ঢাকা ১০:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর গ্রন্থাগার বিলুপ্তির পথে

  • রিয়াজ ফরাজি
  • আপডেট সময় ০৭:৩৯:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫০৭ বার পড়া হয়েছে

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এর বেহালদশা। এটি কে সংস্কার করে যুগ উপযোগি করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। জাদুঘরটিতে আকৃষ্ট করার মতো মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত বই, জীর্ণ হয়ে পড়েছে আসবাবপত্র। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, জাদুঘরটি বাইরে থেকে সুন্দর হলেও ভেতরে তেমন কিছু নেই।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের নামে ভোলায় গড়ে তোলা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর আকৃষ্ট করতে পারছে না দর্শনার্থীদের। এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।

সুশিস সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, নির্মানের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও, সরকারি সহযোগিতা ও প্রচারের অভাবে পূর্ণতা পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি।

তার জীবনী এবং বীরত্বগাঁথা তো দূরের কথা তার জন্মস্থান কোথায় এ প্রশ্নের জবাবই মিলল না স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের অন্তত ৮/৯ জন শিক্ষার্থীর কাছে। প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে বীরশ্রেষ্ঠদের গল্পে এ সম্পর্কে খুব ক্ষুদ্র একটি অধ্যায় থাকলেও মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা রাখে না বললেই চলে।

এই প্রজন্মের অনেক ছাত্র/ছাত্রীর কাছে এসব প্রশ্ন অবান্তরই মনে হয়, কারন হিসাবে মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ছাত্র/ছাত্রীরা যে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল সম্পের্কে জানবে, তার জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা আমাদের ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আলীনগর ইউনিয়নের মোস্তাফা কামাল নগরের বাসিন্ধা আরমান হোসেন (৩৩) নামের একজন কে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভাই আমি তো অনেক বছর ঢাকায় ছিলাম এই নামে কাউকে চিনি না, তাদের বাড়ি কোথায় তাও জানি না। জেলা পরিষদের কতোটা অবহেলা এবং দায় এড়ানোর মানসিকতা হলে এমন অবস্থা হয়, তা সহজেই অনুমেয়।

সরজমিনে গিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের স্মৃতি জাদুঘরে ঢোকার আগেই জানা গেল সেখানকার অযত্ন-অবহেলার কথা। ভেতরে গিয়ে সেসবের সত্যতা মিলল। দেখা গেল, কেয়ারটেকার নেই। শিশু সাহিত্য, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, রচনাবলীসহ আরও কিছু শেল্ফ ভাঙাচোরা এবং খালি পড়ে আছে। একইসঙ্গে জাদুঘরের ভেতরের একটি কক্ষের দরজা পুরোটাই ভাঙা। মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর হলেও সেখানে এই বীরশ্রেষ্ঠর বীরত্বগাঁথা ও জীবনী সংক্রান্ত কোনো বই পাওয়া গেল ন। সবমিলিয়ে পুরো গ্রন্থাগার ও জাদুঘরেই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। একপর্যায়ে পাশে থাকা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে মানুষের আসা যাওয়া না থাকায় দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে জাদুঘরের পাশে থাকা আলীনগর মাধ্যমিক স্কুলে গেলে উক্ত স্কুলের শিক্ষকরা এ বিষয় কথা বলতে অপারগতা দেখান। শিক্ষকরা জাদুঘর সম্পর্কিত কোন কথা বলতে চান না বলে জানিয়ে দেন। ঐ গ্রামের বাসিন্ধা মোঃ শহিদুল্লাহ এখানে প্রাইভেট পড়ানোসহ নানা অবহেলার কথা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষটি সত্য বলে জানান।

নাম প্রকাশ না করা সত্তে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে তার জন্মস্থান দৌলতখানে লঞ্চ টার্মিনাল এবং জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হলেও তা আবার পরিবর্তন করে ফেলেন। সমালোচনার এক পর্যায় তা আবার বহাল করা হয়। এ ছাড়াও তার নামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড (চরফ্যাশন বাসস্ট্যান্ড) থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সেখানে এখন পর্যন্ত এই বীরের নামে একটি ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ করা হয় নি। এমন কি বড় নেম পলক ও নেই সেখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই সাহসি যোদ্ধা যতোটা সম্মানের সঙ্গে আছেন, নিজ জন্মভূমিতে ঠিক ততোটাই অবহেলার শিকার। এছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠর প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলার কথা আক্ষেপের সুরেই জানালেন মোবাইল টেলিকম ব্যবসায়ী মোঃ রিপন শেখ।

