ঢাকা ০৪:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষত মুছে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্তরা

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। স্বাধীনতার পর উপকূলবাসীর জন্য স্মরণকালের দুর্যোগ ছিল এটি।

গোটা উপকূলে যার ক্ষত এখনো বিদ্যমান। এরপর এ জনপদে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সবশেষ ২৬ মে টানা ১৪ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় উপকূল। অতীতের সব জলোচ্ছ্বাসকে অতিক্রম করেছে এই রিমাল।

জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি বিধ্বস্ত করে এ জনপদের অর্থনীতিকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে। এছাড়াও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলের পরিবারগুলোকে নিঃস্ব করে দেয়।

লাগামহীন এসব ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্তরা। এসব ক্ষয়ক্ষতির ৮০ শতাংশ কারণ অপরিকল্পিত এবং যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার।

প্রতিবছর ভেঙে যাওয়া এসব বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংস্কার করলেও তা বছর না ঘুরতে নদীতে বিলীন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জনপদকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ দরকার।

ত্রাণের বদলে এবার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ৩০ মে কলাপাড়া উপজেলার দুর্গত পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ-সদস্য এসএম শাহাজাদা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলবাসীর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ হলে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছু হলেও পরিত্রাণ পাবে।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এ অঞ্চলে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। এরপর ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১০ মে মহাসেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, একই বছরের মে মাসে ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিধিলি এবং সব শেষ চলতি বছরের ২৬ মে উপকূলে তাণ্ডব চালায় রিমাল।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের জনবসতিরা বর্ষা মৌসুম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে।

অনুসন্ধান ও সূত্র বলছে, ২৬ মে রিমালের তাণ্ডবে জেলায় অন্তত ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সরকারি-বেসরকারি হিসাবমতে, এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এছাড়া প্রায় ২৭ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট, ৫০ কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ, ৮ কোটি টাকার গবাদি পশু এবং গভীর নলক‚প ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ক্ষতি হয়। ভারি জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালী ও কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৩.৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে, যা সংস্কার করতে ২০ কোটি টাকার মতো লাগবে।

এলজিইডির আওতায় ৩৬৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠমো নির্মাণ ও সংস্কারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া জেলায় বনায়ন এবং আনুষঙ্গিক খাতে প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৯১ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ৩৫০ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ত্রাণসামগ্রী, ৮০৯ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৬ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৬ লাখ টাকার গো-খাদ্য বিতরণ করেছে।

জীবন চালাতে পরিবারগুলো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, কেউবা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে চলে যাচ্ছে শহরে বা অন্য কোনো জেলায়। এর ফলে ক্রমাগত বাড়ছে ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা।

জানা যায়, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, উপক‚লে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে এ ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই হ্রাস পেত। বঙ্গোপসাগর মোহনাসংলগ্ন চালিতাবুনিয়া দ্বীপটিতে ১৪ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। ২১ কিলোমিটার
বেড়িবাঁধবেষ্টিত এ দ্বীপের বঙ্গোপসাগরমুখী অংশে ১ কিলোমটার বিধ্বস্ত হয়েছে। চালিতাবুনিয়া দ্বীপচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মু. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হওয়া বাঁধের ১২টি অংশ দিয়ে হুহু করে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের ৭ দিন অতিক্রম হলেও ইউনিয়নটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভাঙে। কিন্তু পাউবো তা যেনতেনভাবে সংস্কার করে। বাঁধগুলো বছর না ঘুরতেই নদীতে বিলীন হয়। যে কারণে এখানকার মানুষের অর্থসম্পদ পদে পদে বিনষ্ট হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন এবং কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালী-কলাপাড়ায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ২০ কোটি টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ করতে হলে চলমান ডিজাইন পরিবর্তন এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিষয় জড়িত।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে উপযুক্ত মাটি না পাওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বালুমাটি ব্যবহার করতে হয়। যে কারণে স্বাভাবিক জোয়ারেও বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হওয়ার ঘটনা ঘটে।

লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় জলকপাট নষ্ট হয়ে প্লাবিত হয় লোকালয়। অপর সূত্র বলছে, ক্ষয়ক্ষতির চাহিদার তুলনায় মন্ত্রণালয় থেকে অপ্রতুল বরাদ্দ দেওয়ায় যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষত মুছে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্তরা

