ঢাকা ১২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শূন্য থেকে শিখরের পথে সোনিয়ার “ইউ মি ফেশন”

আমি পড়াশোনা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করি। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যারা চাকরি করে তারাই জানে তাদের কত রকম হেরেজমেন্টের স্বিকার হতে হয়। কখনো কখনো নিজের সম্মান বাচাতে জব ছেড়ে চলেও আসতে হয়েছে কয়েকবার। তারপর এক বড় ভাইয়ের অনলাইন বিজনেসের জন্য স্টাফ লাগবে তো আমি সেখানে জয়েন্ট করি। ভাইয়ার অফিস চেঞ্জ করে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়ার কারনে জবটা কন্টিনিউ করতে পারিনি। ২০১৯ সালের কথা উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হয়। খুব ইচ্ছা ছিল নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করার। নিজের একটা বুটিক্স হাউজ থাকবে কিন্তু পরিবারে সাপোর্ট ছিলো না আর নিজেরও আর্থিক সমস্যার কারনে বুটিক্স হাউজ দেয়া কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। করোনাকালীন সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করলাম। অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হলো। সংসারের বড় মেয়ে হওয়ায় ইচ্ছা ছিল পরিবারের জন্য কিছু করার। আর তার সম্ভব হয়েছে ই-কর্মাসের মাধ্যমে। এভাবেই বললেন সোনিয়া রহমান।

উদ্যোক্তা সোনিয়া রহমান পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতে বসবাসকারী, তার মামা বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকায়। তিনি একজন স্ত্রী, একজন মা ঠিক সেই সাথে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সব কিছু সহজ হয় না কিন্তু চেষ্টা এবং ইচ্ছে যদি দৃঢ় হয় কোন কিছুই অসম্ভব নয়। কিছু করার ইচ্ছায় সোনিয়া কয়েকটি ই-কমার্স গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। তার মধ্যে প্ল্যাটফরম উই গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, নারীরা কত ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এসব দেখে নিজের মধ্যেও তার আত্মবিশ্বাস জন্মায়। ভাবেন তিনিও তো কিছু করতে পারেন। কিন্তু কী করবেন, কোনটা ভালো হবে, এসবের ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক নিয়ে ভাবেন। কিন্তু তার কোনো প্ল্যাটফরম নেই। তাই “ইউ মি ফেশন” নামে ফেসবুক পেজ খোলেন। এতে তার আগ্রহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে সোনিয়া রহমান বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা চান গতানুগতিকভাবে পড়াশোনা শেষ করে স্বামী সন্তান নিয়ে সবার মত সংসার করি। তারা আমাকে বিজনেসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে না। এর মাঝে আমি পড়াশোনা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি জব করে সেখান থেকে বেশকিছু টাকা জমিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে সেপ্টেমবরে ওই টাকাগুলো থেকে নিজের খরচের জন্য কিছু রেখে বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ডিসেম্বরে মার্কেট যাচাই করে মাঝামাঝি সময়ে শুরু করি মেয়েদের শাড়ী থ্রি পিসের প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস। ব্যবসার পেজের নাম দেই ইউ মি ফেশন। করোনার এ মহামারি সময়ে আমাদের অফিস বন্ধ থাকায় বাড়িতে ছিলাম। তাই ব্যবসায় বেশি মনোযোগ দিতে পারি। অল্প দিনের মধ্যেই অনলাইনে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করায় ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকি।

ঢাকাসহ প্রায় ৬৪ জেলায় তার পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকরা কিনছেন। প্রথমদিকে একা কাজ করলেও এখন মা, বোন, প্রতিবেশীসহ প্রায় ১০ জন নারী কাজ করছেন। কাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়ে-কমে। সেই সঙ্গে হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার করার জন্য একজন ছেলে কাজ করছেন। প্রতিমাসে তার বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এর থেকে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো।

সোনিয়া আরও বলেন, প্রথমদিকে পারিবারিক সহযোগিতা না পেলেও এখন পাচ্ছি। মেয়েরা ঘরে বসেই রোজগার করতে পারেন। তাই অন্যের ওপর নির্ভর না হয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করা উচিত।

মাদারীপুরের উন্নয়নকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, ই-কর্মাসের ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে উদ্যোক্তারা আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। তারা জানে কীভাবে ঘরে বসে আয় করতে পারবে। ই-কর্মাসের মাধ্যমে মেয়েরা অনেক এগিয়েছেন। শিবচরের সোনিয়া আমাদের উদাহরণ।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শূন্য থেকে শিখরের পথে সোনিয়ার “ইউ মি ফেশন”