কলামিস্ট মোস্তাফিজ মিশুক বলেন, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গুলোর উদাসীনতার ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম যে মুক্তিযুদ্ধ ও বীরশ্রেষ্ঠদের চেতনা থেকে ছিটকে পড়ছে তা ফুটে উঠছে। দর্শনার্থী এমনকি এই গ্রন্থাগারের এলাকার লোকজন বা শিক্ষার্থীরা কেন আসছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন। শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি,জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি, ভিডিও আর্কাইভ থাকলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইতিহাস জানার সুযোগ পেত। আগে এখানে মোটামুটি জনসমাগম হলেও এখন আর নেই।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাজাহান বলেন, এটি সত্যিই একটি কষ্টদায়ক বিষয়। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি তাদের স্মৃতি ও ইতিহাসকে আমরা পদদলিত করে চলছে। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতির প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলার মানসিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের কে মুক্তিযুদ্ধের এই মহান বীরসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিতে হবে। তাদের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে। এই মহান বীরদের প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলা কখনোই কাম্য নয়, কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে ১৮ এপ্রিল যুদ্ধের মাঠে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্ম স্থান ভোলার দৌলতখান উপজেলার মৌটুসী গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে ১৯৮২ সালে তার পরিবার কে স্থান্তর করে ভোলার আলীনগর ইউনিয়নে সরকারী ভাবে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা সেই বাড়িতেই থাকেন। এর প্রায় তিন যুগ পর ২০০৮ সালে ভোলায় সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি আলীনগরে নির্মাণ করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবোধনে পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘরটি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর গ্রন্থাগার বিলুপ্তির পথে

আপডেট সময় ০৭:৩৯:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর এর বেহালদশা। এটি কে সংস্কার করে যুগ উপযোগি করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। জাদুঘরটিতে আকৃষ্ট করার মতো মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত বই, জীর্ণ হয়ে পড়েছে আসবাবপত্র। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, জাদুঘরটি বাইরে থেকে সুন্দর হলেও ভেতরে তেমন কিছু নেই।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের নামে ভোলায় গড়ে তোলা গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর আকৃষ্ট করতে পারছে না দর্শনার্থীদের। এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।

সুশিস সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, নির্মানের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও, সরকারি সহযোগিতা ও প্রচারের অভাবে পূর্ণতা পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি।

তার জীবনী এবং বীরত্বগাঁথা তো দূরের কথা তার জন্মস্থান কোথায় এ প্রশ্নের জবাবই মিলল না স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের অন্তত ৮/৯ জন শিক্ষার্থীর কাছে। প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে বীরশ্রেষ্ঠদের গল্পে এ সম্পর্কে খুব ক্ষুদ্র একটি অধ্যায় থাকলেও মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা রাখে না বললেই চলে।

এই প্রজন্মের অনেক ছাত্র/ছাত্রীর কাছে এসব প্রশ্ন অবান্তরই মনে হয়, কারন হিসাবে মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ছাত্র/ছাত্রীরা যে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল সম্পের্কে জানবে, তার জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা আমাদের ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আলীনগর ইউনিয়নের মোস্তাফা কামাল নগরের বাসিন্ধা আরমান হোসেন (৩৩) নামের একজন কে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভাই আমি তো অনেক বছর ঢাকায় ছিলাম এই নামে কাউকে চিনি না, তাদের বাড়ি কোথায় তাও জানি না। জেলা পরিষদের কতোটা অবহেলা এবং দায় এড়ানোর মানসিকতা হলে এমন অবস্থা হয়, তা সহজেই অনুমেয়।

