ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আগষ্টিনের সহোচর কল্পনা ফলিয়ার যত প্রতারণা হাসিনার বিশ্বস্ত আমলা পাওয়ার গ্রিডের এ.কে. আজাদ এখনও বহাল তবিয়তে নাটোরের অনার্স শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির দাবিতে ডিসিকে স্মারকলিপি প্রদান ঈশ্বরদীতে উপজেলা যুবদলের উদ্যোগে ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন বাকেরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময় আদালতের নির্দেশে আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাশ উত্তোলন বোরহানউদ্দিনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত গোপন তদন্তের মুখে আ.লীগ আমলের পুলিশ কর্মকর্তারা ক্যাডেট এসআইরাও তদন্তের আওতায় সিলেটে দেড় থেকে ২ কোটি ব্যারেল তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না: রিজওয়ানা হাসান

নৌদুর্ঘটনায় অর্থদণ্ড বাড়িয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত

মালিক, চালক বা শ্রমিকদের আইনভঙ্গ, অবহেলা অথবা অসদাচরণের কারণে নৌযান দুর্ঘটনা ঘটলে এবং মানুষের প্রাণহানি হলে বিদ্যমান ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধানই বহাল রাখছে সরকার। এই অপরাধে বাড়ছে শুধু অর্থদণ্ডের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান যুক্ত করে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। এতে ফিটনেস (সার্ভে) সনদ ছাড়া নৌযানে যাত্রী ও মালামাল বহন, অযোগ্য চালক (মাস্টার) দিয়ে নৌযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন অপরাধেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এসব অপরাধেও আগের মতোই কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই খসড়া আইনটি পাশ করতে জাতীয় সংসদে উত্থাপনের প্রক্রিয়া করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। যদিও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত এই আইন নৌদুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে কি না-তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে বড় আকারের নৌযান চলাচল বেড়েছে। এসব নৌযানে যাত্রী ও মাল দুই-ই বেশি বহন করা যায়। বড় দুর্ঘটনা হলে প্রাণহানিও বেশি হবে। আইনে কঠোর সাজার বিধান না থাকলে তা মালিক-শ্রমিকরা তোয়াক্কা করতে চাইবেন না-এটাই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে এর বড় উদাহরণ গত রোজার ঈদের দিন রাজধানীর সদরঘাটে এক লঞ্চের ধাক্কায় অপর লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে নারী ও শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা।

নৌ খাতের এমন অবস্থার মধ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৪’। এ বছরের প্রতিবাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান।’ আজ রাজধানীতে এ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌদুর্ঘটনা হ্রাসে নদীবন্দরসমূহে নিরাপত্তা জোরদার, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান শনাক্তকরণ, নাবিকদের প্রশিক্ষণ আধুনিকীকরণ, নৌনিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে নৌযান ও নৌযানে যাত্রীসাধারণের চলাচল আরও নিরাপদ হয়েছে।’

প্রস্তাবিত আইন পাশ হলে তা নৌনিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা কার্যকর হবে-জানতে চাইলে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম যুগান্তরকে বলেন, নৌযান মালিক, শ্রমিক, যাত্রীসহ সবাই যদি আইন মেনে চলেন, তাহলে এই আইন দিয়েই নৌনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কারাদণ্ড বাড়ছে না, বাড়বে অর্থদণ্ড। মূল্যস্ফীতি ও মানুষের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ আইনে অর্থদণ্ড বাড়ানো হচ্ছে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার আগাম প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে নৌপথে যাত্রী চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেতু নির্মাণের কারণে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় নৌপথে মাল পরিবহণও কমেছে। এরপরও নৌদুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২১টি নৌদুর্ঘটনা রেকর্ড করেছে সংস্থাটি। ২০২৩ সালে ৪২টি নৌদুর্ঘটনায় ২৯ জন মারা গেছেন এবং ২০২২ সালে ৩৬টি দুর্ঘটনায় ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান ‘অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’ সংশোধন করে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ আইন’ করা হচ্ছে। এতে কোন নৌপথে কতসংখ্যক নৌযান চলবে, কী ধরনের কতটি নৌযান নির্মাণ করা যাবে-সেই সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতা নৌপরিবহণ অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নৌযান নির্মাণ তদারকিতে নিয়োজিত প্যানেল সুপারভাইজার এবং নির্মাণকারী ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ডও আইনের আওতায় আসছে। ধারা ৩৭-এ নৌযান মাস্টার, ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর যোগ্যতার সনদ নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ঘাট ছাড়া মাঝপথে বা নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী তোলা বা নামানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে ৬৭ নম্বর ধারায়।

