চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার সংকট এবং বাংলাদেশের সংকট অভিন্ন” শীর্ষক সেমিনার আজ রবিবার (৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী বলেছেন, জনগণের বাক ও বিবেকের স্বাধীনতা রক্ষায় তাকে সব সময় সোচ্চার থাকতে হয়।
জনগণের বাক ও বিবেকের স্বাধীনতা রক্ষিত হলেই কেবল সাংবাদিকের অধিকার নিশ্চিত হতে পারে, নচেৎ না। যখন রাজনীতি একটা পরিণতি পায়, স্থিতিশীলতা আসে তখন নিত্যনতুন অধিকার আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে সেসব আন্দোলনের খবরাখবর প্রচার করে সেই অধিকার আন্দোলনগুলোকে সহায়তা করা। এটা তাকে করতে হয় নিজের অধিকার রক্ষার তাগাদা থেকেই। আর রাজনীতির গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল, অধিকার আন্দোলনগুলোর ক্রম বিস্তার অনেক অনেক ইভেন্ট/সংবাদ তৈরি করে চলে, সাংবাদিকতাও হাত ধরাধরি করে তখন বিকশিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সাংবাদিকরা যদি সেই ভূমিকাটুকু রাখতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার সঙ্কটগুলো সুরাহা হতে পারে, নাইলে যতো সংস্কার প্রস্তাবই আসুক, পরিস্থিতির পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ’।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনার সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ।
স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে সেমিনারে নিবন্ধের উপর আলোচনা পর্বে কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ মুস্তফা নঈম বলেন, প্রথমত সাংবাদিক হিসেবে আমাদের অনেক পড়াশুনা করতে হবে। আমার সমাজকে জানতে হবে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে।
একাত্তর টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী বলেন, এখন বাজারে আছে কর্পোরেট সাংবাদিকতা, এজন্য সাংবাদিকতা উন্নয়নের দিকে না গিয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, পুরো দেশ থেকে চট্টগ্রামের বিষয় একটু আলাদা। কারণ, এখানে জাতিগত ইস্যু আছে, পাহাড় আছে, কক্সবাজারের ব্লু ইকোনমিক্যাল ইস্যু আছে। ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতা চট্টগ্রামের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। সাংবাদিকতা জানাশোনার বিষয় যেমন তেমনই কারিগরিক বিষয়।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ বলেন, সাংবাদিকতার মূল কাজ যা দেখেছেন যা ঘটেছে তার নির্মোহ বর্ণনা করা। সাংবাদিকরা সাংবাদিকতাও করবে, বিপ্লবও করবে। আমাদের দেশে একজন পুলিশকে দেখলে সালাম দেয়া হয় কিন্তু একজন সাংবাদিকের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয় আপনারা জানেন। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে কি করলেন। একদিকে তিনি আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি বন্ধ করলেন। অন্যদিকে কিছু টিভি চ্যানেল ও সংবাদ মাধ্যমকে বাহবা দিলেন যাদের মালিকরা তার মন্ত্রী ও সাংবাদিকরা তার অনুগত শ্রেণি। এগুলো করে তিনি ফ্যাসিবাদের চাষবাস শুরু করলেন।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করতে হলে আপনাকে এস্টাবলিশমেন্টের সাথে গাটছাট বাঁধলে হবে না। আপনাকে আলাদা থাকতে হবে। গাঁটছাট বাঁধলে আপনি তো সাংবাদিকতা করছেন না। আপনি তার পিআর হিসেবে কাজ করছেন।
সাংবাদিকদের জন্য স্বীকৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। একজন আইনজীবীর আইনের ডিগ্রি না থাকলে সে আইনজীবী হতে পারে না, একজন শিক্ষককে শিক্ষক হতে হলে তাকে বিসিএস পাস করে শিক্ষা ক্যাডার হতে হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এরকম কোনো নিয়ম নাই। তাদের কোনো নিবন্ধন, কোনো স্বীকৃতির দরকার হয় না। একজন এইট পাশ ব্যক্তিও সাংবাদিক হতে পারেন। তাই সাংবাদিকতাকে প্রাতিষ্ঠানিকরণের কোনো বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ করতে পারলে আমাদের সাংবাদিকতা আরো সমৃদ্ধ হবে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন এন টিভির ব্যুরো চীফ শামসুল হক হায়দরী, বণিক বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার সুজিত সাহা, সাংবাদিক স্বপন ইসলাম ও স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক জোবাইরুল হাসান আরিফ, সাংবাদিক ফারুক মুনির।
আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সচিব আবির বিন জাবেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক জমির উদ্দিন, মুখপাত্র ও প্রচার সম্পাদক জগলুল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন সাইফুল ইসলাম সাজিদ।