রাজধানীতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ৯,টি মাঝারি ১৪ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড ম্যানন্টেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বহুতল ভবনে জরিপ চালিয়েছে “দি লাইফ ডেভিং ফোর্স বাহিনী”। জরিপে ৫৮টি মার্কেটে অগ্নিঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানসন, নিউ সুপার মার্কেটসহ রাজধানীতে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে। গত ২ সপ্তাহে ৫৮টি ভবন হালনাগাদ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ঝুঁকিতে থাকা এসব ভবন বা মার্কেটের সামনে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে আয়োজিত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট-শপিংমলের অগ্নিঝুঁকি নিরসন ও অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের তিনি এসব তথ্য জানান।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মো: ওয়াহিদুল ইসলাম, উপ- পরিচালক ডিম মণি শর্শা, কালাম উদ্দীন ভুঁইয়া ও ফায়ার সার্ভিস (মিডিয়া সেলের) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান শিকদারসহ ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসারগন এসময় উপস্হিত ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আজ সকাল থেকে চারটি মার্কেটের মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের এ বিষয়ে ধারণা দিয়েছে। সম্প্রতি লাগা মার্কেটের আগুনগুলোতে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করছি। প্রতি বছর আমরা বিভিন্ন ভবন হালনাগাদ করি। এরপর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ভবন মালিককে জানাই। চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান না করলে আমরা ব্যানার টানিয়ে দিই, যেন জনগণ সচেতন হয়। আমাদের কার্যক্রমের লক্ষ্যই হচ্ছে জনসচেতনতা বাড়ানো।
তিনি বলেন, ডিজিএফআই-এনএসআই সদস্যদের নিয়ে আমরা প্রতিটি মার্কেট পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনে আমরা যা দেখেছি তা সন্তোষজনক নয়। পরিদর্শনের পর আমরা অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছি।
সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্নিনির্বাপণ করতে পারছি না। ভবনগুলোতে মহড়া না করার কারণে আমাদের যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারছি না।
মার্কেটে আগুন লাগার আরও বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নন ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন নির্মাণ, নকশাবহির্ভূত এক্সটেনশন, মার্কেটের দোকানে গাদাগাদি করে কার্টুনে মালামাল রাখা, নিয়ম না মেনে মার্কেটের দোকানের ভেতর রাত্রিযাপন, ধূমপান করা, গ্যাস ব্যবহার করে খাবার রান্না করা ইত্যাদি।
তিনি সবাইকে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও মহড়া আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মার্কেটের প্রতিটি জায়গায় পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে দাহ্য হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি বলেও জানান তিনি।
দোকানে, করিডোরে, সিঁড়িতে ও দোকানের সামনে মালামাল স্তূপ করে রাখা যাবে না সবাইকে সচেতন করে
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আর মার্কেটের ভেতরে কোনো ধরনের ধূমপান করা যাবে না।
অগ্নিনির্বাপণের সময় মার্কেটের মালামাল টানাহেঁচড়া করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। অগ্নিনির্বাপণের সময় মার্কেটের মালামাল টানাহেঁচড়া করা যাবে না।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে অনেক ক্ষেত্রেই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মানার চরম অবহেলা দেখা গেছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ মার্কেটের লোকজনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর ধারণা নাই। সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়াও হয় না। এসব অবহেলার কারণেই আগুন লাগছে এবং সম্পত্তি ও জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসময় তিনি ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব (অপারেশন অ্যান্ড ম্যানন্টেনেন্স) জানান, ২০২৩ সালে জরিপ চালিয়ে ঢাকার ৫৮টি মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিং মলকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, অতি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে- নিউ মার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেট, চকবাজারের উর্দু রোডের শহীদুল্লাহ মার্কেট, চকবাজারের শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট, শরীফ মার্কেট, সিদ্দিকবাজারের রোজ ভিস্তা, সদরঘাটের মায়া কাটারা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে রাজধানীর ১৫১৭টি মার্কেট ও শপিংমল, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেলে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ১৪৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। জরিপে ৫৪টি মার্কেট, শপিংমল ও রেস্টুরেন্টে সন্তোষজনক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। সেখানেও আমরা অতি ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পেয়েছি।