নেত্রকোনা সদর উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি থেকে পিস্তল, গুলি, বোমাসহ ৮০ ধরনের সরঞ্জাম জব্দের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সন্ত্রাস দমন আইনে নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলা করেন ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনিছুর আশেকিন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) থানার উত্তর বালিহারি গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার ছেলে মো. হামিম হোসেন ওরফে ফাহিম ওরফে আনোয়ার হোসেন ওরফে শাহজালাল, ও তার স্ত্রী উম্মে হাফছা (২৫) ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ এলাকার আব্দুল হাইয়ের জামাতা সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফুল (৪২) ও সাতক্ষীরা জেলা সদরের মাগুরা পূর্বপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম ওরফে আতিক (৩৭)। এছাড়াও অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে জেলা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, বিশেষ অস্ত্র ও কৌশল (সোয়াত), সাইবার টিমসহ বেশ কয়েকটি বিশেষ টিমের সমন্বয়ে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযান শেষ হয় গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এর আগে গত শনিবার বেলা ১টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে জেলা পুলিশ। ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন অভিযান সম্পন্নের ঘোষণা দিয়ে নিশ্চিত করেন বাড়িটি জঙ্গিদের একটি প্রশিক্ষণ শিবির।
অভিযানে পিস্তল, গুলি, ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি, মোবাইল ফোন, রামদা, জিহাদি বইসহ ৮০ ধরনের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় ছয়টি শক্তিশালী আইইডি (দূর নিয়ন্ত্রিত) বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। প্রায় তিন একর জমিতে থাকা উঁচু প্রাচীর দেওয়া বাড়িটিতে তারা আড়াই বছর ধরে বাস করে আসছিল।
অভিযান সমাপ্তের পর ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ বাড়িটিতে ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবকসহ কয়েকজন ভাড়া থাকত। এই আরিফ গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গত শনিবার দুপুরে প্রথম নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালামের নেতৃত্বে ভাসাপাড়া গ্রামের দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। অভিযানে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১৭টি গুলি, ২টি ওয়াকিটকি, ১টি হাতকড়া ও ১ বস্তা জিহাদি বই উদ্ধার করে। এরপর অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ও সোয়াট টিম গত রোববার দ্বিতীয় দফা অভিযান চালায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে ওই বাড়ির কিছুই বাইরে থেকে দেখা যেত না। বাড়িটির নারকেল গাছ, আমগাছসহ সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
জেলা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাড়িটির ভিতরে ১৫-২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপযোগী পরিবেশ ছিল। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতায় জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।