ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয় ইমরান খানের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান চালানোর শঙ্কা জবির ৯ শিক্ষকসহ ২৫৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা উপ-রাষ্ট্রপতি পদ ফেরাতে চায় বিএনপি, আগে কারা ছিলেন? বঞ্চিত ক্রীড়া সংগঠকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে চাই : আমিনুল হক বিহারী মুরাদ দিদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সংঘাত অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না: এবি পার্টি ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ মাহবুবুলসহ ১৮ জন কারাগারে রংপুর জেলায় বিএসটিআই’র সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা

নতুন নেতৃত্ব আসছে মহিলা লীগে

• সম্মেলন যত এগিয়ে আসছে নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপও বাড়ছে 
• এবার যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে
• নিজেদের যোগ্য প্রমাণে মরিয়া মহিলা নেত্রীরা
• সম্মেলন ২৬ নভেম্বর, প্রধান অতিথি শেখ হসিনা 
• পরিবর্তন চান সিনিয়র নেতারাও 

২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে মহিলা নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপও ততই বাড়ছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে আলোচনাও জোরদার হচ্ছে।

সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বাসা থেকে শুরু করে অফিসে প্রতিনিয়ত হাজিরা দিচ্ছেন পদপ্রত্যার্শীরা। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে মরিয়া তারা। এর মধ্যে বর্তমান  সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এ সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারণ, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবার নতুন মুখ আসছে বলে  জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগের ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গত মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলে তার সঙ্গে কথা বলেন  মহিলা লীগের দুই নেত্রী। আলাপের মাঝখানে সেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাদের বলেন, ‘তোমাদের (মহিলা আওয়ামী লীগের) নতুন নেতৃত্ব আসছে। পুরনো দু’জন থাকছেন না। সুযোগ আছে, তোমরা তো ত্যাগী, নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে তোমাদের চাওয়ার কথা বলো।’

ওই দুই নেত্রী তখন বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) তো আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।

১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন সফল করতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রস্তুত করা হচ্ছে মঞ্চ। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্র মতে, বর্তমানে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে থেকে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, সহ-সভাপতি আসমা জেরিন ঝুমু, শিরীন নাঈম পুনম ও আজিজা খানম কেয়া পদ প্রত্যাশা করছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রুকসানা, মীনা মালেক, জান্নাত আরা হেনরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল, সুলতানা রাজিয়া পান্না, নাসরীন সুলতানা, ঝর্ণা বাড়ৈ, ইসমত আরা হ্যাপী, দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজীও শীর্ষ দুই পদের একটিতে আসতে চাইছেন।

জানতে চাইলে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, সম্মেলনের ভালো প্রস্তুতি চলছে। আমি পদপ্রত্যাশী, সাধারণ সম্পাদক ছিলাম যেহেতু, এখন সভাপতি প্রার্থী। আমাদের আগামীর নেতৃত্ব নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি যাকে নেতৃত্ব দেবেন সেই পাবেন। তিনি যে নেতৃত্ব দেবেন সেই নেতৃত্ব নিয়ে আমরা আগামী পথ চলব।

তিনি আরও বলেন, আমি গত পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম কিন্তু বৈশ্বিক কারণে আমরা প্রায় আড়াই বছর কাজ করতে পারিনি। যতটা করা উচিৎ ছিল ততটা করতে পারিনি। আমি মনে করি, যতটুকু কাজ করতে পেরেছি, বাংলাদেশ মহিলা লীগের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক জেলা এবং জাতীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে, আমরা ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। অনেক সংগ্রাম, আন্দোলন, রাজপথে ছিলাম। আমি মনে করি, সংগঠনের জন্য অনেক কাজ করেছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সেই জায়গা থেকে আমি সভাপতির পদ প্রত্যাশা করতে পারি।’

এদিকে বর্তমান কমিটির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল গত জুলাইয়ে। এক সঙ্গে মহানগরের বেশ কিছু কমিটি ঘোষণা নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া বর্তমান সম্মেলনকে ঘিরেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সর্ম্পক ফাটলের বিষয়টিও স্পষ্ট।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবার সভাপতি পদ পেতে চান। নিজের পক্ষের নেত্রীদের নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে নিয়মিত মিছিলও করাচ্ছেন তিনি।

