ঢাকা ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডক্টর সিরিয়াল ডট কম অ্যাপের উদ্বোধন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে পূজা পালন করবে: হাফিজ ইব্রাহিম ভোলায় সাড়ে তিন কোটি টাকার নিষিদ্ধজালসহ আটক-২ একজন মানবিক পুলিশের গল্প। রাষ্ট্র সংস্কারে যে ১০ প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত আনোয়ারা থানা এলাকায় পাওয়া অজ্ঞাত লাশের পরিচয় সনাক্ত করলো পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা। সাতকানিয়া প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা মতলব দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বিকাশ এজেন্টের মালিক আজাদের বিরুদ্ধে জোর করে জমির দলিল নিয়ে সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ । আশুলিয়ায় লতিফ মন্ডল ও আক্কাস আলী মন্ডল মূর্তি মান আতংকের নাম । বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মামলা

পর্যটন স্পষ্ট হতে পারে আজমিরীগঞ্জের জলসুখার ১৩ টি জমিদার বাড়ি।।

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসূখা ১৩ জন জমিদারের বাড়ি হতে পারে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পষ্ট। ঐতিহ্যবাহী জলসুখার ১৩ জমিদারের আড়াইশ বছরের পুরনো একটি জমিদার বাড়ি, বৈঠকখানা ও ঘেটু নাট মন্দির অযত্ন-অবহেলায়, পূর্ণ সংস্কার হলে হতে পারে পর্যটন স্পষ্ট।
হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর উপশাখা কুশিয়ারার কুদালিয়ার নদীর তীরে অবস্থিত। হাওর নদী নালা বেষ্টিত এই গ্রামের প্রাকৃতিক রুপ অপূর্ব সৌন্দর্যে ঘেরা। পূর্ব থেকেই নদী বেষ্টিত এই ছোট গ্রাম ঐতিহ্যবাহী। ১৩ জন জমিদারের গ্রাম জলসুখা। এই গ্রামের জমিদার বাড়ি ও জমিদারদের নিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ধন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ গেটোপুত্র কমলা টেলিফিল্মের মাধ্যমে কাহিনি ও চিত্র ধারন করেছে।
বর্তমানে জলসুখার আড়াইশ বছরের পুরনো ১৩ টি জমিদার বাড়ি বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এর মধ্যে কয়েক টি বাড়ি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে । আর বেশ কয়েকটি জমিদারদের বংশধরেরা বিক্রি করেছ দখলদারদের কাছে এবং দুটি নতুন ভাবে সংস্কার করে ব্যবহার করছে । এ ছাড়া বাকি বাড়িগুলোর অবস্থা একেবারেই জরাজীর্ণ হওয়ায় এগুলো পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের অভয়াশ্রমে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলুসখা গ্রামে ছিল ১৩ জন জমিদারের বাস। তাদের মধ্যে ১২ জন জমিদার ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বাকি একজন মুসলিম। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখন্ডিত হওয়ার পর অধিকাংশ জমিদারই চলে যান ভারতে। তাদের উত্তরসূরিরা ভারত এবং কেউ কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাস করছেন।

