিচারিক বিষয়ে বারের সভাপতি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে একজন বিচারক হিসেবে তিনি হতাশ, অপমানিত হয়েছেন এবং বিচার বিভাগের মর্যাদার উপর তারা আঘাত হেনেছেন ও চরমভাবে আদালত অবমাননা করেছেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষমা চাইলেন খুলনা বার সভাপতিসহ তিন আইনজীবী

আপডেট সময় ১২:২৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২

ঢাকা: খুলনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজ) নির্মলেন্দু দাশের সঙ্গে অসদাচরণ ও আদালত অবমাননার ঘটনায় খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

এরপর তিন আইনজীবীকে তিরস্কার করে বুধবার (২৩ নভেম্বর) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।এর আগে তলবে হাজির হন তিন আইনজীবী।

শুনানির শুরুতে সাইফুল ইসলামসহ তিন আইনজীবীর পক্ষে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

এ সময় হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো সভ্য মানুষ কি বিচারকের সঙ্গে এ আচরণ করতে পারে?  তিনি কি বার সভাপতি হয়ে আদালতে দাপট দেখাচ্ছেন?  আপনারা কেন এসব লোকদের পক্ষ নিয়ে আদালতে আসেন? আপনারা তাদের পক্ষ নিলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ কতটা নিম্নমানের হলে একজন বিচারকের সঙ্গে এ ভাষায় করতে পারে!

এ সময় খুলনা বারের সভাপতি সাইফুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে আদালত বলেন, আপনি শুধু আইনজীবী সমাজের কলঙ্ক না। আপনি গোটা খুলনার কলঙ্ক। আপনি কি নিজেকে খুলনার মহানায়ক ভাবেন?

এসময় নিজের আচরণের জন্য আদালতের কাছে ক্ষমা চান খুলনা বার সভাপতি।

তিনি বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দেন।

এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা লজ্জিত এবং একই সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা সত্যি, অভিযোগ (সভাপতি সাইফুল ইসলাম যে ভাষায় কথা বলেছেন) পড়তে লজ্জা লাগে।

তখন আদালত বলেন, আইনজীবী যদি আদালতের সঙ্গে এ রকম আচরণ করেন, তখন আদালত, বার বলে কিছু থাকে না। তারা শুধু অদালত অবমাননাই করেননি, ফৌজদারী অপরাধ করেছেন।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু খুলনা বারের তিন আইনজীবীর হয়ে উচ্চ আদালতের কাছে ক্ষমা চান। আর কখনো আর এমন হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীরা।

তখন আদালত বলেন, যারা আদালত অবমাননা করে, বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, আপনারা তাদের পক্ষে নিয়ে আর কখনো আসবেন না। এ ধরনের ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দেবেন না। আপনারা তাদের পক্ষে দাঁড়ালে ভুল বার্তা যায়।

এসময় আইনজীবীরা বলেন, এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি আর কখনো এমনটা হবে না।

তখন আদালত আবারো বলেন, আপনারা ভুল করেননি, অপরাধ করেছেন।

এরপর আদালত খুলনার আইনজীবী শেখ আশরাফ আলী পাপ্পুকে ডায়াসের সামনে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি এর আগে কি করতেন? জবাবে পাপ্পু বলেন, ব্যবসা করতাম।

আদালত বলেন, আপনার আচরণ আইনজীবীর মতো না। বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের ক্ষেত্রে আপনি মূল ভূমিকা পালন করেছেন। আপনাদের মতো ব্যবসায়ীরা এসে আইন পেশাটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। এরপর আদালত খুলনার আরেক আইনজীবী শেখ নাজমুল হোসেনকেও ভর্ৎসনা করেন।

বিচারক নির্মলেন্দু দাশ গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবরে একটি পত্র দেন। সেটি প্রধান বিচারপতি বরাবরে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার জেনারেল। ২৫ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন। সে অনুসারে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে ১ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে তিন আইনজীবীতে তলব করেন।

নথিতে বলা হয়, একটি বিচারিক বিষয়ে বারের সভাপতি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে একজন বিচারক হিসেবে তিনি হতাশ, অপমানিত হয়েছেন এবং বিচার বিভাগের মর্যাদার উপর তারা আঘাত হেনেছেন ও চরমভাবে আদালত অবমাননা করেছেন।