প্রাকৃতিক সম্পদের আধার ইউরোশিয়ার দেশ আজারবাইজান। ক্যাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী দেশটি এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল। এবার সেই আজারবাইজানের দিকে নজর পড়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। গেল ৬ বছরের মধ্যে এ প্রথম দেশটি সফরে গেলেন তিনি।
পুতিনের দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষ করে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চোখের ঘুম চলে গেছে।
আজারবাইজান ও ইউক্রেনের মধ্যে শত শত কিলোমিটারের দূরত্ব। অথচ পুতিনের আজারবাইজান সফর ঘিরে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন কিয়েভ। কেননা পুতিনের এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কী ধরনের চুক্তি হবে তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
মস্কো বলছে, বাকুর সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক দিক নিয়ে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও দুই দেশের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানায় মস্কো।
মজার বিষয় হচ্ছে, পুতিনের এই সফর নিয়ে আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে আজারবাইজানের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও। তাদের বিশ্বাস, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে আপাতত যে শান্তি ফিরেছে, পুতিনের সফরের কারণে তা মাঠে মারা যেতে পারে। আর্মেনিয়াও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। এই দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
অ্যাটলাস রিসার্চ সেন্টারের প্রধান এলখান শাহিনোগলু বলেছেন, ইউক্রেন বাহিনীর দখল করে নেওয়া কুরস্ক অঞ্চল পুনরুদ্ধারে নতুন সেনা দরকার পুতিনের। এজন্য আর্মেনিয়ার গুমরিতে সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দিয়ে ওই সেনাদের ইউক্রেনীয় ফ্রন্টে মোতায়েন করা হতে পারে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং নিজের সম্মান পুনরুদ্ধার পুতিনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য আজারবাইজানের সহযোগিতা দরকার ক্রেমলিনের।
২০২২ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেল রপ্তানি করে যাচ্ছে আজারবাইজান। সম্প্রতি স্লোভেনিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি শুরু করে বাকু। ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপে রাশিয়া বাজার হারানোর পর সেই জায়গা আস্তে আস্তে দখলে নিচ্ছে আজারবাইজান।
এমনকি ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি নিয়ে ইউরোপের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য বাকুর দ্বারস্থ হয়েছে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে আজারবাইজান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করতে চাইছে ইউরোপ। কিন্তু পুতিনের নতুন পরিকল্পনায় আজারবাইজান হাত মেলালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ইউক্রেনের। আর তাই এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।
যদিও ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশই আজারবাইজানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতিতে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই বিশ্বাস বিশ্লেষকদের।