সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ করে ঋণ বিতরণের আলাদা একটি ইউনিট) কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ কারণে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের অর্থের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানত ও ঋণসহ সব ধরনের ব্যবসায়িক উপকরণের সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতের সুদের হারের ওপর কঠোর তদারকির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে প্রতিটি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকে প্রতি মাসে তাদের বিভিন্ন ব্যাংকিং উপকরণের সুদের হারের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই সার্কুলারের কিছু অংশ চলতি মাসের বিবরণীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। মেয়াদি কিছু উপকরণের তথ্য ডিসেম্বর থেকে পাঠাতে হবে। ত্রৈমাসিকের তথ্য চলতি অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের মধ্যেই পাঠাতে হবে।
সূত্র জানায়, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ করছে। এছাড়া তারা বৈদেশিক মুদ্রায় বিভিন্ন বিল আগাম কিনছে বা এতে বিনিয়োগ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এ কারণে এসব ইউনিটের ঋণের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। ঋণের চাহিদা বাড়ায় আমানতের সুদের হারও বেড়েছে। এতে করে ঋণের সুদের হার আরও বেড়ে যাচ্ছে। ঋণ ও আমানতের সুদের হার বাড়ায় ব্যবসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
আগে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো লাইবর রেটের সঙ্গে ২ থেকে আড়াই শতাংশ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করত। আগে লাইবর রেট ছিল দেড় থেকে ২ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে এখন আমানত সংগ্রহে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ঋণের সুদের হারও বেড়েছে।
রপ্তানি বিলও এখন বাড়তি দামে কিনতে হয়। এসব কারণে সব খাতে খরচ বেড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ঋণের সুদের ওপর। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদি আমদানিতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে দেশের ভেতরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিষয়টি তদারকি করতে আমানত ও ঋণের সুদের হার তথ্যাদি মাসিকভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো যেসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায় সেগুলো চলতি ত্রৈমাসিক থেকেই কার্যকর হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের বিল বা উপকরণের তথ্য ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের সুদের হারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে। এর আলোকে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।