ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সদের কর্মবিরতি চলছে প্রশ্ন ফাঁসে ফেঁসে গেলেন বিমানের প্রধান প্রকৌশলী পাচার অর্থ ফেরাতে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুদকের বৈঠক নাবিল গ্রুপ: সরকারি জমি দখলে নিয়ে করেছে ডেইরী ফার্ম এবারের পূজা সবচেয়ে নির্বিঘ্ন হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চসিক নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, নতুন মেয়র বিএনপি প্রার্থী বৈষম্য দূরীকরনে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানববন্ধন তেলের জাহাজে আগুন, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ পটুয়াখালীতে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী পবিত্র’র বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা হত্যায় অর্থ সরবরাহের অভিযোগ!

কুমিল্লা দেবিদ্বারে শিশু ধর্ষণকারী ভণ্ড পীর ইকবাল ঢাকায় গ্রেফতার

কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিজ আস্তানায় নিয়ে শিশু ধর্ষণ করার অভিযোগে কথিত ভণ্ডপীর মো. ইকবাল হোসাইনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

রোববার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। নিজকে পীর দাবি করে তিনি ভক্তদের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। গ্রেফতার ইকবাল দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত আলীর পুত্র। সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ জুন দুপুর ১২টার দিকে ওই শিশুকে লিচু দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর শিশুটির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে বাড়ি গিয়ে ওই শিশুটি তার মাকে বিষয়টি অবহিত করে। ব্যথা তীব্র হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুরুতে ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতিও দেখায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে ঘটনার ৪ দিন পর থানায় মামলা দায়ের করেন। খবর পেয়ে গ্রেফতার এড়াতে নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান কথিত পীর।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিজেকে পীর দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন ইকবাল। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে বক্তব্য দিতেন।

নিজ আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম চালাতো।

স্থানীয়রা বলেন, গ্রেফতার ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্মাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন। তবে তিনি প্রসেফর হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিজিটিং কার্ডও করে নেন। এক সময় স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের ধান্দায় স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। ইকবাল হঠাৎ পীর দাবি করে দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ নিজ বাড়িতে ‘সাইচাপাড়া দরবার শরীফ’ নাম দিয়ে আস্তানা তৈরী করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।

এদিকে ভণ্ডপীর ইকবালের গ্রেফতারের খবরে ওই শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার ও এলাকার লোকজন সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছেন। এলাকার লোকজন বলেন, পুলিশ এ প্রতারক পীরকে গ্রেফতার করতে না পারায় পীরের ভক্তরা উল্লাস করছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন বলেন, ভক্তদের নিয়ে প্রতি রাতেই আস্তানায় মাদকের মজমার আয়োজন করতেন সেই ভণ্ড পীর। চলতো অসামাজিক যতো কার্যক্রম। ভক্তদের বাড়িতে গিয়েও নারীদের সাথে অশোভন আচরণের জন্য তাকে একাধিকবার মুচলেকা দিতে হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্র তাকে এসব অপকর্মের শেলটার দিত। র‌্যাব বলেছে তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদী পশু প্রদান করতেন। যা নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন কথিত এই পীর। সে এজেন্ট নিয়োগ করে ভক্তের সংখ্যা বাড়াতো। ভক্তরাই ছিল তার আস্তানার অপকর্মের সদস্য। অভিযোগ রয়েছে আস্তানায় এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীও নিয়মিত যেতেন।

মামলার বাদী ওই শিশুটির মা বলেন, ‘মেয়ে নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে মামলা করে এখন হুমকীতে আছি। আমার স্বামী প্রবাসী, মামলার তদবীর করার মতো কেউ নেই। তাই অনেকেই বলছেন ওই ভণ্ডের লোকজন টাকা দিয়ে মেডিকেল রিপোর্টও নাকি তাদের পক্ষে নিয়ে আসবে।

দেবিদ্বার থানার ওসি (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বলেন, র‌্যাব গ্রেফতার ইকবালকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সদের কর্মবিরতি চলছে

কুমিল্লা দেবিদ্বারে শিশু ধর্ষণকারী ভণ্ড পীর ইকবাল ঢাকায় গ্রেফতার

আপডেট সময় ০১:৩০:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিজ আস্তানায় নিয়ে শিশু ধর্ষণ করার অভিযোগে কথিত ভণ্ডপীর মো. ইকবাল হোসাইনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

রোববার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। নিজকে পীর দাবি করে তিনি ভক্তদের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। গ্রেফতার ইকবাল দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত আলীর পুত্র। সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ জুন দুপুর ১২টার দিকে ওই শিশুকে লিচু দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর শিশুটির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে বাড়ি গিয়ে ওই শিশুটি তার মাকে বিষয়টি অবহিত করে। ব্যথা তীব্র হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুরুতে ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতিও দেখায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে ঘটনার ৪ দিন পর থানায় মামলা দায়ের করেন। খবর পেয়ে গ্রেফতার এড়াতে নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান কথিত পীর।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, নিজেকে পীর দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন ইকবাল। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে বক্তব্য দিতেন।

নিজ আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম চালাতো।

স্থানীয়রা বলেন, গ্রেফতার ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্মাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন। তবে তিনি প্রসেফর হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিজিটিং কার্ডও করে নেন। এক সময় স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের ধান্দায় স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। ইকবাল হঠাৎ পীর দাবি করে দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ নিজ বাড়িতে ‘সাইচাপাড়া দরবার শরীফ’ নাম দিয়ে আস্তানা তৈরী করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।

এদিকে ভণ্ডপীর ইকবালের গ্রেফতারের খবরে ওই শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার ও এলাকার লোকজন সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করেছেন। এলাকার লোকজন বলেন, পুলিশ এ প্রতারক পীরকে গ্রেফতার করতে না পারায় পীরের ভক্তরা উল্লাস করছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন বলেন, ভক্তদের নিয়ে প্রতি রাতেই আস্তানায় মাদকের মজমার আয়োজন করতেন সেই ভণ্ড পীর। চলতো অসামাজিক যতো কার্যক্রম। ভক্তদের বাড়িতে গিয়েও নারীদের সাথে অশোভন আচরণের জন্য তাকে একাধিকবার মুচলেকা দিতে হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্র তাকে এসব অপকর্মের শেলটার দিত। র‌্যাব বলেছে তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদী পশু প্রদান করতেন। যা নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন কথিত এই পীর। সে এজেন্ট নিয়োগ করে ভক্তের সংখ্যা বাড়াতো। ভক্তরাই ছিল তার আস্তানার অপকর্মের সদস্য। অভিযোগ রয়েছে আস্তানায় এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীও নিয়মিত যেতেন।

মামলার বাদী ওই শিশুটির মা বলেন, ‘মেয়ে নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে মামলা করে এখন হুমকীতে আছি। আমার স্বামী প্রবাসী, মামলার তদবীর করার মতো কেউ নেই। তাই অনেকেই বলছেন ওই ভণ্ডের লোকজন টাকা দিয়ে মেডিকেল রিপোর্টও নাকি তাদের পক্ষে নিয়ে আসবে।

দেবিদ্বার থানার ওসি (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বলেন, র‌্যাব গ্রেফতার ইকবালকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।