ঢাকা ০৪:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পরিবারের দখলে

স্বজনপ্রীতি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে হয়ে উঠেছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি। নিজ ছেলের ব্উ থেকে উপহারের শেয়ার দিয়ে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান বনে গেছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। এমনকি তার স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা শেয়ারের মূল্য পরিশোধ না করেই বসে পড়েছেন তারা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারে।
কোনো রকমের বিনিয়োগ ছাড়াই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান হওয়া, পরিবারের সদস্যদের পরিচালক বানানো এবং ফ্লোর ক্রয়ের অনুমোদনের আগেই কোম্পানির তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা নেয়ার তথ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি’র এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

যেভাবে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যরা
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নতুন করে শেয়ার ক্রয় করা ১০ জনের মধ্যে ৪ জন শেয়ার ক্রয় করেন ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ শেয়ার। এরা হলেন- উদ্যোক্তা পরিচালক রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও অপর ৩ জন উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের।

এর মধ্যে- মোস্তফা কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, মেয়ে জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল, ছেলের বউ সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও রুপালী ইন্স্যুরেন্স।

এই ৪ জন পরিচালকের কাছ থেকে শেয়ার নিয়ে সোনালী লাইফের নতুন করে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা ও ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান।

এসব শেয়ারে মূল্য বাবদ কোনো টাকা সোনালী লাইফকে পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সময় সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৭ লাখ শেয়ার। শেয়ারের মূল্য বাবদ সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে ইস্যু করা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার জমা করা হয় সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকে সোনালী লাইফের একাউন্টে। একাউন্ট নাম্বার- ০০০২৬২২০০০০৭৩, পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩৩।

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী লাইফের লিয়েন অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ টাকা তুলে এই পে-অর্ডার করা হয়েছে। সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে শেয়ারের মুল্য পরিশোধ করেনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ২০১৯ সালে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন সাফিয়া সোবহান চৌধুরী। গিফট পাওয়া এই শেয়ার নিয়েই সোনালী লাইফের পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর সেই ১৭ লাখ শেয়ার থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে এই শেয়ার ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

পরে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ১২ লাখ শেয়ার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার মোস্তফা কামরুন সোবহানকে গিফট করেন। বাকি ৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার নিজের নামে রেখে দেন। ফলে বর্তমানে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে শেয়ারের পরিমাণ ৯ লাখ ৭০ হাজার।

মোস্তফা কামরুস সোবহানও সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ লাখ শেয়ার গিফট হিসেবে পেয়ে। সাফিয়া সোবহানের গিফট করা শেয়ার মোস্তফা কামরুস সোবহানের নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। পরে ২০২১ সালে সাফিয়া সোবহান চৌধুরী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে আরো ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার গিফট করেন। ফলে মোস্তফা কামরুস সোবহানের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন তার স্বামী শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে গিফট হিসেবে পাওয়া শেয়ার নিয়ে।

২০১৮ সালে নতুন করে ইস্যু করা শেয়ার থেকে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল বরাদ্দ পান ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার। এসব শেয়ারের মুল্য বাবদ শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের নামে ইস্যু করা ২ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার কোম্পানির তহবিলে জমা করা হয়। (পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩২)।

অভিযোগ রয়েছে, শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল এসব শেয়ারের মুল্য নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করেনি।

শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ারের মধ্যে তাসনিয়া কামরুণ আনিকাকে গিফট করেন ১২ লাখ শেয়ার। এসব শেয়ার আনিকার নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

এই ১২ লাখ শেয়ার নিয়েই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক হন তাসনিয়া কামরুন আনিকা।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেছা শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে।

ফজলুতুন নেছার নামে বর্তমানে শেয়ার রয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৬টি। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশ। এর মধ্যে ফজলুতুন নেছা রুপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে নিয়েছেন ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছে থেকে নেয়া ১২ লাখ শেয়ার থেকে এই ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ফজলুতুন নেছাকে গিফট করেন।

