ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নাটোরের বড়াইগ্রাম বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলী মারা গেছে চাঁদপুরের মতলবে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন। পুলিশি সেবায় জনমনে শস্তি ও আস্থা দূর্নীতি মুক্তি, রাষ্ট্র গঠনে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসার আহব্বান আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ তহবিলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আর্থিক অনুদান প্রদান বোরহানউদ্দিনে মসজিদের সুপারি পাড়তে বাঁধা দেওয়ায় পাহারাদার রফিককে কুপিয়ে জখম – আটক ৩ গণতন্ত্রসহ মানব রচিত সকল মতবাদ চরম দুর্নীতি এবং কুফরী ও শিরকী ব্যবস্থা-জাহান্নামের পথ- আমীর, ইসলামী সমাজ। গণতন্ত্রসহ মানব রচিত সকল মতবাদ চরম দুর্নীতি এবং কুফরী ও শিরকী ব্যবস্থা-জাহান্নামের পথ- আমীর, ইসলামী সমাজ। রাজশাহী দুর্গাপুরে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ গোয়াইনঘাটের পাথর কোয়ারীতে যৌথবাহিনীর অভিযান : ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড গ্রেফতার ২

মৃত্যুর আগে মা-বাবার ছবি দেখতে চেয়েছিলেন কনস্টেবল রুবেল

ভালো-মন্দ কুশল বিনিময়ের সময় হঠাৎ করে ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে বলেছিলেন, মা-বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তুই কোনো কষ্ট দিস না, তোর অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো সমস্যা হয়েছি কি; এমন প্রশ্নের উত্তরে বলল, না কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সমাধানও আছে, তুমি বাড়িতে আস, রুবেল তখন জানায়, কাল (মঙ্গলবার) বাড়িতে আসবে। ওই সময় রাসেলের কাছে বাবা-মার ছবি থাকলে কয়েকটা ছবি মোবাইলে দিতে বলেছিল রুবেল।

১৪০টি ট্যাবলেট খেয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে যাওয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মিয়ার মৃত্যুর পূর্বে হোয়াটসআপে এসব কথা হয় তার ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে।

ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে দেওয়া কথাও রেখেছে রুবেল মিয়া। মঙ্গলবার নিজ জন্মভূমিতে সে ফিরে এসেছে। তবে সাদা কাপড়ের ওপরে কালো পলিথিনে মোড়ানো চিরঘুমে থাকা নিথর দেহ। বিকালে নিথর দেহের ওপর লুটিয়ে পড়েন স্বজনরা।

ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যান তার মা নুরুন্নাহার বেগম। স্বামী হারানো জেসমিন আক্তারের দুসন্তানকে নিয়ে আর্তনাদে শোকে কাতর স্বজনরা কেউ চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি। তার রেখে যাওয়া ছেলে সন্তানের বয়স ৬ বছর ও কন্যার বয়স ৫ বছর।

রুবেল মিয়া এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের পুত্র। ২০১৪ সালে পাছার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। ২০১৬ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল নেত্রকোনা মডেল থানা।

পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় সর্বশেষ কথা হয় ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে। সেই কথা শেষ হওয়ার পর রাতে ১২টার দিকে ফেসবুক আইডিতে ‘দ্য ইন্ড’ লিখে স্ট্যাটাস দেন রুবেল মিয়া। এটি রাত ১২টার দিকে তার ছোট ভাই রাসেল মিয়া দেখে পুলিশ জরুরি নাম্বার ৯৯৯-এ কল দেন। এরপর নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। দ্রুত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রুবেল মিয়া মারা যান।

তিনি নেত্রকোনা শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত সপ্তাহে স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে চলে যাওয়ার পর থানা ব্যারাকে থাকতেন।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, কনস্টেবল রুবেল মিয়া ৮ বছর ৬ মাস ২৯ দিন আগে পুলিশে যোগদান করেন। নেত্রকোনা মডেল থানায় ১ বছর ৬ মাস আগে যোগদান করেন। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়মনসিংহে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তার লাশ নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী আখরালপাড়ায় পৌঁছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোরের বড়াইগ্রাম বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলী মারা গেছে

মৃত্যুর আগে মা-বাবার ছবি দেখতে চেয়েছিলেন কনস্টেবল রুবেল

আপডেট সময় ১১:২১:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

ভালো-মন্দ কুশল বিনিময়ের সময় হঠাৎ করে ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে বলেছিলেন, মা-বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তুই কোনো কষ্ট দিস না, তোর অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো সমস্যা হয়েছি কি; এমন প্রশ্নের উত্তরে বলল, না কোনো সমস্যা নেই। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সমাধানও আছে, তুমি বাড়িতে আস, রুবেল তখন জানায়, কাল (মঙ্গলবার) বাড়িতে আসবে। ওই সময় রাসেলের কাছে বাবা-মার ছবি থাকলে কয়েকটা ছবি মোবাইলে দিতে বলেছিল রুবেল।

১৪০টি ট্যাবলেট খেয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে যাওয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মিয়ার মৃত্যুর পূর্বে হোয়াটসআপে এসব কথা হয় তার ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে।

ছোট ভাই রাসেল মিয়াকে দেওয়া কথাও রেখেছে রুবেল মিয়া। মঙ্গলবার নিজ জন্মভূমিতে সে ফিরে এসেছে। তবে সাদা কাপড়ের ওপরে কালো পলিথিনে মোড়ানো চিরঘুমে থাকা নিথর দেহ। বিকালে নিথর দেহের ওপর লুটিয়ে পড়েন স্বজনরা।

ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যান তার মা নুরুন্নাহার বেগম। স্বামী হারানো জেসমিন আক্তারের দুসন্তানকে নিয়ে আর্তনাদে শোকে কাতর স্বজনরা কেউ চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি। তার রেখে যাওয়া ছেলে সন্তানের বয়স ৬ বছর ও কন্যার বয়স ৫ বছর।

রুবেল মিয়া এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের পুত্র। ২০১৪ সালে পাছার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। ২০১৬ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল নেত্রকোনা মডেল থানা।

পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় সর্বশেষ কথা হয় ছোট ভাই রাসেল মিয়ার সঙ্গে। সেই কথা শেষ হওয়ার পর রাতে ১২টার দিকে ফেসবুক আইডিতে ‘দ্য ইন্ড’ লিখে স্ট্যাটাস দেন রুবেল মিয়া। এটি রাত ১২টার দিকে তার ছোট ভাই রাসেল মিয়া দেখে পুলিশ জরুরি নাম্বার ৯৯৯-এ কল দেন। এরপর নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। দ্রুত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রুবেল মিয়া মারা যান।

তিনি নেত্রকোনা শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত সপ্তাহে স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে চলে যাওয়ার পর থানা ব্যারাকে থাকতেন।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, কনস্টেবল রুবেল মিয়া ৮ বছর ৬ মাস ২৯ দিন আগে পুলিশে যোগদান করেন। নেত্রকোনা মডেল থানায় ১ বছর ৬ মাস আগে যোগদান করেন। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়মনসিংহে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তার লাশ নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের সহনাটী আখরালপাড়ায় পৌঁছে। বিকাল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।