বস্তুর বাহ্যিক আকৃতিতে অভিভূত না হয়ে তার আভ্যন্তরীণ সত্য উপলব্ধিতেই আছে সার্থকতা। আয়তনের দিক থেকে বিশালত্ব, চাকচিক্যের দিক থেকে ঔজ্জ্বল্য শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক নয়।
বাংলা চলচ্চিত্র, নাট্যজগত কিংবা শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌতুককার বা জোকার ছিল হাস্যরস ও চিত্তবিনোদনের অন্যতম একটা অংশ। একজন দিলদার একজন টেলি-সামাদ কিংবা নাম নাজানা আরো অনেকে নিজ কর্মগুণে স্ব-স্বঅবস্থানে আজ স্মরণীয়। অনেক দিন আগের কথা, আমাদের প্রতিদিনকার আড্ডায় আমার সবচেয়ে কাছের প্রিয় বন্ধু কোনো এক অজানা কারণে তথাকথিত হিরো আলমের প্রসঙ্গ আসলে সে কেমন এড়িয়ে যেত বা উপেক্ষা করে চুপচাপ থাকতো। আমরা অন্যরা তথাকথিত হিরো আলমকে নিয়ে হাসাহাসি করতাম তখন সে কোনো ভ্রুক্ষেপ করতো না। বাস্তবে এখন বুঝতেছি নুরউদ্দিনের চুপ থাকার অন্যতম কারণ রুচির দুর্ভিক্ষ!!!
সাংস্কৃতিক কর্মীদের ব্যার্থতায়ই আজ অপ-সংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পেরেছে। নব্বই দশকের পূর্বে সাংস্কৃতিক কর্মীদের যে সাধনা ছিল, এখন আর তা দেখতে পাই না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আজ যা চলছে সেখানে বেশীরভাগ অভিনেতা অভিনেত্রীদের কোন সাধনা নেই। অথচ টিভি খুললেই তাদের দেখতে পাই। এটাই বর্তমান অবক্ষয়ের প্রধান কারণ। ত্যাগ ছাড়াতো কিছু পাওয়া যায়না। এত মিডিয়া; যা আমাদের সৌভাগ্যের প্রতীক হওয়ার কথা ছিল, সেই মিডিয়ায় আমরা আজ কাদের অভিনয় করতে দেখছি? সাহিত্য চর্চা যখন পান্তাভাত হয়ে উঠে, জোর করে হাঁসানোর চেষ্টা করায়, তাতো সাহিত্য নয়! আমরা আপনাদের কাজ, চেতনা ও জ্ঞানে আকর্ষিত হয়ে আপনাদের প্রতি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে চাই। যেমনটি পূর্বের সাংস্কৃতিক বোদ্ধাদের প্রতি তাকিয়ে থেকে শান্তি পেতাম। আজ আমরা ঘনকাল মেঘে ঢাকা পরে গিয়েছি। কবে সরে যাবে এই অশুভ মেঘের ভেলা।
আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে আমাদের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের আরো কিছু ত্যাগই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আলোকিত পথ তৈরি করে রেখে যাওয়া। নতুবা এই রুচির দুর্ভিক্ষের প্রকোপে হিরো আলমের মত অসংখ্য গলে-পচেঁ যাওয়া বিকৃত প্রাণীর জন্ম হবে।