তবে দুর্ঘটনাসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনে কারাদণ্ডের বিধান বাড়েনি। খসড়া আইনের ৪৭ ধারায় অসদাচরণ বা অন্য কোনো কারণে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে ওই ঘটনায় জাহাজে কর্তব্যরত শ্রমিকের পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। বর্তমান আইনেও পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ সংশোধিত আইনে মাত্র ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বাড়ল। একইভাবে নৌযান মালিক, মাস্টার বা কোনো কর্মকর্তার অযোগ্যতা, আইন লঙ্ঘন বা অসদাচরণের কারণে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নৌদুর্ঘটনা তদন্তে একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

নৌপথে দুর্ঘটনার অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অনিবন্ধিত নৌযানের বেপরোয়া চলাচল। বিশেষ করে বালুবাহী বাল্কহেডের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নিবন্ধন না থাকায় বাল্কহেডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না নৌ অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত আইনের ৩৫ ধারায় সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান অধ্যাদেশে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনে বাল্কহেড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। একইভাবে আরও কয়েক ধারায় জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নদী দূষণের দায়ে ৭৩ ধারায় অর্থদণ্ড ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

নৌযানের নিরাপত্তা দেখভালের জনবলের অভাব : নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি নৌযান বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষার নিয়ম রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৯ হাজার ২৫১টি। এসব নৌযানের ফিটনেস দেখার জন্য সার্ভেয়ার রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এই হিসাবে একজন সার্ভেয়ার বছরে ৩২০৮টি নৌযান সার্ভে করে থাকেন। অথচ সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে সার্ভেয়ারের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৩টি। অপরদিকে নিয়ম অনুযায়ী নৌযান পরিচালনা করছে কি না-তা দেখার দায়িত্ব ইন্সপেক্টরদের। কোনো নৌযান আইন বা নিয়ম লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে থাকেন ইন্সপেক্টররা। অথচ নৌপরিবহণ অধিদপ্তরে চিফ ইন্সপেক্টরসহ মোট ইন্সপেক্টর রয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে ৬১টি ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আগষ্টিনের সহোচর কল্পনা ফলিয়ার যত প্রতারণা

নৌদুর্ঘটনায় অর্থদণ্ড বাড়িয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত

আপডেট সময় ১০:২৪:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

মালিক, চালক বা শ্রমিকদের আইনভঙ্গ, অবহেলা অথবা অসদাচরণের কারণে নৌযান দুর্ঘটনা ঘটলে এবং মানুষের প্রাণহানি হলে বিদ্যমান ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধানই বহাল রাখছে সরকার। এই অপরাধে বাড়ছে শুধু অর্থদণ্ডের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান যুক্ত করে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ আইন’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। এতে ফিটনেস (সার্ভে) সনদ ছাড়া নৌযানে যাত্রী ও মালামাল বহন, অযোগ্য চালক (মাস্টার) দিয়ে নৌযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন অপরাধেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এসব অপরাধেও আগের মতোই কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই খসড়া আইনটি পাশ করতে জাতীয় সংসদে উত্থাপনের প্রক্রিয়া করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। যদিও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত এই আইন নৌদুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে কি না-তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে বড় আকারের নৌযান চলাচল বেড়েছে। এসব নৌযানে যাত্রী ও মাল দুই-ই বেশি বহন করা যায়। বড় দুর্ঘটনা হলে প্রাণহানিও বেশি হবে। আইনে কঠোর সাজার বিধান না থাকলে তা মালিক-শ্রমিকরা তোয়াক্কা করতে চাইবেন না-এটাই স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে এর বড় উদাহরণ গত রোজার ঈদের দিন রাজধানীর সদরঘাটে এক লঞ্চের ধাক্কায় অপর লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে নারী ও শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা।