২০১৮ সালে নতুন ইস্যু করা শেয়ার থেকে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের নামে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয় ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চে সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্টে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ দেখানো হয় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩১।

রুপালী ইন্স্যুরেন্সের এই ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার ট্রান্সফার করে দেয় ফজলুতুন নেছার নামে। এই শেয়ার ট্রান্সফার নথিভুক্ত করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। অভিযোগ রয়েছে, এসব শেয়ারের মূল্য বাবদ কোনো টাকা পরিশোধ করেনি রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও ফজলুতুন নেছা।
আবার মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে যে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার গিফট পেয়েছেন তার মূল্যও কেউ পরিশোধ করেনি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে যে ১০ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার কেনেন তাদের মধ্যে ৬ জন পরিচালকের নামে নিজ নিজ নামে ক্রয় দেখানো হয় ৩১ লাখ ২ হাজার ৫টি শেয়ার।
এই ৬ পরিচালক তাদের নামের শেয়ার অন্যান্যদের নামে হস্তান্তর করেন। ৬ জন পরিচালক যাদের নামে শেয়ার হস্তান্তর করে তারা কোম্পানির তহবিলে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেন ২০১৭ সালে। অর্থাৎ শেয়ার ইস্যু তা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই ৬ পরিচালক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেন।
এই ৬ পরিচালক হলেন- নূর-ই হাফজা, আহমেদ রাজিব সামদানি, হাজেরা হোসাইন, কামরুন নাহার, হুদা আলী সেলিম মায়া রানি।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারম্বার সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পরিবারের দখলে

আপডেট সময় ১২:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

স্বজনপ্রীতি জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে হয়ে উঠেছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি। নিজ ছেলের ব্উ থেকে উপহারের শেয়ার দিয়ে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান বনে গেছেন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। এমনকি তার স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা শেয়ারের মূল্য পরিশোধ না করেই বসে পড়েছেন তারা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারে।
কোনো রকমের বিনিয়োগ ছাড়াই মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান হওয়া, পরিবারের সদস্যদের পরিচালক বানানো এবং ফ্লোর ক্রয়ের অনুমোদনের আগেই কোম্পানির তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা নেয়ার তথ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি’র এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

যেভাবে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের সদস্যরা
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নতুন করে শেয়ার ক্রয় করা ১০ জনের মধ্যে ৪ জন শেয়ার ক্রয় করেন ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ শেয়ার। এরা হলেন- উদ্যোক্তা পরিচালক রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও অপর ৩ জন উদ্যোক্তা পরিচালক মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের।

এর মধ্যে- মোস্তফা কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, মেয়ে জামাই শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল, ছেলের বউ সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ও রুপালী ইন্স্যুরেন্স।

এই ৪ জন পরিচালকের কাছ থেকে শেয়ার নিয়ে সোনালী লাইফের নতুন করে শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার স্ত্রী ফজলুতুন নেছা, মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা ও ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান।

এসব শেয়ারে মূল্য বাবদ কোনো টাকা সোনালী লাইফকে পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সময় সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৭ লাখ শেয়ার। শেয়ারের মূল্য বাবদ সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর নামে ইস্যু করা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার জমা করা হয় সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকে সোনালী লাইফের একাউন্টে। একাউন্ট নাম্বার- ০০০২৬২২০০০০৭৩, পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩৩।

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী লাইফের লিয়েন অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ টাকা তুলে এই পে-অর্ডার করা হয়েছে। সাফিয়া সোবহান চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে শেয়ারের মুল্য পরিশোধ করেনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ২০১৯ সালে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন সাফিয়া সোবহান চৌধুরী। গিফট পাওয়া এই শেয়ার নিয়েই সোনালী লাইফের পরিচালক হন মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।

সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর সেই ১৭ লাখ শেয়ার থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে ১২ লাখ শেয়ার গিফট করেন। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে এই শেয়ার ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

পরে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তার ১২ লাখ শেয়ার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার মোস্তফা কামরুন সোবহানকে গিফট করেন। বাকি ৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার নিজের নামে রেখে দেন। ফলে বর্তমানে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নামে শেয়ারের পরিমাণ ৯ লাখ ৭০ হাজার।

