সাংবাদিক দেখে অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান রোগী রেখে পালিয়ে গেছেন এফ আই ভুক্ত আসামি ডাঃ এস কে ঘোষ। শহরের দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কিডনি চুরি সহ নানান অভিযোগের ভিত্তিতে গাইনি চিকিৎসক এস কে ঘোষ সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে হবিগঞ্জ সদর থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ অজয় চন্দ্র দেব।
তিনি বলেন, আমি ওই সময় ভারতে চিকিৎসার জন্য ছিলাম তবে মামলা হয়েছে নিশ্চিত। মামলা হওয়ার পরেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ডাঃ এস কে ঘোষ শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত সিজারসহ বিভিন্ন অপারেশন করে যাচ্ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর রাত প্রায় ৯টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন গর্ভবতী মহিলার সিজার করতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন।
বিষয়টি গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই হাসপাতালে সাংবাদিক উপস্থিত হলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ডাঃ এস কে ঘোষ জানান, তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। জামিনের কাগজ দেখতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন বাসায় রেখে এসেছি। তখন সাংবাদিকরা বলেন ঠিক আছে আপনি অপারেশন শেষ করেন আমরা আপনার বাসায় গিয়ে দেখে আসব। এরপর তিনি বলেন আপনাদেরকে কেন দেখাবো, আপনাদেরকে জামিনের কাগজ দেখাতে আমি বাধ্য নই।
তখন সাংবাদিকরা বলেন ঠিক আছে আমাদেরকে না দেখান, পুলিশকে তো দেখাবেন তখন তিনি বলেন ঠিক আছে পুলিশ আসলে দেখাবো। এরই মধ্যে ওই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কামাল পারভেজ এসে সাংবাদিকদের পাশের রুমে নিয়ে যান কথা বলার জন্য। এই সুযোগে রোগীকে ওটিতে রেখেই পালিয়ে যান ডাঃ এস কে ঘোষ। এ বিষয়ে ৫ ই নভেম্বর ডাঃ এস কে ঘোষের মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন আমি এই মুহূর্তে হবিগঞ্জে কোন চিকিৎসা করছি না। হবিগঞ্জের বাহিরে আছি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে তারপরে হবিগঞ্জ আসবো। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন সেদিন মিথ্যা বললেন কেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আপনারা শুধু আমার খারাপ দিকটাই দেখেন ভালো দিক দেখেন না, আমি কি শুধু খারাপ কাজই করি। এই কথা বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রহিমা খাতুন (৫৫) নামের এক মহিলাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে দালাল তাবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি তাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে নতুন বাস টার্মিনালের দি জাপান হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পর কর্তৃপক্ষ বলে রহিমার অবস্থা খুবই খারাপ। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। ওইদিনই ডাক্তার এস কে ঘোষ তার অপারেশন করেন।
এরপর তার অবস্থা আরও অবনতি হয়। কয়েকদিন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রিলিজ দেয়া হয়। বাড়িতে নিয়ে যাবার পর তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। অপারেশনের স্থান দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
একপর্যায়ে তাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। ধরা পড়ে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে রোগিনীর। তাছাড়া তার পেটের মধ্যে থাকা দুটি টিউমারের বদলে একটি টিউমার অপারেশন করা হয়েছে। আরেকটি রয়ে গেছে। এমনকি তার একটি কিডনিও পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পর রহিমা গত ১৫ অক্টোবর বিকালের দিকে মারা যান। নিহত নারী হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের বাসিন্দা মৃত নুর আলীর স্ত্রী।
এরপর গত ২৩ অক্টোবর সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইউনুছ মিয়ার ছেলে রহমত আলী মৃত মহিলার ভাতিজা আদালতে মামলা দায়ের করেন মামলার নাম্বার সি.আর ৮৫৩।