ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঠিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসীর রমরমা ব্যবসা

রাজশাহীর পুঠিয়ার অলিগলিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান। এতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আর এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা এ জন্যে প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকাকে দায়ী করছেন। তবে ওষুধ ব্যবসায়িরা বলছেন, বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতিতে আবেদন করেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দোকান মালিকের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। আর ব্যবসায়িদের কর্থিত সমিতির প্রভাব খাটিয়ে ওষুধের ব্যবসা করছে। আর ওষুধ ব্যবসায়িদের অনিয়মে অভিযান চালালে তারা একজোটে দোকান বন্ধ রেখে রোগিদের জিম্মি করছেন।

উপজেলা ড্রাগিষ্টস সমিতির তথ্যমতে জানা গেছে, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ঘিরে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। নিয়মানুসারে বৈধ ওষুধের দোকান করতে হলে, প্রথমে স্থানীয় এলাকার পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড-লাইসেন্স নিতে হবে। এরপর আয়কর টিএনআর নাম্বার, ব্যবসায়ির ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স ও বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির অনুমোদন। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র সমিতির প্রভাব খাটিয়ে দেদাচ্ছে ওষুধের ব্যবসা করছেন। তাদের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। যে কয়েকজনের লাইসেন্স আছে, তাদের মধ্যেও অন্যার লাইসেন্স দোকানে রেখে ব্যবসা করছে।

তবে একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজশাহী জেলায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন কোম্পানির সেম্পল ওষুধ বিক্রি হয়। অথচ ড্রাগের কর্মকর্তা তা দেখতে পায় না। ওই ব্যবসায়িরা বলেন, ড্রাগ কর্মকর্তারা শুধু উপজেলা সদরে অভিযান করেন। প্রত্যান্ত অঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে কোনো খোজ খবর নেয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা নাজমুল হোসেন নামের একজন রোগীর অভিভাবক বলেন, সদর এলাকায় বেশীর ভাগ দোকান মালিকরা বেশী লাভ করতে ভেজাল ও অতিনিন্মমানের ওষুধ বিক্রি করেন। এ বিষয় গুলো চিকিৎসক ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেও তেমন কোনো লাভ হয় না। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে এসব অনিয়মের কারণে প্রশাসন অভিযান করলে ব্যবসায়িরা উল্টা দোকান বন্ধ করে রাখে। এতে রোগিদের দুর্ভোগ আরো বাড়ে। উপজেলা ড্রাগিষ্টস সমিতির শাখার সাবেক সভাপতি মখলেছুর রহমান রাজু বলেন, পুঠিয়া উপজেলায় বর্তমানে নতুন পুরাতন মিলে ৩০ হতে ৩৫টির দোকান মালিকের বৈধ ড্রাগ লাইসেন্স থাকতে পারে। তিনি বলেন, সকল ব্যবসায়ী যে সঠিক নিয়মে ব্যবসা করছেন তা নয়, এদের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ি বেশী লাভের আশায় কিছু অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি শেখ আনসারুল হক খিচ্ছু বলেন, ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স না থাকলে আমাদের সমিতিতে কোনো সদস্য হতে পারবে না। তারপরও যারা ওষুধের ব্যবসা করছে, তাদের সবাইকে ড্রাগের লাইসেন্স করতে হবে। তবে লাইসেন্সে দায়িত্ব সরকারের।

বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির রাজশাহী জেলার সহকারি পরিচালক মাখনুত্তন তাবাসসুম বলেন, পুঠিয়ার ওষুধ ব্যবসায়ীরা নিন্মমানের ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করেন। সেই সাথে কোম্পানির সিম্পল ওষুধের মূল্যেতে ঘষামাজা করার অপরাধে গত ১৩ই জুন তিনটি দোকানে জরিমানা করে হয়। এরপর ওষুধ ব্যবসায়িরা তাৎক্ষনিক একজোট হয়ে প্রায় ১০ ঘন্টা দোকান বন্ধ করে রেখে ছিল। তিনি বলেন, পুঠিয়ায় কোনো অনিয়মে আইগত ব্যবস্থা গ্রহন করলে ব্যবসায়িরা দোকান বন্ধ রেখে ক্রেতাদের জিম্মি করে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পুঠিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসীর রমরমা ব্যবসা

