গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (২৩ মে) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোট হবে। তিন-চতুর্থাংশ ভোটকেন্দ্র ‘ঝূঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনও রকম শঙ্কা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গাজীপুর সিটির ভোট দেখভালের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি জানান, প্রার্থীদের নানা অভিযোগ থাকলেও কোনও ধরনের শঙ্কা করা হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করা হলেই ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে গাজীপুর সিটির ভোটের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি জানান, শিল্প এলাকায় নানা ধরনের মানুষের বসবাস। সেখানে অপরাধ প্রবণতার কথা মাথায় রেখে এবার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকছে।
নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনে সবাই জিততে চান; সেভাবে তারা প্রচারণা চালান ও বক্তব্য দেন। কিন্তু ইসির কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা করা।আমাদের যত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেগুলো আমরা কমপ্লিট করেছি। ইভিএম প্রস্তুত, বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে।
তিনি জানান, প্রিজাইডিং অফিসার ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্যরা একসঙ্গে কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। কোনও প্রার্থীর কাছ থেকে কোনও খাবার খাবে না, নিজেরা নিজেদের খাবার জোগাড় করে নেবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ব্যাটালিয়ান আনসার চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। তদারকিতে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম থাকবে।
জানা গেছে, ১১ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৮০টি। এবার তিন-চতুর্থাংশ ভোটকেন্দ্র ‘ঝূঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, সবগুলো কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প এলাকায় কোথাও কোথাও অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে। তবে এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র (দুই তৃতীয়াংশের বেশি)। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোনও থ্রেট নেই, বিশৃঙ্খলা হলেই ব্যবস্থা
ভোটকে সামনে রেখে কোনও ধরনের শঙ্কা না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা করলেই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচরি পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে কোনও থ্রেট নেই। থ্রেট না থাকলেও প্রিভেন্টিভ মেজার হিসেবে যেহেতু শিল্প এলাকা, তাই দুস্কৃতিকারীরা বা অসৎ উদ্দেশ্য যাদের থাকে তারা যেন অন্যায় পরিস্থিতি করতে না পারে তাই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবে ৭৬ জন, বিচারিক হাকিমও থাকবে। র্যাবের ৩০টি টিম থাকবে। বিজিবি থাকবে ১৩ প্লাটুন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবে।
এ বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকবে যাতে কোনও রকম বিশঙ্খলা না হয়। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে সে যে দলের বা যেই হোক না কেন, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, অনিয়মের মাত্রার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে তা নির্ভর করবে।
প্রতিটি কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা।
এ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আট জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে লড়ছেন মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন, ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম লড়ছেন।