নৌ খাতের এমন অবস্থার মধ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৪’। এ বছরের প্রতিবাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান।’ আজ রাজধানীতে এ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হবে। নৌনিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌদুর্ঘটনা হ্রাসে নদীবন্দরসমূহে নিরাপত্তা জোরদার, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান শনাক্তকরণ, নাবিকদের প্রশিক্ষণ আধুনিকীকরণ, নৌনিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে নৌযান ও নৌযানে যাত্রীসাধারণের চলাচল আরও নিরাপদ হয়েছে।’

প্রস্তাবিত আইন পাশ হলে তা নৌনিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটা কার্যকর হবে-জানতে চাইলে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম যুগান্তরকে বলেন, নৌযান মালিক, শ্রমিক, যাত্রীসহ সবাই যদি আইন মেনে চলেন, তাহলে এই আইন দিয়েই নৌনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কারাদণ্ড বাড়ছে না, বাড়বে অর্থদণ্ড। মূল্যস্ফীতি ও মানুষের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ আইনে অর্থদণ্ড বাড়ানো হচ্ছে। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার আগাম প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে নৌপথে যাত্রী চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেতু নির্মাণের কারণে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় নৌপথে মাল পরিবহণও কমেছে। এরপরও নৌদুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ২১টি নৌদুর্ঘটনা রেকর্ড করেছে সংস্থাটি। ২০২৩ সালে ৪২টি নৌদুর্ঘটনায় ২৯ জন মারা গেছেন এবং ২০২২ সালে ৩৬টি দুর্ঘটনায় ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান ‘অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’ সংশোধন করে ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ আইন’ করা হচ্ছে। এতে কোন নৌপথে কতসংখ্যক নৌযান চলবে, কী ধরনের কতটি নৌযান নির্মাণ করা যাবে-সেই সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতা নৌপরিবহণ অধিদপ্তরকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া নৌযান নির্মাণ তদারকিতে নিয়োজিত প্যানেল সুপারভাইজার এবং নির্মাণকারী ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ডও আইনের আওতায় আসছে। ধারা ৩৭-এ নৌযান মাস্টার, ড্রাইভার ও ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর যোগ্যতার সনদ নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ঘাট ছাড়া মাঝপথে বা নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী তোলা বা নামানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে ৬৭ নম্বর ধারায়।

তবে দুর্ঘটনাসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনে কারাদণ্ডের বিধান বাড়েনি। খসড়া আইনের ৪৭ ধারায় অসদাচরণ বা অন্য কোনো কারণে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে ওই ঘটনায় জাহাজে কর্তব্যরত শ্রমিকের পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। বর্তমান আইনেও পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ সংশোধিত আইনে মাত্র ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বাড়ল। একইভাবে নৌযান মালিক, মাস্টার বা কোনো কর্মকর্তার অযোগ্যতা, আইন লঙ্ঘন বা অসদাচরণের কারণে নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নৌদুর্ঘটনা তদন্তে একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।

নৌপথে দুর্ঘটনার অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অনিবন্ধিত নৌযানের বেপরোয়া চলাচল। বিশেষ করে বালুবাহী বাল্কহেডের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নিবন্ধন না থাকায় বাল্কহেডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না নৌ অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত আইনের ৩৫ ধারায় সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযান চলাচল করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান অধ্যাদেশে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনে বাল্কহেড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। একইভাবে আরও কয়েক ধারায় জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নদী দূষণের দায়ে ৭৩ ধারায় অর্থদণ্ড ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

নৌযানের নিরাপত্তা দেখভালের জনবলের অভাব : নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি নৌযান বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষার নিয়ম রয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা ১৯ হাজার ২৫১টি। এসব নৌযানের ফিটনেস দেখার জন্য সার্ভেয়ার রয়েছেন মাত্র ৬ জন। এই হিসাবে একজন সার্ভেয়ার বছরে ৩২০৮টি নৌযান সার্ভে করে থাকেন। অথচ সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে সার্ভেয়ারের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৩টি। অপরদিকে নিয়ম অনুযায়ী নৌযান পরিচালনা করছে কি না-তা দেখার দায়িত্ব ইন্সপেক্টরদের। কোনো নৌযান আইন বা নিয়ম লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে থাকেন ইন্সপেক্টররা। অথচ নৌপরিবহণ অধিদপ্তরে চিফ ইন্সপেক্টরসহ মোট ইন্সপেক্টর রয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির অর্গানোগ্রামে ৬১টি ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে।