ঢাকা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীপু মনি চক্রে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ এখন বেকায়দায়

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই টিপু সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও টাকার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বে থেকেই নিয়োগের পর বেকায়দায় পড়েছেন চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ।

তিনি এক বছরের অধিক সময় নিয়োগ পেলেও এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি। নিয়োগকালীন বিদ্যালয়ের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এম আর শামীম ছিলেন অবৈধ সভাপতি। এমন অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতে মামলা করেন অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. হাসান খান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম আর শামীম ছিলেন দীপু মনির খুবই গনিষ্ঠ। যে কারণে দুইবার সভাপতি মনোনীত হন শামীম। তবে তাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারিনি কমিটির কেউ কেউ। পরের বার সভাপতি হয়ে মো. ইলিয়াছকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

সভাপতি যেহেতু অবৈধ, সে কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগও অবৈধ। মামলাসহ এসব কারণে প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ বহু চেষ্টা তদবির করেও তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেনি। তিনি শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করে তার কাগজপত্র কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিসে প্রেরণ করেন।

জানা গেছে, অভিবাবক সদস্যের মামলার কারণে এই বিদ্যালয়ের কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করে উচ্চ আদালত। ফলে মাউশির নিয়মানুসারে মামলা চলাকালীন কোন শিক্ষক অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতির শিকার হন প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ।

এদিকে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ। ৬ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালাবদ্ধ করে দেয় বহিরাগত লোকজন। এমন তথ্য দিলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও কমিটির সদস্য দ্বিনেশ।

দ্বিনেশ বলেন, আমি গত দুই বছর বিদ্যালয়ের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছি। বিদ্যালয়ের পান্ডে টাকা না থাকায় শিক্ষকরা গত ১২ মাস কোন সম্মানি নিতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। টাকার এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপুসহ সভাপতি এমআর শামীম। এসব কারণে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মামলা হয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় প্রধান শিক্ষক তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি।

প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ের আয়ের উৎস থেকে লাখ লাখ টাকা ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মানি দিতে পারেননি।

এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ মিয়া বলেন, যারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক না কেন এসব অভিযোগ সত্য না। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি নিয়মের বাহিরে কোন কাজ করিনি। আমার সকল কাজের তথ্য প্রমাণ আছে।

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সাবেক সভাপতি এম আর শামীম বলেন, আমি দুইবার সভাপতি ছিলাম। আমার সঙ্গে দীপু মনি ও তার ভাইয়ের সঙ্গে সু-সসম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোন টাকা লেনদেন হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখে। নিয়োগে আমি যদি কোন টাকা নিয়ে থাকি তাহল প্রমাণ করুক। প্রমাণিত হলে আমার যা শাস্তি হয় হবে।

চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, এই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পর তার এমপিও করতে দেরি হচ্ছে। কারণ মামলা আছে। প্রধান শিক্ষকের কাগজপত্র সঠিক থাকলে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাতে বাধ্য। আমাদের বিষয়ে কেউ ভুল তথ্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের জায়গায় আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ। আজকেও ওই বিদ্যালয় থেকে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু মনি চক্রে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ এখন বেকায়দায়

আপডেট সময় ০৪:৫৩:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই টিপু সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও টাকার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বে থেকেই নিয়োগের পর বেকায়দায় পড়েছেন চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ।

তিনি এক বছরের অধিক সময় নিয়োগ পেলেও এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি। নিয়োগকালীন বিদ্যালয়ের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এম আর শামীম ছিলেন অবৈধ সভাপতি। এমন অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতে মামলা করেন অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. হাসান খান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এম আর শামীম ছিলেন দীপু মনির খুবই গনিষ্ঠ। যে কারণে দুইবার সভাপতি মনোনীত হন শামীম। তবে তাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে পারিনি কমিটির কেউ কেউ। পরের বার সভাপতি হয়ে মো. ইলিয়াছকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

সভাপতি যেহেতু অবৈধ, সে কারণে প্রধান শিক্ষক নিয়োগও অবৈধ। মামলাসহ এসব কারণে প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ বহু চেষ্টা তদবির করেও তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেনি। তিনি শিক্ষা অফিস ম্যানেজ করে তার কাগজপত্র কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিসে প্রেরণ করেন।

জানা গেছে, অভিবাবক সদস্যের মামলার কারণে এই বিদ্যালয়ের কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করে উচ্চ আদালত। ফলে মাউশির নিয়মানুসারে মামলা চলাকালীন কোন শিক্ষক অথবা কর্মচারী নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতির শিকার হন প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ।

এদিকে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ। ৬ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালাবদ্ধ করে দেয় বহিরাগত লোকজন। এমন তথ্য দিলেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও কমিটির সদস্য দ্বিনেশ।

দ্বিনেশ বলেন, আমি গত দুই বছর বিদ্যালয়ের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছি। বিদ্যালয়ের পান্ডে টাকা না থাকায় শিক্ষকরা গত ১২ মাস কোন সম্মানি নিতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। টাকার এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপুসহ সভাপতি এমআর শামীম। এসব কারণে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মামলা হয়েছে। মামলা চলমান অবস্থায় প্রধান শিক্ষক তার এমপিও স্থানান্তর করতে পারেননি।

প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ের আয়ের উৎস থেকে লাখ লাখ টাকা ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মানি দিতে পারেননি।

এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. ইলিয়াছ মিয়া বলেন, যারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক না কেন এসব অভিযোগ সত্য না। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি নিয়মের বাহিরে কোন কাজ করিনি। আমার সকল কাজের তথ্য প্রমাণ আছে।

প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সাবেক সভাপতি এম আর শামীম বলেন, আমি দুইবার সভাপতি ছিলাম। আমার সঙ্গে দীপু মনি ও তার ভাইয়ের সঙ্গে সু-সসম্পর্ক ছিল। কিন্তু কোন টাকা লেনদেন হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখে। নিয়োগে আমি যদি কোন টাকা নিয়ে থাকি তাহল প্রমাণ করুক। প্রমাণিত হলে আমার যা শাস্তি হয় হবে।

চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, এই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পর তার এমপিও করতে দেরি হচ্ছে। কারণ মামলা আছে। প্রধান শিক্ষকের কাগজপত্র সঠিক থাকলে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাতে বাধ্য। আমাদের বিষয়ে কেউ ভুল তথ্য দিতে পারে। কিন্তু কাজের জায়গায় আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ। আজকেও ওই বিদ্যালয় থেকে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে।