ঢাকা ০১:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে সরকারি গাছ কেটে সাবাড়

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন স্থান থেকে গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালের সাক্ষী শতবর্ষী শত শত গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের ৫০টি গাছ কেটে নিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মকর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও একই ইউনিয়নের খুলুমবেড়বাড়ি গ্রামের মো. নাসির উদ্দিন। গাছের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জেলা পরিষদের। আর এসব বিষয়ে অভিযোগের তির সদ্য অপসারিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদের দিকে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা উপ-সচিব সেলিম রেজা গাছ কেটে নেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের দুই একর পাঁচ শতক জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। ২৫ বছর আগে ওই পুকুরের পাড়ে এক একর ৫৩ শতক জমিতে শাতাধিক গাছ লাগানো হয়। গাছগুলোর ওপর নজর পড়ে জেলা পরিষদের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদসহ দুই ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও মো. নাসির উদ্দিনের। নব্বই হাজার টাকা দিয়ে ৫০টি গাছ কেনার কথা স্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের আতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী মো. রুবেল ইসলাম।

রুবেলের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও মো. নাসির উদ্দিন গাছগুলো বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেওয়া হয়েছিল তাকে। ৭-৮ মাস আগে ওই কাগজ সূত্রে গাছগুলো কেটেছেন তিনি। তার আগে কাগজের সঠিকতা জানতে জেলা পরিষদে যাওয়ার পরে চেয়ারম্যানের পিএস নাজমুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। গাছ কাটার সময় পিএস নাজমুলসহ জেলা পরিষদের ২-৩ জন কর্মচারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করে রুবেলের। তবে নাজমুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা পরিষদে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় প্রসেস সার্ভেয়ার আকামত হোসেন মিল্টনকে। তিনি জানান লক্ষ্মীপুরের ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। জড়িতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা যুগান্তরকে বলেন, সরকারি মালিকানাধীন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরের একটি গাছও বিক্রি করা হয়নি। বেআইনিভাবে যারা গাছ কাটে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ ও তার পিএস নাজমুল জেলা পরিষদ চত্বরে ঝড়ে পড়া এবং জেলা শহরের আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন চারশ বছরের পুরাতন রেন্ট্রি গাছ বিক্রি করে আত্মসাৎ করে ফেঁসে যান। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ এবং ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা চালান মাধ্যমে জেলা পরিষদের তহবিলে জমা দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উইকেয়ার ফেজ-১ ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৪৮টি নানা প্রজাতির গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। ওই গাছের মধ্যে ৪৮টির বেশি গাছের বয়স ছিল কমপক্ষে ৪০০ বছর। বিশেষ প্রজাতির রেন্ট্রি গাছগুলো ব্রিটিশ সরকারের সময়ে সড়কের দুই ধারে লাগানো হয়েছিল। জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৯২২ টাকায় ১৫টি লটে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এতে জেলা পরিষদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের গাছের টেন্ডার করা হয়েছিল। সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের করা টেন্ডার বাতিল করে কয়েকটি গ্রুপের পুনঃটেন্ডার করা হয়। আগের চেয়ে বেশি দরে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে কত টাকা তা বলতে পারব না। সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরের পুকুর পাড়ের গাছ বিক্রি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঘটনা মনে নেই বলে জানান তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিনাইদহে সরকারি গাছ কেটে সাবাড়

আপডেট সময় ০৪:২০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন স্থান থেকে গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালের সাক্ষী শতবর্ষী শত শত গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের ৫০টি গাছ কেটে নিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মকর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও একই ইউনিয়নের খুলুমবেড়বাড়ি গ্রামের মো. নাসির উদ্দিন। গাছের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে জেলা পরিষদের। আর এসব বিষয়ে অভিযোগের তির সদ্য অপসারিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদের দিকে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা উপ-সচিব সেলিম রেজা গাছ কেটে নেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের দুই একর পাঁচ শতক জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। ২৫ বছর আগে ওই পুকুরের পাড়ে এক একর ৫৩ শতক জমিতে শাতাধিক গাছ লাগানো হয়। গাছগুলোর ওপর নজর পড়ে জেলা পরিষদের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদসহ দুই ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও মো. নাসির উদ্দিনের। নব্বই হাজার টাকা দিয়ে ৫০টি গাছ কেনার কথা স্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের আতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী মো. রুবেল ইসলাম।

রুবেলের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম আতিক ও মো. নাসির উদ্দিন গাছগুলো বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেওয়া হয়েছিল তাকে। ৭-৮ মাস আগে ওই কাগজ সূত্রে গাছগুলো কেটেছেন তিনি। তার আগে কাগজের সঠিকতা জানতে জেলা পরিষদে যাওয়ার পরে চেয়ারম্যানের পিএস নাজমুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। গাছ কাটার সময় পিএস নাজমুলসহ জেলা পরিষদের ২-৩ জন কর্মচারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করে রুবেলের। তবে নাজমুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা পরিষদে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় প্রসেস সার্ভেয়ার আকামত হোসেন মিল্টনকে। তিনি জানান লক্ষ্মীপুরের ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। জড়িতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা যুগান্তরকে বলেন, সরকারি মালিকানাধীন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরের একটি গাছও বিক্রি করা হয়নি। বেআইনিভাবে যারা গাছ কাটে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ ও তার পিএস নাজমুল জেলা পরিষদ চত্বরে ঝড়ে পড়া এবং জেলা শহরের আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন চারশ বছরের পুরাতন রেন্ট্রি গাছ বিক্রি করে আত্মসাৎ করে ফেঁসে যান। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ এবং ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা চালান মাধ্যমে জেলা পরিষদের তহবিলে জমা দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উইকেয়ার ফেজ-১ ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৪৮টি নানা প্রজাতির গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। ওই গাছের মধ্যে ৪৮টির বেশি গাছের বয়স ছিল কমপক্ষে ৪০০ বছর। বিশেষ প্রজাতির রেন্ট্রি গাছগুলো ব্রিটিশ সরকারের সময়ে সড়কের দুই ধারে লাগানো হয়েছিল। জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৯২২ টাকায় ১৫টি লটে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এতে জেলা পরিষদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের গাছের টেন্ডার করা হয়েছিল। সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের করা টেন্ডার বাতিল করে কয়েকটি গ্রুপের পুনঃটেন্ডার করা হয়। আগের চেয়ে বেশি দরে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে কত টাকা তা বলতে পারব না। সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরের পুকুর পাড়ের গাছ বিক্রি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঘটনা মনে নেই বলে জানান তিনি।