আপডেট সময় ১০:৩৫:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। স্বাধীনতার পর উপকূলবাসীর জন্য স্মরণকালের দুর্যোগ ছিল এটি।

গোটা উপকূলে যার ক্ষত এখনো বিদ্যমান। এরপর এ জনপদে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সবশেষ ২৬ মে টানা ১৪ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় উপকূল। অতীতের সব জলোচ্ছ্বাসকে অতিক্রম করেছে এই রিমাল।

জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি বিধ্বস্ত করে এ জনপদের অর্থনীতিকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে। এছাড়াও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলের পরিবারগুলোকে নিঃস্ব করে দেয়।

লাগামহীন এসব ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্তরা। এসব ক্ষয়ক্ষতির ৮০ শতাংশ কারণ অপরিকল্পিত এবং যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার।

প্রতিবছর ভেঙে যাওয়া এসব বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংস্কার করলেও তা বছর না ঘুরতে নদীতে বিলীন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জনপদকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ দরকার।

ত্রাণের বদলে এবার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ৩০ মে কলাপাড়া উপজেলার দুর্গত পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ-সদস্য এসএম শাহাজাদা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলবাসীর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ হলে এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছু হলেও পরিত্রাণ পাবে।

জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এ অঞ্চলে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। এরপর ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১০ মে মহাসেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, একই বছরের মে মাসে ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিধিলি এবং সব শেষ চলতি বছরের ২৬ মে উপকূলে তাণ্ডব চালায় রিমাল।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের জনবসতিরা বর্ষা মৌসুম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে।

অনুসন্ধান ও সূত্র বলছে, ২৬ মে রিমালের তাণ্ডবে জেলায় অন্তত ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সরকারি-বেসরকারি হিসাবমতে, এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এছাড়া প্রায় ২৭ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট, ৫০ কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ, ৮ কোটি টাকার গবাদি পশু এবং গভীর নলক‚প ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ক্ষতি হয়। ভারি জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালী ও কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৩.৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে, যা সংস্কার করতে ২০ কোটি টাকার মতো লাগবে।

এলজিইডির আওতায় ৩৬৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠমো নির্মাণ ও সংস্কারের ১০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া জেলায় বনায়ন এবং আনুষঙ্গিক খাতে প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৯১ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ৩৫০ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ত্রাণসামগ্রী, ৮০৯ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৬ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৬ লাখ টাকার গো-খাদ্য বিতরণ করেছে।

জীবন চালাতে পরিবারগুলো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, কেউবা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে চলে যাচ্ছে শহরে বা অন্য কোনো জেলায়। এর ফলে ক্রমাগত বাড়ছে ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা।

জানা যায়, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, উপক‚লে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে এ ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই হ্রাস পেত। বঙ্গোপসাগর মোহনাসংলগ্ন চালিতাবুনিয়া দ্বীপটিতে ১৪ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। ২১ কিলোমিটার
বেড়িবাঁধবেষ্টিত এ দ্বীপের বঙ্গোপসাগরমুখী অংশে ১ কিলোমটার বিধ্বস্ত হয়েছে। চালিতাবুনিয়া দ্বীপচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মু. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হওয়া বাঁধের ১২টি অংশ দিয়ে হুহু করে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের ৭ দিন অতিক্রম হলেও ইউনিয়নটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভাঙে। কিন্তু পাউবো তা যেনতেনভাবে সংস্কার করে। বাঁধগুলো বছর না ঘুরতেই নদীতে বিলীন হয়। যে কারণে এখানকার মানুষের অর্থসম্পদ পদে পদে বিনষ্ট হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন এবং কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, রিমালের প্রভাবে পটুয়াখালী-কলাপাড়ায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ২০ কোটি টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ করতে হলে চলমান ডিজাইন পরিবর্তন এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও বরাদ্দের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিষয় জড়িত।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে উপযুক্ত মাটি না পাওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বালুমাটি ব্যবহার করতে হয়। যে কারণে স্বাভাবিক জোয়ারেও বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হওয়ার ঘটনা ঘটে।

লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় জলকপাট নষ্ট হয়ে প্লাবিত হয় লোকালয়। অপর সূত্র বলছে, ক্ষয়ক্ষতির চাহিদার তুলনায় মন্ত্রণালয় থেকে অপ্রতুল বরাদ্দ দেওয়ায় যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে।