ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউরোপে পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ির দিন শেষ

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে বিশ্বব্যাপী যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে, অনেক দেশই ঠিক সময়ে তা পূরণ করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু দেশ। এবার জোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এমন অঙ্গীকার করল।

অনেক তর্কবিতর্ক ও দরকষাকষির পর বৃহস্পতিবার ইইউ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। এর আওতায় ২০৩৫ সালের পর ২৭টি ইইউ সদস্য দেশগুলোতে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত কোনো নতুন যান অনুমোদন পাবে না। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত কম্বাশন ইঞ্জিনের আয়ু অদূর ভবিষ্যতেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর এই জোটটি। ২০৩৫ সাল থেকে শুধু বিকল্প ও দূষণহীন জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যানই পথে নামার অনুমোদন পাবে। তবে পুরানো যান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। সেগুলো আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত পথে নামতে পারবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের উৎস হচ্ছে গাড়ি। গোটা পরিবহন ক্ষেত্র প্রায় এক চতুর্থাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী। বর্তমানে ইইউ দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির প্রায় ১২ শতাংশে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে।

‘জিরো এমিশন মোবিলিটি’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বর্তমানে একাধিক সংকটের ফলে কাচামালের সরবরাহ থেকে শুরু করে দক্ষ শ্রমিকের অভাব গাড়ি শিল্পের ওপরেও কুপ্রভাব ফেলছে। সে কারণে ২০২৬ সালে ইইউ নতুন করে এই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করবে। তবে ধাপে ধাপে  কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার কর্মসূচির ক্ষেত্রে কোনো আপোশ করতে চাইছে না ব্রাসেলস।

২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিন কার্যত নিষিদ্ধ করার এই উদ্যোগের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এসেছে। সদস্য দেশগুলো এমন ইঞ্জিন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বদলে কার্বনহীন কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে দাবি করেছিল।

গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশ জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের তিন শরিক দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ কম ছিল না। বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি দল এমন পদক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করেছে। অনেক দরকষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ইইউ পরিবেশমন্ত্রীরা সম্মিলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার সদস্য দেশগুলোকে জাতীয় স্তরে আইন প্রণয়ন করে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

ইউরোপের গাড়ি শিল্প এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। জার্মানির গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ভিডিএ-র প্রেসিডেন্ট হিল্ডেগার্ড ম্যুলার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ২০৩০ সালের পরের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা বাস্তবসম্মত নয়।

উদাহরণ হিসেবে তিনি ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় চার্জিং পয়েন্টের অবকাঠামোর অভাবের উল্লেখ করেন। এছাড়া কাঁচামালের জোগান ও যথেষ্ট মাত্রায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তাও এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে অন্তরায় হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্য অবিলম্বে এমন সব অনিশ্চয়তা দূর করার কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যুলার একইসঙ্গে কার্বনহীন সিন্থেটিক ফুয়েল ব্যবহার করে কম্বাশন ইঞ্জিন চালানোর পক্ষেও দাবি করেছেন।

ইউরোপীয় গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠনও অবকাঠামো মজবুত করার ওপর জোর দিচ্ছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপে পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ির দিন শেষ

আপডেট সময় ০৭:২২:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে বিশ্বব্যাপী যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে, অনেক দেশই ঠিক সময়ে তা পূরণ করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু দেশ। এবার জোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এমন অঙ্গীকার করল।

অনেক তর্কবিতর্ক ও দরকষাকষির পর বৃহস্পতিবার ইইউ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। এর আওতায় ২০৩৫ সালের পর ২৭টি ইইউ সদস্য দেশগুলোতে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত কোনো নতুন যান অনুমোদন পাবে না। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত কম্বাশন ইঞ্জিনের আয়ু অদূর ভবিষ্যতেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর এই জোটটি। ২০৩৫ সাল থেকে শুধু বিকল্প ও দূষণহীন জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যানই পথে নামার অনুমোদন পাবে। তবে পুরানো যান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। সেগুলো আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত পথে নামতে পারবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের উৎস হচ্ছে গাড়ি। গোটা পরিবহন ক্ষেত্র প্রায় এক চতুর্থাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী। বর্তমানে ইইউ দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির প্রায় ১২ শতাংশে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে।

‘জিরো এমিশন মোবিলিটি’ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ বর্তমানে একাধিক সংকটের ফলে কাচামালের সরবরাহ থেকে শুরু করে দক্ষ শ্রমিকের অভাব গাড়ি শিল্পের ওপরেও কুপ্রভাব ফেলছে। সে কারণে ২০২৬ সালে ইইউ নতুন করে এই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করবে। তবে ধাপে ধাপে  কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার কর্মসূচির ক্ষেত্রে কোনো আপোশ করতে চাইছে না ব্রাসেলস।

২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিন কার্যত নিষিদ্ধ করার এই উদ্যোগের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এসেছে। সদস্য দেশগুলো এমন ইঞ্জিন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বদলে কার্বনহীন কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে দাবি করেছিল।

গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশ জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের তিন শরিক দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ কম ছিল না। বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি দল এমন পদক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করেছে। অনেক দরকষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ইইউ পরিবেশমন্ত্রীরা সম্মিলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার সদস্য দেশগুলোকে জাতীয় স্তরে আইন প্রণয়ন করে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

ইউরোপের গাড়ি শিল্প এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। জার্মানির গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ভিডিএ-র প্রেসিডেন্ট হিল্ডেগার্ড ম্যুলার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ২০৩০ সালের পরের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা বাস্তবসম্মত নয়।

উদাহরণ হিসেবে তিনি ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় চার্জিং পয়েন্টের অবকাঠামোর অভাবের উল্লেখ করেন। এছাড়া কাঁচামালের জোগান ও যথেষ্ট মাত্রায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তাও এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে অন্তরায় হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্য অবিলম্বে এমন সব অনিশ্চয়তা দূর করার কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যুলার একইসঙ্গে কার্বনহীন সিন্থেটিক ফুয়েল ব্যবহার করে কম্বাশন ইঞ্জিন চালানোর পক্ষেও দাবি করেছেন।

ইউরোপীয় গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠনও অবকাঠামো মজবুত করার ওপর জোর দিচ্ছে।