ক্যান্সার একটি দূরা ব্যাধি রোগ : এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে : আসাদুজ্জামান নূর (এমপি) মরনব্যাধি ক্যান্সার একটি দূরা ব্যাধি রোগ। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে এখন থেকে আরও বেশি বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর (এমপি)।
তিনি বলেন, আমি একজন সাধারন মানুষ। ক্যান্সার প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ক্যান্সার কি এটা মানুষকে বুঝাতে হবে। ধুমপান কমাতে হবে। তা না হলে এই রোগ কমানো যাবে না।
দেশে ক্যান্সার রোগ একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেড়েই চলেছে। এই মরনব্যাধি রোগের চিকিৎসা করাটা ও সত্যিই ব্যয় বহুল। সে কারণে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্হা চালু করা দরকার। ভাল মানের ডাক্তার তৈরি করা দরকার। দেশে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তারের অভাব রয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরাস্হ ১০ নং সেক্টর আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস -২০২৩ পালন উপলক্ষে কাজী রফিকুল আলম মিলনায়তন এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, অনুষ্টানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্যা অতিথি বৃন্দরা আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃক ২০২১-২০২২ সালের প্রথম বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন এবং কেক কেটে অনুষ্টানের শুভ উদ্বোধন করেন।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আজকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের আলোচনা অনুষ্টানে আমি অনেক আগ্রহী হয়ে এসেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক গরিব মানুষের বসবাস ছিল। এখন উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চল আগের চেয়ে অনেকটাই উন্নত হয়েছে। আমি মঙ্গা এলাকার মানুষ। সেই সুবাদে মানুষ আমার কাছে আসতো।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সেখানে একটি ইপিজেড আছে। ওই ইপিজেড এ এখন ৫০ হাজার মানুষ কাজ করছেন। এলাকার মানুষের এখন অভাব আগের মতো নেই বললেই চলে। দেশবরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান বলেন, আমার এলাকার মানুষ আমার সহকর্মী প্রয়াত অভিনেতা আলী জাকের ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত দুই বছর আগে মারা গেছেন। ডাক্তার বলেছিল, সে দুই বছর বাঁচবে, পরবর্তীতে মানুষের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমনে সে চার বছর বেঁছে গেছেন।
এক্ষেত্রে আহছানিয়া নিশন একটি বড় কাজ করছেন। আপনাদের প্রয়োজনে আপনারা যে কোন সময় যে কোন শিল্পীকে আপনারা চাবেন। আমি ওই শিল্পীকে এনে আপনাদের সামনে হাজির করবো।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি ও এএমসিজিএইচ-এর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে প্যানেল ডিস্কাশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও এএমসিজিএইচ-এর গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন শাখা) মোঃ সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের (পরিচালক) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ রোবেদ আমিন (এনসিডিসি), ঢাকা আহছানিয়া মিশন মেডিকেল কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ, অধ্যাপক ডাঃ দিপক কুমার সান্যাল, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দেশ বরেন্য ক্যান্সার চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ কামরুজ্জামান চৌধুরী, হাসপাতালের ডিরেক্ট ও কাজী রফিকুল আলমের মেয়ে কাজী শামীমা মেঘনা, ডা: ফারহানা, ডাক্তার মৌ, ডাক্তার জান্নাতসহ ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অতিথিবৃন্দ দেশ বরেন্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগন এবং অত্র হাসপাতালের চিকিৎসক, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগন এসময় উপস্হিত ছিলেন।
“আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দুর করি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ শনিবার বিশ্ব ক্যান্সার দিবসটি দেশে পালিত হয়েছে।
অনুষ্টানের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ডা: এ কে এম শাহরিয়ার ও ডা: ফারহানা ফেরদৌসি। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে যে কোন মানুষেরই ক্যান্সার হতে পারে। খাবারের ভেজাল থেকে ও ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের ৮ টি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার হাসপাতাল ও ইউনিট তৈরি করতে যাচেছ সরকার। তিনি বলেন, ঢাকার বাহিরের জেলা গুলোতে আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীরা এখন ঢাকায় এসে চিকিৎসা সেবা নিচেছ। এব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এই রোগ প্রতিরোধ কল্পে সাপোর্ট করতে হবে। সেই সাথে সমাজের বৃত্তবান লোকদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সবাইকে সম্মেলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (ডিজি) ডা: অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, দেশে ক্যান্সার রোগীর জন্য কাউস্লিল থাকা দরকার। দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা কত? প্রশ্ন তোলে জানান, আমাদের দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২০ হাজার রোগী ক্যান্সারে মারা যায়। ২ লাখ মানুষ বছরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দেশে বছরে যে মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ১২% রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
প্রফেসর ডা: কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। আমরা সবাই মিলে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করবো। আমরা একটা প্ল্যান তৈরি করে আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চাই। সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্হা চালু করা দরকার। ভাল মানের ডাক্তার তৈরি করা দরকার। দেশে ক্যান্সার রোগের ডাক্তারের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এন্ড ক্যান্সার জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন আমরা ৩০০ বেড চিকিৎসা করছি। আমাদের হাসপাতালে প্রচুর ক্যান্সার রোগী আসেন।প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার ৫০% প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্যানেল ডিস্কাশনে আলোচকরা বলেন, জনশক্তি তৈরি করতে হলে কি করা দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে এক চিকিৎসক বলেন, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার জন্য এখন জেনারেল সার্জারি করা হচেছ। কিন্তু ক্যান্সার সার্জারি হচেছ না। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীকে কিমো থেরাপি দেয়া হচেছ। কিন্তু রোগ নির্নয় তৈরি করা এবং বোর্ড বসিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা দরকার। এনএস কোর্স করা দরকার।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আগামিতে নতুন ক্যান্সার সার্জারি দেশে তৈরি হবে। দেশে বর্তমানে নারীদের বেষ্ট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি। এই দূরা ব্যাধি রোগ নির্নয়ে জন্য সকল কিছুর প্রয়োজন হয়। এ জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচেছন। রোগীর সেবা করা এবং ভাল ব্যবহার করা দরকার। আপনার কি রোগ হয়েছে সেটা ভাল ভাবে চিকিৎসক এর নিকট থেকে জেনে নিন। তাহলে আর দেশের বাহিরে যাওয়ার দরকার পড়বে না। এ রোগ কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে, দেশের বৃত্তবান লোকদের এগিয়ে আসা দরকার। ৮ বিভাগে ক্যান্সার সেন্টার দ্রুতগতিতে তৈরি করা উচিত। সমন্বিত ভাবে সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান বক্তারা।
অধ্যাপক ডাক্তার এম, এ হাই বলেন, ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে ফল ও সবজি বেশি বেশি খেতে হবে। শরীরের ডাইট করতে হবে। সঠিক ভাবে রোগীদের শরীর চর্চা করতে হবে। আমাদের নানা রকম গ্যাপ আছে।
তিনি বলেন, দেশে ক্যান্সারের মাত্রা কৃষকের মধ্যে বেড়ে যাচেছ। খাবারে ভেজাল হচেছ, শরীরে স্কীন ক্যান্সার দেখা দিচেছ। ধুমপান থেকে ও ক্যান্সার হয়। মেডিক্যাল ল্যাব গুলোকে আরও যুগোপযোগী এবং আধূনিকায়ন হিসেবে হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সাধারন মানুষের কাছে আমাদেরকে পৌছে দিতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ হিসেবে কাজ করলে এ রোগ অচিরেই রোধ করা সম্ভব।