আপডেট সময় ০৮:০০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩

আমি পড়াশোনা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করি। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। যারা চাকরি করে তারাই জানে তাদের কত রকম হেরেজমেন্টের স্বিকার হতে হয়। কখনো কখনো নিজের সম্মান বাচাতে জব ছেড়ে চলেও আসতে হয়েছে কয়েকবার। তারপর এক বড় ভাইয়ের অনলাইন বিজনেসের জন্য স্টাফ লাগবে তো আমি সেখানে জয়েন্ট করি। ভাইয়ার অফিস চেঞ্জ করে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়ার কারনে জবটা কন্টিনিউ করতে পারিনি। ২০১৯ সালের কথা উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হয়। খুব ইচ্ছা ছিল নিজ প্রচেষ্টায় কিছু করার। নিজের একটা বুটিক্স হাউজ থাকবে কিন্তু পরিবারে সাপোর্ট ছিলো না আর নিজেরও আর্থিক সমস্যার কারনে বুটিক্স হাউজ দেয়া কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। করোনাকালীন সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালাম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করলাম। অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হলো। সংসারের বড় মেয়ে হওয়ায় ইচ্ছা ছিল পরিবারের জন্য কিছু করার। আর তার সম্ভব হয়েছে ই-কর্মাসের মাধ্যমে। এভাবেই বললেন সোনিয়া রহমান।

উদ্যোক্তা সোনিয়া রহমান পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতে বসবাসকারী, তার মামা বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকায়। তিনি একজন স্ত্রী, একজন মা ঠিক সেই সাথে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সব কিছু সহজ হয় না কিন্তু চেষ্টা এবং ইচ্ছে যদি দৃঢ় হয় কোন কিছুই অসম্ভব নয়। কিছু করার ইচ্ছায় সোনিয়া কয়েকটি ই-কমার্স গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। তার মধ্যে প্ল্যাটফরম উই গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, নারীরা কত ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এসব দেখে নিজের মধ্যেও তার আত্মবিশ্বাস জন্মায়। ভাবেন তিনিও তো কিছু করতে পারেন। কিন্তু কী করবেন, কোনটা ভালো হবে, এসবের ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক নিয়ে ভাবেন। কিন্তু তার কোনো প্ল্যাটফরম নেই। তাই “ইউ মি ফেশন” নামে ফেসবুক পেজ খোলেন। এতে তার আগ্রহ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে সোনিয়া রহমান বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা চান গতানুগতিকভাবে পড়াশোনা শেষ করে স্বামী সন্তান নিয়ে সবার মত সংসার করি। তারা আমাকে বিজনেসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে না। এর মাঝে আমি পড়াশোনা ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি জব করে সেখান থেকে বেশকিছু টাকা জমিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে সেপ্টেমবরে ওই টাকাগুলো থেকে নিজের খরচের জন্য কিছু রেখে বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ডিসেম্বরে মার্কেট যাচাই করে মাঝামাঝি সময়ে শুরু করি মেয়েদের শাড়ী থ্রি পিসের প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস। ব্যবসার পেজের নাম দেই ইউ মি ফেশন। করোনার এ মহামারি সময়ে আমাদের অফিস বন্ধ থাকায় বাড়িতে ছিলাম। তাই ব্যবসায় বেশি মনোযোগ দিতে পারি। অল্প দিনের মধ্যেই অনলাইনে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করায় ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকি।

ঢাকাসহ প্রায় ৬৪ জেলায় তার পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকরা কিনছেন। প্রথমদিকে একা কাজ করলেও এখন মা, বোন, প্রতিবেশীসহ প্রায় ১০ জন নারী কাজ করছেন। কাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়ে-কমে। সেই সঙ্গে হোম ডেলিভারি ও কুরিয়ার করার জন্য একজন ছেলে কাজ করছেন। প্রতিমাসে তার বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এর থেকে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো।

সোনিয়া আরও বলেন, প্রথমদিকে পারিবারিক সহযোগিতা না পেলেও এখন পাচ্ছি। মেয়েরা ঘরে বসেই রোজগার করতে পারেন। তাই অন্যের ওপর নির্ভর না হয়ে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করা উচিত।

মাদারীপুরের উন্নয়নকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, ই-কর্মাসের ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলে উদ্যোক্তারা আরও ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে। তারা জানে কীভাবে ঘরে বসে আয় করতে পারবে। ই-কর্মাসের মাধ্যমে মেয়েরা অনেক এগিয়েছেন। শিবচরের সোনিয়া আমাদের উদাহরণ।