এবারের সম্মেলনের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরেকজন জান্নাত আরা হেনরী; যিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ থেকে সংগঠন করে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলাম, তারপর কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম, এখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে আরও গতিশীল করার দরকার। আমি মনে করি, আমার কোনো পিছু টান নেই, দলকে আমি ওইভাবে সময় দিতে পারব, সুসংগঠিত করার জন্য সার্বক্ষণিক দলের জন্য সময় দিয়ে কাজ করতে পারব। দলকে গতিশীল করতে পারব।

বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও পদপ্রত্যাশী নাসরীন সুলতানা বলেন, আমি ১৯৯১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইডেন কলেজে প্রথমে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছয় বছর কাজ করেছি, পরে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমি কাজ করেছি। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম, তারপর সহ-সম্পাদক ছিলাম, এরপরে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলাম। এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। দায়িত্ব পেলে এই সংগঠন ভালোভাবে চালাতে পারব।

বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমত আরা হ্যাপী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমান রাজনীতিতে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন আমাদের নেত্রী। যারা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাই আগামী নেতৃত্বে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সে কারণে আমরা রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। সক্রিয় ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে আমরা তো পদ প্রত্যাশা করতেই পারি। নেত্রী আমাদের ব্যাপারে জানেন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তার ওপর আমার আস্থা আছে।’

দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজী বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত অ্যাড. শুধাংশু শেখর হালদারের নির্বাচনী প্রচারণার অংশগ্রহণ করেছি। তার আগে কলেজ জীবনে স্বরুপকাঠি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি, ১৯৯৯ সালে সমাজ-কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলাম। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির এবং ২০১৭ সাল থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের এই পদে দায়িত্ব পালন করছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দলের দুঃসময়ে রাজনৈতিক মাঠে ছিলাম। নারী হয়েও মাঠ কখনো ছেড়ে চলে যাইনি। এখন দলের সুদিন চলছে, আমি আশা করি নেত্রী আমাদের মতো দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করবে।

পরিবর্তন চান সিনিয়র নেতারাও
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন চান। দলের একাধিক নেতা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন একটা রুটিন মাফিক কাজ। সংগঠন ভালোভাবে চালাতে পারলে কাউকে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত। সংগঠনকে তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে। সংগঠনের পদ-পদবী ব্যবহার করে সারাক্ষণ সচিবালয়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকে।

সচিবালয়ে মহিলা নেত্রীদের কাজ কী? এমন প্রশ্নও তোলেন এ নেতারা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কে আসল কে নকল বোঝা বড় দায় শুধু নামের মিলে বেরোবির শিক্ষক হয়

নতুন নেতৃত্ব আসছে মহিলা লীগে

আপডেট সময় ০৪:৫৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২

• সম্মেলন যত এগিয়ে আসছে নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপও বাড়ছে 
• এবার যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে
• নিজেদের যোগ্য প্রমাণে মরিয়া মহিলা নেত্রীরা
• সম্মেলন ২৬ নভেম্বর, প্রধান অতিথি শেখ হসিনা 
• পরিবর্তন চান সিনিয়র নেতারাও 

২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে মহিলা নেত্রীদের দৌড়ঝাঁপও ততই বাড়ছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তা নিয়ে আলোচনাও জোরদার হচ্ছে।

সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বাসা থেকে শুরু করে অফিসে প্রতিনিয়ত হাজিরা দিচ্ছেন পদপ্রত্যার্শীরা। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে মরিয়া তারা। এর মধ্যে বর্তমান  সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এ সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কারণ, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবার নতুন মুখ আসছে বলে  জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগের ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গত মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গেলে তার সঙ্গে কথা বলেন  মহিলা লীগের দুই নেত্রী। আলাপের মাঝখানে সেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাদের বলেন, ‘তোমাদের (মহিলা আওয়ামী লীগের) নতুন নেতৃত্ব আসছে। পুরনো দু’জন থাকছেন না। সুযোগ আছে, তোমরা তো ত্যাগী, নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে তোমাদের চাওয়ার কথা বলো।’

ওই দুই নেত্রী তখন বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) তো আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গত মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।

১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন সফল করতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রস্তুত করা হচ্ছে মঞ্চ। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্র মতে, বর্তমানে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে থেকে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, সহ-সভাপতি আসমা জেরিন ঝুমু, শিরীন নাঈম পুনম ও আজিজা খানম কেয়া পদ প্রত্যাশা করছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রুকসানা, মীনা মালেক, জান্নাত আরা হেনরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আনারকলি পুতুল, সুলতানা রাজিয়া পান্না, নাসরীন সুলতানা, ঝর্ণা বাড়ৈ, ইসমত আরা হ্যাপী, দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজীও শীর্ষ দুই পদের একটিতে আসতে চাইছেন।