মোস্তফা কামরুস সোবহানও সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছ থেকে ৩ লাখ শেয়ার গিফট হিসেবে পেয়ে। সাফিয়া সোবহানের গিফট করা শেয়ার মোস্তফা কামরুস সোবহানের নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। পরে ২০২১ সালে সাফিয়া সোবহান চৌধুরী মোস্তফা কামরুস সোবহানকে আরো ৬ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার গিফট করেন। ফলে মোস্তফা কামরুস সোবহানের শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশের বেশি।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ছোট মেয়ে তাসনিয়া কামরুন আনিকা সোনালী লাইফের শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন তার স্বামী শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের কাছ থেকে গিফট হিসেবে পাওয়া শেয়ার নিয়ে।

২০১৮ সালে নতুন করে ইস্যু করা শেয়ার থেকে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল বরাদ্দ পান ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ার। এসব শেয়ারের মুল্য বাবদ শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েলের নামে ইস্যু করা ২ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার নগদ একটি পে-অর্ডার কোম্পানির তহবিলে জমা করা হয়। (পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩২)।

অভিযোগ রয়েছে, শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল এসব শেয়ারের মুল্য নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করেনি।

শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল ২১ লাখ ৯৫ হাজার শেয়ারের মধ্যে তাসনিয়া কামরুণ আনিকাকে গিফট করেন ১২ লাখ শেয়ার। এসব শেয়ার আনিকার নামে ট্রান্সফার করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে।

এই ১২ লাখ শেয়ার নিয়েই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও পরিচালক হন তাসনিয়া কামরুন আনিকা।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের স্ত্রী ফজলুতুন নেছা শেয়ারের মালিক ও পরিচালক হন রুপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে।

ফজলুতুন নেছার নামে বর্তমানে শেয়ার রয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৬টি। যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ২ শতাংশ। এর মধ্যে ফজলুতুন নেছা রুপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে নিয়েছেন ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সাফিয়া সোবহান চৌধুরীর কাছে থেকে নেয়া ১২ লাখ শেয়ার থেকে এই ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ফজলুতুন নেছাকে গিফট করেন।

২০১৮ সালে নতুন ইস্যু করা শেয়ার থেকে রুপালী ইন্স্যুরেন্সের নামে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয় ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চে সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্টে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ দেখানো হয় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পে-অর্ডার নাম্বার- ০১৫৬৪৩১।

রুপালী ইন্স্যুরেন্সের এই ১৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার ট্রান্সফার করে দেয় ফজলুতুন নেছার নামে। এই শেয়ার ট্রান্সফার নথিভুক্ত করা হয় ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে। অভিযোগ রয়েছে, এসব শেয়ারের মূল্য বাবদ কোনো টাকা পরিশোধ করেনি রুপালী ইন্স্যুরেন্স ও ফজলুতুন নেছা।
আবার মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের কাছ থেকে যে ২ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার গিফট পেয়েছেন তার মূল্যও কেউ পরিশোধ করেনি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে যে ১০ জন উদ্যোক্তা পরিচালক ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ১ কোটি ৫ লাখ শেয়ার কেনেন তাদের মধ্যে ৬ জন পরিচালকের নামে নিজ নিজ নামে ক্রয় দেখানো হয় ৩১ লাখ ২ হাজার ৫টি শেয়ার।
এই ৬ পরিচালক তাদের নামের শেয়ার অন্যান্যদের নামে হস্তান্তর করেন। ৬ জন পরিচালক যাদের নামে শেয়ার হস্তান্তর করে তারা কোম্পানির তহবিলে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করেন ২০১৭ সালে। অর্থাৎ শেয়ার ইস্যু তা বরাদ্দ পাওয়ার আগেই ৬ পরিচালক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেন।
এই ৬ পরিচালক হলেন- নূর-ই হাফজা, আহমেদ রাজিব সামদানি, হাজেরা হোসাইন, কামরুন নাহার, হুদা আলী সেলিম মায়া রানি।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারম্বার সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।