কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বলরামপুর সিঙ্গাপুর মার্কেটের পাশে মো. ইউসুফ আলি লিপু (৫২) নামের এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বলরামপুর নিজ বাড়িতে গলায় গামছা বেদে আত্মহত্যা করে ইউসুফ আলি লিপু। লিপুর বাসায় তার অসুস্থ্য বাবা-মা আর কেয়ারটেকার দিপু ও তার স্ত্রী সুমি আক্তার থাকেন। স্ত্রী এনিতা লিপুকে ডিভোর্স দিয়ে সন্তান নিয়ে ঢাকাতে চলে যায়। তার ৪ ভাই ১ বোন। লিপু ছাড়া বাকি সবাই আমেরিকাতে থাকেন। স্ত্রী এনিতা লিপুকে ডিভোর্স দেন আজ থেকে ২ বৎসর আগে। ডিভোর্স দিয়ে সন্তান নিয়ে ঢাকাতে চলে যায় এনিতা। লিপুর মৃত্যুর সংবাদ শুনেও কেউ আসে নাই। অসুস্থ্য বাবা মাকে নিয়ে বাড়িতে একাই থাকতেন লিপু।
ইউসুফ আলি লিপুর ঢাকাতে বাড়ি এবং ব্যবসাও রয়েছে। তার ছিলো না কোন পিছুটান। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন সাথে তাহাজ্জুদ নামাজও পড়তেন রেগুলার। আর পাশাপাশি অসুস্থ্য বাবা মায়ের সেবা করতেন। পরিবারের সকল খরচ বহন করতেন তার ভাইয়েরা। ২৭ আগস্ট সকালে সে তার মায়ের রুমে শুয়ে থাকে। মায়ের সাথে কথা বলে সাড়ে এগারোটার দিকে সে তার রুমে যায়। বেলা ১২ টার দিকে কেয়ারটেকার দিপু তার রুমে এসে দেখে, সে গলায় গামছা বেদে সিলিং পাখার সাথে ঝুলে আছে। কেয়ারটেকার সহ আশেপাশের কয়েকজন এসে তাকে নামিয়ে ডাক্তার আনলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
আমাদের কাছে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায় সে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে কিন্তু তার পা গুলো খাট থেকে প্রায় অনেক নিচে। গামছার ভানটাও অনেক উপরে। শুরুতে ভিডিওটি করেন কেয়ারটেকার দিপু।
স্থানীয় লোকজন বলেন, লিপু অনেক ভালো লোক ছিলো সে আত্মহত্যা করতেই পারে না। তার কোন কিছুর অভাব নাই সে কেন আত্মহত্যা করবে। এখানে কোন রহস্য আছে কিনা দেখা দরকার।
কেয়ারটেকার দিপুর স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, উনার মতো ভালো লোক আমি আর একজন দেখি নাই। সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজও পড়তো। ভাইয়েরার কাছে যা চাইতো তাই দিতো। কোন কিছুর অভাব ছিলো না। তার ব্যতিক্রমের মধ্যে একটাই ছিলো সে কোথায় যেন টাকা পাঠাইতো।
কেয়ারটেকার দিপু বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে এখানে থাকি। লিপু কাকা অনেক ভালো লোক ছিলো। সে ঐদিন সকাল থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত তার মায়ের রুমে ছিলো। পরে তার রুমে গেলে আমি তাকে নাস্তার কথা জিজ্ঞেসা করি। সে এক গ্লাস পানি খেয়ে আমাকে পুকুরে মাছ ধরতে পাঠায়। মাছ ধরে ১২ টার দিকে এসে দেখি সে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আমি লোকজন নিয়ে এসে তাকে নামিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসি। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। মাঝখানে সে মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে নিউ জাগরণী মাদকাসক্ত কেন্দ্রে দিয়ে ছিলো। পরে সে পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সে কোথায় যেন লাখ লাখ টাকা পাঠাতো।
লিপুর বন্ধু মামুন বলেন, লিপু আমার কাছের বন্ধু। সে খুবই ভালো লোক। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তার কোন কিছুর অভাব নাই। আমার বন্ধু আত্মহত্যা করতে পারেই না। যদি এখানে কোন রহস্য থাকে তাহলে প্রশাসন যেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়।
লিপুর সাবেক ম্যানেজার ইকবাল হোসেন বলেন, স্যার অনেক ভাল লোক ছিলেন। সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সে আত্মহত্যা করার মতো লোক না।
নিউ জাগরণী মাদকাসক্ত কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার বড় ভাই তাকে আমাদের এখানে দিয়ে ছিলো।
ইউসুফ আলি লিপুর মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার ছেলে নেশা করতো না। সে অনেক ভালো ছিলো। আমার ছেলে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ্য ছিলো। সে সকালে আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলছে এবং আমার রুমেই শুয়ে ছিলো।
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জানি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসলে তদন্ত করা হবে।