বাংলাদেশে এলাকা ভেদে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল দেখা যায় । আবহাওয়া গত কারণে “ব্ল্যাক বেঙ্গল” জাতের ছাগলের উৎপাদন চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে বেশি হয়। আর এ ছাগলের মাংস অনেক সুস্বাদু হওয়ার কারণে দেশে অনেক সমাদৃত। ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারে পালন করা হয়। যেখানে রয়েছে পাঁঠা ও ছাগি। বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারেও এ জাতের ছাগল পালন করে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ রোধে নিজেকে আড়াল করেছেন অনেক বেকার নারী-পুরুষ। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সুস্বাদু মাংসের কারনে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশের বাজারে। কিন্তুু চামড়ার চাহিদা এখন খুব একটা নেই বললেই চলে । সব ধরনের ছাগলের চামড়াই এখন মাএ ৩০/৫০ টাকাই মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পৌর কলেজ পাড়ায় ১৯৯৬ সালে ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হয় চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার। আবহাওয়া এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরকার খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের জাত সংরক্ষণের উদ্দেশ্য এ খামার প্রতিষ্ঠা করে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আরমান আলী বলেন, ২২৫টি মা ছাগি ও ৫০টি পাঠা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ছাগল খামারটির।
বর্তমানে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর অর্থ বছরে ছাগী ও পাঠা বিতরণ হয়েছে ১২০ পিস। এর মধ্যে ছাগি রয়েছে ৫৯ পিচ যার প্রতি ছাগির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫০০ টাকা এবং পাঠা ৬১ পিচ যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০০ টাকা। এটা সরকারের চলমান কার্যক্রম। বিক্রয়ের সময় ছাগি ও পাঠার ওজন ১০ থেকে ১২ কেজির মধ্যে থাকে। বর্তমানে ৫৮৭ টি ছাগি এবং পাঠা আছে খামারে। এরমধ্যে ২৯টি ছাগি অপুষ্ট ও রোগাক্রান্ত হওয়ায় রিজেক্ট করা হয়েছে।
অচিরেই তা নিলামে বিক্রয় করা হবে। সেই হিসাবে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা ছাগল উন্নয়ন খামারে পাঠা রয়েছে ৩৯৯ টি এবং ছাগি আছে ১৫৯ টি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার থেকে ছাগি এবং পাঠা নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে। জেলার প্রত্যেকটি গ্রামেই রয়েছে ছোট-বড় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের খামার। শুধু তাই নয় শহর ও গ্রামে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ব্যবসার পাশাপাশি শখের জন্য হলেও ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করে। এই খামারের ছাগল দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় লালন পালনের জন্য ।
ছাগল খামারটির উদ্দেশ্য হলো, জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা। তবে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন সম্ভব হলে ছাগলের জাত সংরক্ষণ আরো সহজ হবে। এখানে ছাগি প্রজননের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় লোকবল কম থাকায় ছাগল খামারের কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। যেখানে ভেটেনারি সার্জন থাকার কথা ন্যূনতম একজন সেখানে তা শুন্য। কম্পাউন্ডার থাকার কথা একজন সে পদেও লোক শুন্য। গোট অ্যাটেনডেন্ট থাকার কথা পাঁচজন রয়েছে তিনজন। নৈশ প্রহরী যেখানে থাকার কথা তিনজন সেখানে একটিও নেই। যার ফলে নৈশপ্রহরী শূন্য থাকছে চুয়াডাঙ্গা ছাগল উন্নয়ন খামার ।
যদি পর্যাপ্ত লোকবল থাকতো তাহলে ছাগল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হতো বলে জানালেন এখানকার কর্মীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ছাগল পালন সহজ ও লাভজনক। ছাগলের জন্য খাদ্য হিসেবে দেয়া হয় ঘাস, ভুট্টা, খেসারি, গমের ভুসি, সয়াবিনের খৈল, ছোলাসহ বিভিন্ন দানাদার খাবার। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে এ ছাগল । ছাগলের রোগবালাই কিছুটা হলেও কম । পিপিআর রোগপ্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাগল পালনকারীদের খাবার ও ওষুধ দেয়া হয় বিনামূল্যে।
গোট রিচার্স সেন্টার ও কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্র স্থাপন করা গেলে এ জাত সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন খামার সংশ্লিষ্টরা। খামারে রয়েছে ৮টি শেড, রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ১টি, কোয়ার্টার ও অফিস রয়েছে। খামারে ছাগল পালনকারী অনেক ভুক্তভোগীরা জানান, এই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন লাভজনক ব্যবসা। সংসারসহ অন্যান্য খুঁটিনাটি খরচ বহন করা সম্ভব হয়। বাড়িতে অল্প জায়গায়, কম খরচে ছাগল লালনপালন করা যায়। ছাগলের রোগবালাই কম। তারপরেও প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও যারা বাড়িতে ছোট ছোট খামার করে ছাগল পুশছে তাদের উপর বিশেষ সহযোগিতা ও নজরদারি করে থাকে । বছরে ৫০ হাজার থেকে এক দেড় লাখ টাকা আয় হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারটি খুবই সুনামের সাথে চলছে। এখানে ছাগল খামারটির উদ্দেশ্য জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা। রিচার্স সেন্টার ও কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্র স্থাপন করা গেলে ছাগলের জাতটি সহজে সংরক্ষণ করা যাবে বলে জানান। জেলায় ছাগলের অনেক খামার রয়েছে। আর খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করছি। কিন্তু এখানে চাহিদা মোতাবেক লোকবল ঘাটতি থাকার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন সম্ভব হলেও তা শতভাগ সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরে যে পরিমাণে চাহিদা সে অনুপাতে যোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে ।
তবে আশা করছি সবাই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে উৎসাহিত হবে।