আপডেট সময় ০৩:০৩:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩

রাজশাহীর পুঠিয়ার অলিগলিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধের দোকান। এতে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। আর এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা এ জন্যে প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকাকে দায়ী করছেন। তবে ওষুধ ব্যবসায়িরা বলছেন, বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতিতে আবেদন করেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দোকান মালিকের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। আর ব্যবসায়িদের কর্থিত সমিতির প্রভাব খাটিয়ে ওষুধের ব্যবসা করছে। আর ওষুধ ব্যবসায়িদের অনিয়মে অভিযান চালালে তারা একজোটে দোকান বন্ধ রেখে রোগিদের জিম্মি করছেন।

উপজেলা ড্রাগিষ্টস সমিতির তথ্যমতে জানা গেছে, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ঘিরে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। নিয়মানুসারে বৈধ ওষুধের দোকান করতে হলে, প্রথমে স্থানীয় এলাকার পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড-লাইসেন্স নিতে হবে। এরপর আয়কর টিএনআর নাম্বার, ব্যবসায়ির ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স ও বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির অনুমোদন। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র সমিতির প্রভাব খাটিয়ে দেদাচ্ছে ওষুধের ব্যবসা করছেন। তাদের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। যে কয়েকজনের লাইসেন্স আছে, তাদের মধ্যেও অন্যার লাইসেন্স দোকানে রেখে ব্যবসা করছে।

তবে একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজশাহী জেলায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন কোম্পানির সেম্পল ওষুধ বিক্রি হয়। অথচ ড্রাগের কর্মকর্তা তা দেখতে পায় না। ওই ব্যবসায়িরা বলেন, ড্রাগ কর্মকর্তারা শুধু উপজেলা সদরে অভিযান করেন। প্রত্যান্ত অঞ্চলের হাট-বাজার গুলোতে কোনো খোজ খবর নেয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা নাজমুল হোসেন নামের একজন রোগীর অভিভাবক বলেন, সদর এলাকায় বেশীর ভাগ দোকান মালিকরা বেশী লাভ করতে ভেজাল ও অতিনিন্মমানের ওষুধ বিক্রি করেন। এ বিষয় গুলো চিকিৎসক ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেও তেমন কোনো লাভ হয় না। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে এসব অনিয়মের কারণে প্রশাসন অভিযান করলে ব্যবসায়িরা উল্টা দোকান বন্ধ করে রাখে। এতে রোগিদের দুর্ভোগ আরো বাড়ে। উপজেলা ড্রাগিষ্টস সমিতির শাখার সাবেক সভাপতি মখলেছুর রহমান রাজু বলেন, পুঠিয়া উপজেলায় বর্তমানে নতুন পুরাতন মিলে ৩০ হতে ৩৫টির দোকান মালিকের বৈধ ড্রাগ লাইসেন্স থাকতে পারে। তিনি বলেন, সকল ব্যবসায়ী যে সঠিক নিয়মে ব্যবসা করছেন তা নয়, এদের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ি বেশী লাভের আশায় কিছু অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি শেখ আনসারুল হক খিচ্ছু বলেন, ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স না থাকলে আমাদের সমিতিতে কোনো সদস্য হতে পারবে না। তারপরও যারা ওষুধের ব্যবসা করছে, তাদের সবাইকে ড্রাগের লাইসেন্স করতে হবে। তবে লাইসেন্সে দায়িত্ব সরকারের।

বাংলাদেশ কেমিষ্টস ড্রাগিষ্টস সমিতির রাজশাহী জেলার সহকারি পরিচালক মাখনুত্তন তাবাসসুম বলেন, পুঠিয়ার ওষুধ ব্যবসায়ীরা নিন্মমানের ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করেন। সেই সাথে কোম্পানির সিম্পল ওষুধের মূল্যেতে ঘষামাজা করার অপরাধে গত ১৩ই জুন তিনটি দোকানে জরিমানা করে হয়। এরপর ওষুধ ব্যবসায়িরা তাৎক্ষনিক একজোট হয়ে প্রায় ১০ ঘন্টা দোকান বন্ধ করে রেখে ছিল। তিনি বলেন, পুঠিয়ায় কোনো অনিয়মে আইগত ব্যবস্থা গ্রহন করলে ব্যবসায়িরা দোকান বন্ধ রেখে ক্রেতাদের জিম্মি করে।