জলসুখা গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে জানা যায় সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী, জমিদাররা হলেন চন্দ্র কুমার রায়, কৃষ্ণ কুমার রায়, সূর্যমনি রায়, বৈকুণ্ঠ নাথ রায়, শরৎ চন্দ্র রায়, ভারত চন্দ্র রায়, নন্দলাল রায়, গোবিন চন্দ্র রায়, সতীশ কুমার রায়, লক্ষ্ণীকান্ত রায়, ক্ষেত্রনাথ রায়, মাধব চন্দ্র রায়, রমা বলস্নব হালদার ও রমজান আলী চৌধুরী ওরফে বুছা মিয়া চৌধুরী। তারা একেকজন ছিলেন একেক তালস্নুক বা চৌহদ্দির খাজনা আদায়ের দায়িত্বে। সূত্রে আরও জানা যায়
, অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তাদের মধ্যে জমিদার চন্দ্র কুমার রায় ১৮৭৬ সালে ‘কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা এর সুনাম এখন ও রয়েছে ।
জলসুখা গ্রামের দক্ষিণ আটপাড়ায় সরজমিনে দেখা যায়, ১৩ জমিদারের মধ্যে বেশি ক্ষমতাধর গোবিন্দ্র চন্দ্র রায়ের বাড়ির জরাজীর্ণ একটি ভবন। আটচালা নামে বৈঠক খানা ও ঘেটু নাট মন্দির।
ভবনটি বর্তমানে একেবারেই অরক্ষিত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে জুয়াড় আসর বসে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে বর্তমানে এই বাড়িটির একটি কক্ষে রয়েছে সরকারি ভূমি অফিস। আরেকটি কক্ষে জরাজীর্ণ ভাবে জলসুখার পোস্ট অফিস
জলসুখা ইউনিয়ন স্থানীয় মুরব্বিরা জানান, জমিদাররা ভারতে চলে যাওয়ার পর কিছু অসাধু লোকের মদদে অনেকেই ভুয়া ওয়ারিশান সদনপত্র তৈরি করে জমি জমার কাগজ নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয়রা আরও জানান অনেকদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জমিদার বাড়ি দেখতে ভিড় করতেন পর্যটকরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এগুলো একেবারেই অরক্ষিত হয়ে গেছে। তাই বাড়িগুলো দেখতে আর কেউ আসেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এই জমিদার বাড়িগুলোকে সংরক্ষণ করা হলে আবারও ফিরে পাবে পুরনো আকর্ষণ। জমিদারদের ব্যবহৃত এই ভবনগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। বেশকিছু দিন পূর্বে হবিগঞ্জ -২ আজমিরীগঞ্জ -বানিয়াচং আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান জলসুখার ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং আট চালার জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সংস্কারের জন্য ফোন আলোচনা করেন।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, উপজেলায় সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেই, এই বিষয় নিয়ে আরও একবার আলোচনা হয়েছে, আবারও যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাটানো ব্যাবস্তা করা হবে।বিশিষ্টজনেরা মনে করেন জমিদার বাড়ি গুলো সংস্কার করলে আজমিরীগঞ্জের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় স্থান পাবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডক্টর সিরিয়াল ডট কম অ্যাপের উদ্বোধন

পর্যটন স্পষ্ট হতে পারে আজমিরীগঞ্জের জলসুখার ১৩ টি জমিদার বাড়ি।।

আপডেট সময় ১২:৫৪:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসূখা ১৩ জন জমিদারের বাড়ি হতে পারে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পষ্ট। ঐতিহ্যবাহী জলসুখার ১৩ জমিদারের আড়াইশ বছরের পুরনো একটি জমিদার বাড়ি, বৈঠকখানা ও ঘেটু নাট মন্দির অযত্ন-অবহেলায়, পূর্ণ সংস্কার হলে হতে পারে পর্যটন স্পষ্ট।
হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর উপশাখা কুশিয়ারার কুদালিয়ার নদীর তীরে অবস্থিত। হাওর নদী নালা বেষ্টিত এই গ্রামের প্রাকৃতিক রুপ অপূর্ব সৌন্দর্যে ঘেরা। পূর্ব থেকেই নদী বেষ্টিত এই ছোট গ্রাম ঐতিহ্যবাহী। ১৩ জন জমিদারের গ্রাম জলসুখা। এই গ্রামের জমিদার বাড়ি ও জমিদারদের নিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ধন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ গেটোপুত্র কমলা টেলিফিল্মের মাধ্যমে কাহিনি ও চিত্র ধারন করেছে।
বর্তমানে জলসুখার আড়াইশ বছরের পুরনো ১৩ টি জমিদার বাড়ি বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এর মধ্যে কয়েক টি বাড়ি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে । আর বেশ কয়েকটি জমিদারদের বংশধরেরা বিক্রি করেছ দখলদারদের কাছে এবং দুটি নতুন ভাবে সংস্কার করে ব্যবহার করছে । এ ছাড়া বাকি বাড়িগুলোর অবস্থা একেবারেই জরাজীর্ণ হওয়ায় এগুলো পরিণত হয়েছে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের অভয়াশ্রমে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলুসখা গ্রামে ছিল ১৩ জন জমিদারের বাস। তাদের মধ্যে ১২ জন জমিদার ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং বাকি একজন মুসলিম। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখন্ডিত হওয়ার পর অধিকাংশ জমিদারই চলে যান ভারতে। তাদের উত্তরসূরিরা ভারত এবং কেউ কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাস করছেন।

