ইসরাইলি সৈন্যরা দক্ষিণ গাজার একটি টানেল থেকে দ্বৈত মার্কিন নাগরিকসহ আরও ৬ জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
রোববার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসরাইলি মিডিয়াগুলোর বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, মূলত এই জিম্মিদের উদ্ধার এবং হামাসকে নির্মূল করার জন্যই ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনি উপত্যকাজুড়ে দীর্ঘ ১১ মাস ধরে মারাত্মক আক্রমণ ও গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বে অবিস্মরণীয় অভিযানে ১,১০০ জনেরও বেশি ইহুদি নিহত হয় এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আড়াই শতাধিক ইসরাইলিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এর ফলে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইল বর্বর আগ্রাসন শুরু করে। যতে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৭৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বেশীরভাগই নারী ও শিশু।
এছাড়াও ইসরাইলের অবিরাম বোমাবর্ষণের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কারণ ইসরাইল সরকারের বিরুদ্ধে বন্দিদের মুক্ত করার জন্য ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি চুক্তি নস্যাত করার অভিযোগ রয়েছে।
রোববার ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, মৃতদের দেহাবশেষ রাফাহ এলাকার একটি ভূগর্ভস্থ টানেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে আনা হয়েছে এবং সেখানেই ওই ৬ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
গাজায় জিম্মি থাকা এ ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কিছুদিন আগেই তাদের হত্যা করা হয়েছিল বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- হার্শ গোল্ডবার্গ পোলিন (২৩), ইডেন ইরেশালমি (২৪), ওরি ড্যানিনো (২৫), অ্যালেক্স লুবনভ (৩২), কারমেল গ্যাট (৪০) এবং আলমোগ সারুসি (২৭)।
এদের মধ্যে ড্যানিনো ছিলেন একজন অফ-ডিউটি ননকমিশনড অফিসার। তাকেসহ গোল্ডবার্গ পোলিন, ইরেশালমি, লুবনভ এবং সরুসিকে কিবুতজ রেইমের কাছে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহরণ করা হয়। অন্যদিকে গ্যাটকে অপহরণ করা হয় কিবুতজ বেইরি থেকে।
ইসরাইলি বাহিনী জানায়, তাদের প্রত্যেকের মাথায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে গুলোর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ওয়াইনেট নিউজ সাইট জানিয়েছে, একটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাদের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে তাদের হত্যা করা হয়েছিল।
ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স- আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাড. ড্যানিয়েল হাগারি দাবি করেছেন, তাদের সৈন্যরা সেখানে পৌঁছানোর আগে, সম্ভবত তাদের খুঁজে পাওয়ার এক বা দুই দিন আগে ওই ৬ জনকে হামাস হত্যা করেছে।
তবে ইসরাইলের দাবি প্রত্যাখ্যান করে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশেক বলেছেন, ইসরাইলের বিমান হামলাতেই ওই ৬ বন্দি নিহত হয়েছেন।
আল-রিশেক উলটো অবরুদ্ধ গাজায় দীর্ঘ ১১ মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞে সমর্থন এবং অংশীদারিত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছেন।
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে এর ‘যথাযথ জবাব’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের সবাইকে খুঁজে বের করব’।
নেতানিয়াহু বলেছেন, যারা জিম্মিদের হত্যা করে, তারা গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য কোনো চুক্তিই করতে চায় না।
এদিকে বন্দিদের পরিবারের একটি ফোরাম নেতানিয়াহুর নীতির ব্যাপক সমালোচনা করেছে। তারা রোববার ছয় বন্দির লাশ উদ্ধারের পরে একটি বিশাল বিক্ষোভের ডাক দেয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তিতে চাপ দেওয়ার জন্য ‘পুরো ইসরাইলকে আচল’ করে দেওয়ার ডাক দেয় তারা।
এদিন জিম্মি ও নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের ফোরামটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য চুক্তির বিষয়টি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে। বিলম্ব, নাশকতা এবং অজুহাতের মতো বিষয়গুলো না থাকলে, যাদের মৃত্যুর খবর আমরা আজ সকালে জানতে পেরেছি, তারা সম্ভবত এখনও বেঁচে থাকত। আমাদের জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার এখনই সময়’।
এদিকে সামাজিক মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া একটি ভিডিও বিবৃতিতে, যুদ্ধবিরতির দাবিতে এবং জিম্মিদের কারণে ‘যাদের হৃদয় ভেঙেছে’ এমন প্রত্যেক নাগরিককে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিদ।
তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহু এবং তার ডেথ ক্যাবিনেট জিম্মিদের উদ্ধার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি দেশের অর্থনীতিকে অচল করে দেবার জন্য হিস্তাদ্রুত (ইসরাইলের প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন), শ্রমিক-কর্মচারী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি’। সূত্র: আল-জাজিরা ও টাইমস অব ইসরাইল