জানতে চাইলে সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, সম্মেলনের ভালো প্রস্তুতি চলছে। আমি পদপ্রত্যাশী, সাধারণ সম্পাদক ছিলাম যেহেতু, এখন সভাপতি প্রার্থী। আমাদের আগামীর নেতৃত্ব নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি যাকে নেতৃত্ব দেবেন সেই পাবেন। তিনি যে নেতৃত্ব দেবেন সেই নেতৃত্ব নিয়ে আমরা আগামী পথ চলব।

তিনি আরও বলেন, আমি গত পাঁচ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম কিন্তু বৈশ্বিক কারণে আমরা প্রায় আড়াই বছর কাজ করতে পারিনি। যতটা করা উচিৎ ছিল ততটা করতে পারিনি। আমি মনে করি, যতটুকু কাজ করতে পেরেছি, বাংলাদেশ মহিলা লীগের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক জেলা এবং জাতীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে, আমরা ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। অনেক সংগ্রাম, আন্দোলন, রাজপথে ছিলাম। আমি মনে করি, সংগঠনের জন্য অনেক কাজ করেছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সেই জায়গা থেকে আমি সভাপতির পদ প্রত্যাশা করতে পারি।’

এদিকে বর্তমান কমিটির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল গত জুলাইয়ে। এক সঙ্গে মহানগরের বেশ কিছু কমিটি ঘোষণা নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া বর্তমান সম্মেলনকে ঘিরেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সর্ম্পক ফাটলের বিষয়টিও স্পষ্ট।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম এবার সভাপতি পদ পেতে চান। নিজের পক্ষের নেত্রীদের নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে নিয়মিত মিছিলও করাচ্ছেন তিনি।

এবারের সম্মেলনের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরেকজন জান্নাত আরা হেনরী; যিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ থেকে সংগঠন করে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলাম, তারপর কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম, এখন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে আরও গতিশীল করার দরকার। আমি মনে করি, আমার কোনো পিছু টান নেই, দলকে আমি ওইভাবে সময় দিতে পারব, সুসংগঠিত করার জন্য সার্বক্ষণিক দলের জন্য সময় দিয়ে কাজ করতে পারব। দলকে গতিশীল করতে পারব।

বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও পদপ্রত্যাশী নাসরীন সুলতানা বলেন, আমি ১৯৯১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইডেন কলেজে প্রথমে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছয় বছর কাজ করেছি, পরে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমি কাজ করেছি। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম, তারপর সহ-সম্পাদক ছিলাম, এরপরে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলাম। এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। দায়িত্ব পেলে এই সংগঠন ভালোভাবে চালাতে পারব।

বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমত আরা হ্যাপী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমান রাজনীতিতে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন আমাদের নেত্রী। যারা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাই আগামী নেতৃত্বে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সে কারণে আমরা রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। সক্রিয় ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে আমরা তো পদ প্রত্যাশা করতেই পারি। নেত্রী আমাদের ব্যাপারে জানেন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তার ওপর আমার আস্থা আছে।’

দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন রোজী বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত অ্যাড. শুধাংশু শেখর হালদারের নির্বাচনী প্রচারণার অংশগ্রহণ করেছি। তার আগে কলেজ জীবনে স্বরুপকাঠি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক, ১৯৯৭ সালে কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি, ১৯৯৯ সালে সমাজ-কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলাম। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির এবং ২০১৭ সাল থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের এই পদে দায়িত্ব পালন করছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দলের দুঃসময়ে রাজনৈতিক মাঠে ছিলাম। নারী হয়েও মাঠ কখনো ছেড়ে চলে যাইনি। এখন দলের সুদিন চলছে, আমি আশা করি নেত্রী আমাদের মতো দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করবে।

পরিবর্তন চান সিনিয়র নেতারাও
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন চান। দলের একাধিক নেতা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন একটা রুটিন মাফিক কাজ। সংগঠন ভালোভাবে চালাতে পারলে কাউকে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত। সংগঠনকে তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছে। সংগঠনের পদ-পদবী ব্যবহার করে সারাক্ষণ সচিবালয়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকে।

সচিবালয়ে মহিলা নেত্রীদের কাজ কী? এমন প্রশ্নও তোলেন এ নেতারা।