জলসুখা গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে জানা যায় সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী, জমিদাররা হলেন চন্দ্র কুমার রায়, কৃষ্ণ কুমার রায়, সূর্যমনি রায়, বৈকুণ্ঠ নাথ রায়, শরৎ চন্দ্র রায়, ভারত চন্দ্র রায়, নন্দলাল রায়, গোবিন চন্দ্র রায়, সতীশ কুমার রায়, লক্ষ্ণীকান্ত রায়, ক্ষেত্রনাথ রায়, মাধব চন্দ্র রায়, রমা বলস্নব হালদার ও রমজান আলী চৌধুরী ওরফে বুছা মিয়া চৌধুরী। তারা একেকজন ছিলেন একেক তালস্নুক বা চৌহদ্দির খাজনা আদায়ের দায়িত্বে। সূত্রে আরও জানা যায়
, অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তাদের মধ্যে জমিদার চন্দ্র কুমার রায় ১৮৭৬ সালে ‘কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা এর সুনাম এখন ও রয়েছে ।
জলসুখা গ্রামের দক্ষিণ আটপাড়ায় সরজমিনে দেখা যায়, ১৩ জমিদারের মধ্যে বেশি ক্ষমতাধর গোবিন্দ্র চন্দ্র রায়ের বাড়ির জরাজীর্ণ একটি ভবন। আটচালা নামে বৈঠক খানা ও ঘেটু নাট মন্দির।
ভবনটি বর্তমানে একেবারেই অরক্ষিত। সন্ধ্যার পরপরই সেখানে জুয়াড় আসর বসে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে বর্তমানে এই বাড়িটির একটি কক্ষে রয়েছে সরকারি ভূমি অফিস। আরেকটি কক্ষে জরাজীর্ণ ভাবে জলসুখার পোস্ট অফিস
জলসুখা ইউনিয়ন স্থানীয় মুরব্বিরা জানান, জমিদাররা ভারতে চলে যাওয়ার পর কিছু অসাধু লোকের মদদে অনেকেই ভুয়া ওয়ারিশান সদনপত্র তৈরি করে জমি জমার কাগজ নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয়রা আরও জানান অনেকদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জমিদার বাড়ি দেখতে ভিড় করতেন পর্যটকরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এগুলো একেবারেই অরক্ষিত হয়ে গেছে। তাই বাড়িগুলো দেখতে আর কেউ আসেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এই জমিদার বাড়িগুলোকে সংরক্ষণ করা হলে আবারও ফিরে পাবে পুরনো আকর্ষণ। জমিদারদের ব্যবহৃত এই ভবনগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। বেশকিছু দিন পূর্বে হবিগঞ্জ -২ আজমিরীগঞ্জ -বানিয়াচং আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান জলসুখার ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং আট চালার জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সংস্কারের জন্য ফোন আলোচনা করেন।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, উপজেলায় সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেই, এই বিষয় নিয়ে আরও একবার আলোচনা হয়েছে, আবারও যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাটানো ব্যাবস্তা করা হবে।বিশিষ্টজনেরা মনে করেন জমিদার বাড়ি গুলো সংস্কার করলে আজমিরীগঞ্জের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় স্থান পাবে।