সরজমিনে গিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের স্মৃতি জাদুঘরে ঢোকার আগেই জানা গেল সেখানকার অযত্ন-অবহেলার কথা। ভেতরে গিয়ে সেসবের সত্যতা মিলল। দেখা গেল, কেয়ারটেকার নেই। শিশু সাহিত্য, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, রচনাবলীসহ আরও কিছু শেল্ফ ভাঙাচোরা এবং খালি পড়ে আছে। একইসঙ্গে জাদুঘরের ভেতরের একটি কক্ষের দরজা পুরোটাই ভাঙা। মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর হলেও সেখানে এই বীরশ্রেষ্ঠর বীরত্বগাঁথা ও জীবনী সংক্রান্ত কোনো বই পাওয়া গেল ন। সবমিলিয়ে পুরো গ্রন্থাগার ও জাদুঘরেই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। একপর্যায়ে পাশে থাকা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে মানুষের আসা যাওয়া না থাকায় দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে জাদুঘরের পাশে থাকা আলীনগর মাধ্যমিক স্কুলে গেলে উক্ত স্কুলের শিক্ষকরা এ বিষয় কথা বলতে অপারগতা দেখান। শিক্ষকরা জাদুঘর সম্পর্কিত কোন কথা বলতে চান না বলে জানিয়ে দেন। ঐ গ্রামের বাসিন্ধা মোঃ শহিদুল্লাহ এখানে প্রাইভেট পড়ানোসহ নানা অবহেলার কথা তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষটি সত্য বলে জানান।

নাম প্রকাশ না করা সত্তে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে তার জন্মস্থান দৌলতখানে লঞ্চ টার্মিনাল এবং জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হলেও তা আবার পরিবর্তন করে ফেলেন। সমালোচনার এক পর্যায় তা আবার বহাল করা হয়। এ ছাড়াও তার নামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড (চরফ্যাশন বাসস্ট্যান্ড) থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও সেখানে এখন পর্যন্ত এই বীরের নামে একটি ম্যুরাল বা স্মৃতিস্তম্ভ করা হয় নি। এমন কি বড় নেম পলক ও নেই সেখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই সাহসি যোদ্ধা যতোটা সম্মানের সঙ্গে আছেন, নিজ জন্মভূমিতে ঠিক ততোটাই অবহেলার শিকার। এছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠর প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলার কথা আক্ষেপের সুরেই জানালেন মোবাইল টেলিকম ব্যবসায়ী মোঃ রিপন শেখ।

কলামিস্ট মোস্তাফিজ মিশুক বলেন, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গুলোর উদাসীনতার ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম যে মুক্তিযুদ্ধ ও বীরশ্রেষ্ঠদের চেতনা থেকে ছিটকে পড়ছে তা ফুটে উঠছে। দর্শনার্থী এমনকি এই গ্রন্থাগারের এলাকার লোকজন বা শিক্ষার্থীরা কেন আসছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন। শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি,জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি, ভিডিও আর্কাইভ থাকলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইতিহাস জানার সুযোগ পেত। আগে এখানে মোটামুটি জনসমাগম হলেও এখন আর নেই।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহাজাহান বলেন, এটি সত্যিই একটি কষ্টদায়ক বিষয়। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি তাদের স্মৃতি ও ইতিহাসকে আমরা পদদলিত করে চলছে। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে বীরশ্রেষ্ঠদের স্মৃতির প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলার মানসিকতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের কে মুক্তিযুদ্ধের এই মহান বীরসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিতে হবে। তাদের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিরলস ভাবে কাজ করতে হবে। এই মহান বীরদের প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলা কখনোই কাম্য নয়, কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে ১৮ এপ্রিল যুদ্ধের মাঠে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্ম স্থান ভোলার দৌলতখান উপজেলার মৌটুসী গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে ১৯৮২ সালে তার পরিবার কে স্থান্তর করে ভোলার আলীনগর ইউনিয়নে সরকারী ভাবে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারা সেই বাড়িতেই থাকেন। এর প্রায় তিন যুগ পর ২০০৮ সালে ভোলায় সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি আলীনগরে নির্মাণ করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবোধনে পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘরটি।