ঢাকা ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আশীর্বাদে মিজানের সম্পদের পাহাড়

মিজানুর রহমান মিজান। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাবা নজরুল ইসলাম ছিলেন সামান্য কাঠ ব্যবসায়ী। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হওয়ার পর মিজান যেন পেয়ে গেছেন আলাদিনের চেরাগ। ৯ বছর ধরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির আখড়া। ঘুষ-বাণিজ্যে মিজান কামিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকা। তিস্তাপাড়ে তার রয়েছে অবৈধ বালু মহাল। রয়েছে নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স। এলাকায় শত শত একর জমি রয়েছে তার। বিদেশেও পাচার করেছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীর নামে কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। লালমনিরহাটের কাকিনার বানিনগরে শ্বশুরের নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পদ। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মিজান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজানের স্ত্রী তমা এলাকার ফার্স্ট লেডি বলে পরিচিত ছিলেন।

নিজের গাড়িতে মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে তমার বিরুদ্ধে। একবার বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ডিবি পুলিশ গাড়িটি আটক করলেও ‘ওপরের’ নির্দেশে মামলা থেকে রেহাই পান তমা। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপিএস মিজানের শ্যালক মূলত এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এপিএস মিজানের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত রেল কর্মচারী জাকির হোসেন। সোনা চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন মিজান। এই কাজে তার প্রধান সহযোগী ছিলেন স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক। মিজান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, মিজান অনামিকা ট্রেডার্সের নামে মহিষখোচা তিস্তা বাঁধ নির্মাণে ১০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র জোর করে নিয়ে নেন। পরে নিম্নমানের কাজ করায় ৬ মাসেই বাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। মহিষখোচায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮টি গ্রুপের ৪৪ কোটি টাকার কাজ সাব-কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে নেন মিজান; কিন্তু কাজ করেছেন নিম্নমানের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিজান সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস থাকার সময়ে আদিতমারীর মহিষখোঁচার কচুমুড়া এলাকায় ২০ বিঘা, বারঘরিয়া বালুঘাটে ১৫ বিঘা, গোবধন চরে ৫০ বিঘা জমি কেনেন। মহিষখোঁচা বাজারে রয়েছে তার কোটি টাকার ওপরে জমি। তিস্তাপাড়ে অবৈধ বালু মহাল থেকে দিনে তার আয় হতো কয়েক লাখ টাকা। নামে-বেনামে মিজান আদিতমারী পলাশীর বনচৌকি দোলাসহ বিভিন্ন স্থানে আরও দেড়শ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।

মিজানের ছোটভাই এরশাদুল হক চাকরি করেন হাতিবান্ধায় ভূমি অফিসের পিয়ন পদে। ২০তম গ্রেডে চাকরি করে বেতন পান ১০ হাজার টাকা। বড় ভাই মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় কর্মস্থলে না গিয়েও তুলতেন বেতন। তিনিও কোটি টাকার মালিক। মহিষখোঁচা বাজারে সোনালী ব্যাংকের সামনে বড় বড় গোডাউনে রয়েছে তার কয়েক কোটি টাকার ভুট্টা।

মিজানের দাপটে এলাকার সবাই ছিল তটস্থ। তার অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলাসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানো হতো। অভিযোগের বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে লালমনিরহাট জেলার দায়িত্বে কুড়িগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। এটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আশীর্বাদে মিজানের সম্পদের পাহাড়

আপডেট সময় ০৭:২১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিজানুর রহমান মিজান। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাবা নজরুল ইসলাম ছিলেন সামান্য কাঠ ব্যবসায়ী। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হওয়ার পর মিজান যেন পেয়ে গেছেন আলাদিনের চেরাগ। ৯ বছর ধরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বানিয়েছিলেন দুর্নীতির আখড়া। ঘুষ-বাণিজ্যে মিজান কামিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকা। তিস্তাপাড়ে তার রয়েছে অবৈধ বালু মহাল। রয়েছে নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স। এলাকায় শত শত একর জমি রয়েছে তার। বিদেশেও পাচার করেছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীর নামে কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। লালমনিরহাটের কাকিনার বানিনগরে শ্বশুরের নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পদ। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মিজান। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজানের স্ত্রী তমা এলাকার ফার্স্ট লেডি বলে পরিচিত ছিলেন।

নিজের গাড়িতে মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে তমার বিরুদ্ধে। একবার বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ডিবি পুলিশ গাড়িটি আটক করলেও ‘ওপরের’ নির্দেশে মামলা থেকে রেহাই পান তমা। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপিএস মিজানের শ্যালক মূলত এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত।

গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এপিএস মিজানের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত রেল কর্মচারী জাকির হোসেন। সোনা চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন মিজান। এই কাজে তার প্রধান সহযোগী ছিলেন স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক। মিজান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, মিজান অনামিকা ট্রেডার্সের নামে মহিষখোচা তিস্তা বাঁধ নির্মাণে ১০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র জোর করে নিয়ে নেন। পরে নিম্নমানের কাজ করায় ৬ মাসেই বাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে যায়। মহিষখোচায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮টি গ্রুপের ৪৪ কোটি টাকার কাজ সাব-কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে নেন মিজান; কিন্তু কাজ করেছেন নিম্নমানের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিজান সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস থাকার সময়ে আদিতমারীর মহিষখোঁচার কচুমুড়া এলাকায় ২০ বিঘা, বারঘরিয়া বালুঘাটে ১৫ বিঘা, গোবধন চরে ৫০ বিঘা জমি কেনেন। মহিষখোঁচা বাজারে রয়েছে তার কোটি টাকার ওপরে জমি। তিস্তাপাড়ে অবৈধ বালু মহাল থেকে দিনে তার আয় হতো কয়েক লাখ টাকা। নামে-বেনামে মিজান আদিতমারী পলাশীর বনচৌকি দোলাসহ বিভিন্ন স্থানে আরও দেড়শ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।

মিজানের ছোটভাই এরশাদুল হক চাকরি করেন হাতিবান্ধায় ভূমি অফিসের পিয়ন পদে। ২০তম গ্রেডে চাকরি করে বেতন পান ১০ হাজার টাকা। বড় ভাই মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় কর্মস্থলে না গিয়েও তুলতেন বেতন। তিনিও কোটি টাকার মালিক। মহিষখোঁচা বাজারে সোনালী ব্যাংকের সামনে বড় বড় গোডাউনে রয়েছে তার কয়েক কোটি টাকার ভুট্টা।

মিজানের দাপটে এলাকার সবাই ছিল তটস্থ। তার অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলাসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানো হতো। অভিযোগের বিষয়ে মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে লালমনিরহাট জেলার দায়িত্বে কুড়িগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে। এটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।